বিজ্ঞাপন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপেক্ষিত ‘রোকেয়া’

December 9, 2018 | 8:12 am

।। রাব্বী হাসান সবুজ, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

বেরোবি: নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে নির্মিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) উপেক্ষিত মহীয়সী এই নারী।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দশ বছরেও ক্যাম্পাসে বেগম রোকেয়ার কোনো প্রতিকৃতি বা ম্যুরাল স্থাপন করা হয়নি। নেই রোকেয়া বিষয়ক চর্চারও কোনো সুব্যবস্থা। একই সঙ্গে বেহাল দশায় লেখিকার জন্মস্থান রংপুর জেলার মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে থাকা ‘রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র’।

দীর্ঘদিন থেকে স্মৃতিকেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বরাবরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়ার দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৯ সালে বেগম রোকেয়ার নামে নামকরণ করে  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানকালীন সময় থেকেই নানা কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চা নেই রোকেয়ার। অনেকটা নামেই কেবল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস আসলেই দিবসটিতে শুধু র‌্যালি এবং আলোচনা সভাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে রোকেয়া কর্নার করা হলেও সেখানে সেই বেগম রোকেয়ার সবগুলো বই। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া রোকেয়ার লেখা ও রোকেয়া সম্পর্কিত অধিকাংশ বই মেলে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়াও মাত্র তিনটি বিভাগে কোর্সের অংশ হিসেবে বেগম রোকেয়াকে নিয়ে পাঠদান করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল, ২০১১ একাডেমিক কাউন্সিলের ৫ম সভার সুপারিশক্রমে এবং ২২ এপ্রিল, ২০১১ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৭তম সভায় এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রোকেয়া স্টাডিজ নামে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল মিয়ার আমলে একটি ১০০ নম্বরের পাঠ্য বিষয় প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য বাধ্যতামূলক করে যা সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত হয়। কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য দুর্নীতির দায়ে অপসারিত হওয়ার পর বিষয়টি চালুর কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি বর্তমান কর্তৃপক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন নবীর চার বছরের মেয়াদে রোকেয়া স্টাডিজ চালুর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর যোগদানের এক বছরের মাথায় গত ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগের সব শিক্ষার্থীর জন্য এবং ২০১৭-২০১৮ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে এই কোর্সটি পড়ানোর জন্য ননক্রেডিট এবং বাধ্যতামুলক ‘রোকেয়া স্টাডিজ’ কোর্সটি ক্লাসে পড়ানোর জন্য উপাচার্যের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও এখন অবধি পর্যন্ত কোনো বাস্তবায়ন হয়নি।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় দশ বছর পার করলেও রোকেয়ার কোনো প্রতিকৃতি বা মুর‌্যাল স্থাপন করা হয়নি ক্যাম্পাসে। কোনো উদ্যোগও গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম নাম বেগম রোকেয়া। তার নামকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়ার কোনো প্রতিকৃতি নেই এটি দুঃখজনক। উপাচার্যের কাছে দাবি—শীঘ্রই ক্যাম্পাসে বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হোক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষে (২০১৮-১৯) সেশনে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হবে তাদের প্রথম সেমিস্টার এবং অন্যান্যদের পরবর্তী সেমিস্টার থেকেই রোকেয়া স্টাডিজ বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে—সে ব্যবস্থাই চলছে।’

বিজ্ঞাপন

রোকেয়ার ম্যুরাল স্থাপনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরেই ক্যাম্পাসের ভিতরে বেগম রোকেয়ার দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে এবং ভারত থেকে তার মৃতদেহ ক্যাম্পাসে এনে রোকেয়ার কবর স্থাপন করা হবে।’

দাবি আছে, উদ্যোগ নেই: রংপুর অঞ্চলের শিক্ষাবিদদের মতে—বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান স্মৃতিবিজড়িত রংপুর মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে অবস্থিত বেহালদশায় থাকা ‘রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ওনেয়ার দাবি এই প্রথম নয়। এর আগেও দুজন সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যের আমলে স্মৃতিকেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়নের দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হলেও এ বিষয়ে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ মাত্র ৭৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এরকম একটি স্থাপনা যোগ হলে বিশ্ববিদ্যালয় সমৃদ্ধের পাশাপাশি স্মৃতিকেন্দ্রটি বেহালদশা থেকে মুক্তি পেতে পারে। একইসঙ্গে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ওই স্থাপনাটি শিক্ষার্থীদের জন্য উত্তম গবেষণাক্ষেত্র কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

তবে আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে সরকার বরাবর জানানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় দাবি এখনো স্বপ্নেই রয়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সাথে কথা বললে তিনি সারাবাংলাকে জানান, ‘ইতোমধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটি দেখভাল করছে। জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন হলেই সরকার এসব কাজ শুরু করবে। দশ বছরেও স্মৃতিকেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘সরকারি পর্যায়ে মামলা ছিল শুনেছি তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মামলা নেই। মামলা থাকলেও জমিজমা সংক্রান্ত মামলা স্মৃতিকেন্দ্রটির সঙ্গে থাকতে পারে সেটা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ভাল বলতে পারবে।’

উপাচার্য বলেন, ‘গবেষণার উত্তম ক্ষেত্রসহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাবরের মত রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংযুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে।’

সারাবাংলা/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন