বিজ্ঞাপন

বি চৌধুরী-ফখরুলের ঐক্য’র ডাক, মান্না-রবের হুংকার

May 27, 2018 | 8:40 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নাগরিক ঐক্য’র ইফতার মাহফিলে জাতীয় ঐক্য’র ডাক দিলেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী (বি চৌধুরী) এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর সরকারকে টেনে হিছড়ে নামানোর হুংকার দিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব এবং নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুলও বক্তব্য দেন।

রোববার (২৭ মে) রাজধানীর তোফখানা রোডে হোটেল এশিয়ায় এই ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি।

বিজ্ঞাপন

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি শেখ আব্দুল নূর, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা ও বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান ইফতার মাহফিলে অংশ নেন।

যানজট ঠেলে ইফতারের ২ মিনিট আগে এসে পৌঁছান যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মাহাথির (মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহম্মদ) খুব প্রাসঙ্গিক। নাজিব (মালয়েশিয়ার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক) অনেক ডেভেলপমেন্ট করছেন। কিন্তু দুর্নীতি করে সব শেষ করে দিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘‘মাহাথির-জনগণের যে বিদ্রোহ, সেটি ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মাহাথির একটা কথাই বললেন, ‘আমার দেশের এই দুর্নীতি সহ্য করব না।’’

বি চৌধুরী বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম এবং দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র— ব্যাস! ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর।

‘এই সরকার এবং ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে থাকবেন না, যারা গণতন্ত্রকে অস্বীকার করবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আছি। আমরা তাদেরকে অস্বীকার করব। বাংলাদেশের মুক্তির একটাই পথ, আমাদের সংহত হতে হবে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’—বলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যারাই ক্ষমতায় আসতে চান, তারা বুঝে-সুজে চলবেন। তারা যেন বুঝতে পারেন, দেশের মানুষ দুর্নীতিকে ঘৃণা করে। আমরা দুর্নীতি সহ্য করতে রাজি নই, অনেক সহ্য করেছি। আমরা অনেক সন্ত্রাস সহ্য করেছি, আর করব না।’

‘গুম দেখেছি, গ্রেনেড দেখেছি, আর সহ্য করব না। আমরা অনেক অগণতন্ত্র দেখেছি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারের পর রায় মানা হয় না। হাইকোর্টের বিচারের পর রায় মানা হয় না। হাজার হাজার মানুষ জেলে আছে। আমরা আর সহ্য করতে রাজি না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে, এই জাগরণ থাকবে, আমরাও তাদের সাথে থাকব’—বলেন বি চৌধুরী।

যানজটে আটকে পড়ার পর ব্যক্তিগত গাড়ি ছেড়ে মোটর সাইকেলে চড়ে ইফতারের ৪ মিনিট আগে এসে হাজির হন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দুই মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এই সংকট কোনো ব্যক্তি বা দলের না। এই সংকট সমস্ত দেশের, সমস্ত জাতির। আজকে গণতন্ত্রকে যেভাবে লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মানুষের অধিকারগুলোকে যেভাবে হরণ করা হয়েছে, আজকে কেউই নিরাপদ নই আমরা। এই অবস্থার বিরুদ্ধে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।’

ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া আজকে কারগারে। আমরা জানি কারাগারে থাকার কারণটা কী? একমাত্র কারণ হচ্ছে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া এখানে নির্বাচনের কথা চিন্তা করা ঠিক হবে না।’

‘একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত না লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ কমিশনের পরিচালনায় এবং সংসদকে ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা হচ্ছে ততোক্ষণ পর্যন্ত এ দেশে কোনো অর্থবহ নির্বাচন হবে বলে মনে করি না’—বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘সব শেষে আমি শুধু একটি আহ্বান জানাতে চাই, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় ঐক্য’র প্রয়োজন। সেই জাতীয় ঐক্য তৈরির জন্য সকল দলের প্রতি, সকল নেতার প্রতি আহ্বান জানাই।’

আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে এই ধরনের অপশাসন, সিভিল ডিক্টেটরশিপ আর হয়েছে কী না—আমার জানা নেই। স্পর্ধার একটা সীমা আছে! স্বৈরাচারী আচারণের একটা সীমা আছে! সকল সীমা যখন অতিক্রম করে, সেটাকে বলে মগের মুল্লুক।’

খুলনাতে ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘১১ টার পর কোনো লোক ভোট দিতে পারে নাই। দরজা বন্ধ করে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও পুলিশদের বের করে দিয়ে সিল মারা হয়েছে।

সরকারের লজ্জা নেই মন্তব্য করে রব বলেন, ‘এতদিন কারা গুম করত, সেটা এখন জনগণ জেনে গেছে। যাদের গুম করেছেন, যারা এখনো বেঁচে আছে, তাদেরকে ফেরত দেন। সাদা কাপড়ে গুম করেন কেন? বিনা ভোটে যখন ক্ষমতায় আসতে পারছেন, সরকার গঠন করতে পারছেন, তখন রাতের বেলা সাদা কাপড়ে গ্রেফতার করেন কেন? দিনের বেলায় গ্রেফতার করেন, সাজা দেন।’

তিনি বলেন, ‘এমপির কোনো প্রমাণ পান নাই। ৭৮ জনকে হত্যা করেছেন, তাদের সবার প্রমাণ পাইছেন? মামলা থাকা, অভিযোগ থাকা আর প্রমাণ থাকা তো এক জিনিস না।’

খালেদা জিয়াকে আটক রাখার সমালোচনা করে রব বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমরা আগরতলা মামলা থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলাম। আমরা ব্যাক বেঞ্চের প্লেয়ার না, ডিফেন্সের খেলোয়ার না। আমরা ফ্রন্ট লাইনের প্লেয়ার। আমরা কী করতে পারি, এ দেশে যাদের বয়স ষাটের ওপরে তারা জানে।

‘আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, পতাকা উপহার দিয়েছি, জাতীয় সঙ্গীত উপহার দিয়েছি, বঙ্গবন্ধু উপহার দিয়েছি, জয়বাংলা উপহার দিয়েছি, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর শব্দ উপহার দিয়েছি। কোনো দিন মাথা নত করি নাই, আজকেও মাথা নত করব না’—বলেন আ স ম রব।

শেখ হাসিনা ভয় পেয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উনি ভয় পেয়ে গেছেন। যুক্তফ্রন্টের নেতার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে নজরদারি শুরু করেছেন। আরে আমরা সবাই মার্চটাইম করেছি। আজকে মার্চটাইম হচ্ছে এশিয়া হোটেলে। আসল খেলা হবে ময়দানে। এখনই গাবড়ায়ে গেছেন? মাঠে নামার আগেই ভূমিকম্প? পালাবার রাস্তা নাই। মাঠও ছাড়তে হবে, দেশও ছাড়তে হবে। কোথায় যাবেন ঠিক করেন এখন।’

‘ভোট ডাকাতি করে জনগণকে অপমান করেছেন। আর সহ্য করা যায় না। এখন কী করবেন আপনারা সবাই ঠিক করেন। ৭৪ সালে জাসদ-জেএসডি কর্মীদের হত্যা করেছেন। আজকের এই ধারা যদি অব্যাহত রাখেন, আপনারা যেদিন ক্ষমতায় থাকবেন না সেদিন আপনাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গৃহিত হবে’—বলেন আ স ম আব্দুর রব।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য আছেন, যিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। স্বরাষ্ট্রমস্ত্রী বলছেন, অভিযোগ তো মেলা পাচ্ছি, কিন্তু প্রমাণ পাইনি। এই যে ৬৪ জন লোককে হত্যা করেছেন, কোন প্রমাণের ভিত্তিতে?’

‘আমাদের প্রথম দাবি—এই ৬৪ জন লোকের নাম-ঠিকানা পত্র-পত্রিকিায় প্রকাশ করা হোক। এদের নামে কী কী অভিযোগ আছে, সেটা বলা হোক। কী কী মামলা আছে, সেটা বলা হোক এবং এই মামলার কী প্রমাণ আছে সেটাও বলা হোক।’

তিনি বলেন, ‘প্রমাণ ছাড়া যদি বদির চুল ধরা না যায় তাহলে প্রমাণ ছাড়া ৬৪টা লোক যে হত্যা করেছেন—অপেক্ষা করেন দিন আসবে। কাউকে ছাড়ব না। সমস্ত অন্যায়ের জবাবদিহি করতে হবে, আসামির কাটগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আমরা গুলি করে মারব না। বিনা বিচারে হত্যার নীতিতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’

বাংলাদেশে এখন নির্মমতার চাষ হচ্ছে মন্তব্য করে মান্না বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন মাদক নিয়ে ঘটনা ঘটছে। এরপর অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটবে। তারপর চোরা-কারবারিদের ধরবার ব্যাপার—এভাবে চলতেই থাকবে। ক্রসফায়ার আর মৃত্যুর মহড়া চলবে। আর তার মধ্যেই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

সারাবাংলা/এজেড/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন