বিজ্ঞাপন

বৈশাখে হান্ডির আয়োজন

April 13, 2018 | 3:28 pm

জান্নাতুল মাওয়া ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার হান্ডি রেস্তোরাঁ মূলত বিরিয়ানির জন্যে বিখ্যাত। এই রেস্তোরাঁর হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি, সিন্ধি বিরিয়ানি খেতে গোটা শহরের লোক এসে ভীড় জমায় হান্ডির আউটলেট গুলোতে। দুপুর এবং সন্ধ্যায় এই ভীড় হয় সবচেয়ে বেশি।

হান্ডিতে আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো সরেজমিনে হান্ডির বিখ্যাত হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি রান্না দেখবো। হান্ডির কর্ণধার শাহীন আহমেদকে সেই ইচ্ছার কথা জানালে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমিত সরকারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। সুমিত সরকার আমাদের যেকোন একদিন বিকেলের দিকে সময় দিতে চাইলেন। কারণ, এই সময়টাতে ভোজনরসিকদের ভীড় কম থাকে। নির্দিষ্ট দিনে চৈত্রের পড়ে যাওয়া দুপুরের সূর্য মাথায় নিয়ে আমি আর সারাবাংলার ফটোসাংবাদিক আশীষ সেনগুপ্ত রওনা দিলাম বনানীর হান্ডির উদ্দেশ্যে। তারপর ঠিক দুপুরও নয়, বিকেলও নয় তেমনি আলস্যে মোড়া একটা সময়ে শুরু হল আমাদের হান্ডি অভিযান। বনানির ১০ নাম্বার রোডের ৬৫ নাম্বার বাড়িতে তিন আর চার তলায় বিশাল জায়গা জুড়ে এই রেস্তোরাঁটি। রেস্তোরাঁর একপাশে একচিলতে অফিস। সেখানে বসে কফি খেতে খেতে কথা হল সুমিত সরকারের সাথে।

বিজ্ঞাপন

যেহেতু সামনেই বৈশাখ তাই বৈশাখে হান্ডির আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলাম। যদিও হান্ডি ইন্ডিয়ান খাবারের জন্যেই প্রসিদ্ধ তবে হান্ডিতে বাঙালিদের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবারও রাখা হয়েছে। হান্ডি চেষ্টা করছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো পরিবেশন করতে। এর আগে তারা এনেছিলেন মেজবানি গরুর গোশত। আর এবার পহেলা বৈশাখে নতুন যে পদটির উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন সেটি হল বিফ-সাতকড়া। এটি সিলেটের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। এছাড়াও পহেলা বৈশাখে বনানিতে যারা পান্তা ভাত খেতে চান তাদের জন্যে আছে ৬৯৯ টাকার একটি থালি যেটি দুইজন খেতে পারবে। তাতে থাকবে পান্তাভাত, চার রকমের ভর্তা, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা আর ইলিশ মাছ ভাজা। আলাদাভাবে থাকবে সর্ষে ইলিশ আর শুটকির নানা পদ।

সুমিত সরকার আরো জানালেন, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি ছাড়াও হান্ডিতে আরো দুই ধরণের বিরিয়ানি আছে। একটি হল চিকেন নূরজাহান আর অন্যটি বিফ সিন্ধি বিরিয়ানি। এছাড়াও রয়েছে কালা ভূনা, কাবাব প্ল্যাটার। কাবাবের মধ্যে আছে হাড়িয়ালি কাবাব, চিকেন রেশমি কাবাব। সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারের মধ্যে হান্ডির দোসাও বেশ জনপ্রিয়। হান্ডির হোমমেড কুলফিও বেশ বিখ্যাত। পহেলা বৈশাখে পান্তার পাশাপাশি গ্রাহকরা হান্ডির বাকি সব খাবারও পাবেন।


এইসব গল্পের মাঝে আমাদের ডাক পড়লো রান্নাঘর থেকে। তিনতলার কাঠের প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে আমরা চারতলায় রান্নাঘরে পৌঁছে গেলাম। সেখানে শেফ জিহাদ এবং তার সহকারী কাওসার হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি রান্নার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। আশীষদা ক্যামেরা অন করলেই তারা সদলবলে ঝাপিয়ে পড়বেন রান্নায়।
এই অভিজ্ঞতাকে যে কোন পারফরম্যান্স আর্টের ব্যাকস্টেইজ অভিজ্ঞতার সাথে মেলানো যায়। মঞ্চে যখন একটি অনুষ্ঠান মঞ্চায়িত হয় সেই মঞ্চের পেছনে চলে দারুণ হুলস্থুল। তেমনি আমরা যখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সাজানো গোছানো রেস্তোরাঁয় বসে টুংটাং জ্যাজ শুনতে শুনতে খাবারের অর্ডার করি, হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠতে উঠতে অপেক্ষা করি খাবারের; তখন মঞ্চের পেছনে অর্থাৎ রান্নাঘরে চলে আয়োজন। বিশাল এগজস্ট ফ্যানটা রান্নাঘরের এতগুলো বড় বড় চুলার গরম শুষে নিতে পারেনা। তাই রান্নাঘরটা থাকে ভীষণ গরম। সেই গরমেই অভিজ্ঞ শেফ একের পর এক উপকরণ মেশাতে থাকেন অপূর্ব দক্ষতায়। কোনটি আগে, কোনটি পরে, কোনটি এক চামচ, কোনটি আধা! এভাবেই বিরিয়ানি রান্নার শেষ পর্যায়ে চলে আসি আমরা। এবার বিরিয়ানি দমে দেয়া হয় আর আশিষদাও ক্যামেরা গুটিয়ে ফেলেন।

বিজ্ঞাপন

আমরা এসে বসি মঞ্চের সামনে, অর্থাৎ টেবিলে। মুঘল রাজদরবারের কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে কি না কে জানে, টেবিলের এক কোনে বিশাল এক পিতলের সুরার পাত্র সাজানো। এই অঞ্চলে বিরিয়ানি এসেছে মুঘলদের হাত ধরে, তাই মোঘল ঘরানার ইন্টেরিয়র বিরিয়ানির সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।


পিতলের হাঁড়িতে সেজে বিরিয়ানি এলো আমাদের সামনে। আগেই সুমিতদা জানিয়েছিলেন বিরিয়ানির মাটনটাই এই হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির বিশেষ অনুষঙ্গ। এই মাটন বিশেষ উপায়ে আগের রাতেই মেরিনেট করে রাখা হয়। খেতে গিয়ে বোঝা গেল যে তিনি একটুও বাড়িয়ে বলেন নি। আসলেই মাটনটা এত নরম, মুখে দিতেই নরম স্বাদ ছড়িয়ে পড়ে মুখে। আর বিরিয়ানি বলতেই আমরা সাধারণত ভাবি তেল-মশলায় ভরা খাবার। কিন্তু হান্ডির হায়েদ্রাবাদি বিরিয়ানি খেতে গিয়ে সেই তেল জবজবে অনুভূতি হলনা মোটেই। খেতে গিয়ে অনুভূতিটা হল কম তেল, কম মশলা কিন্তু স্বাদে শতভাগ। মুখে রসালো মাটনের সাথে কাজু বাদাম, কিশমিশের স্বাদ যোগ করছিলো নতুন মাত্রা।

হাণ্ডিতে ২৬০ টাকা খরচ করেই এই দারূন স্বাদের বিরিয়ানি খেতে পারবেন খাদ্যরসিকরা। কাবাব প্ল্যাটার খেতে খরচ পড়বে ১৫৯৯ তবে একটি প্ল্যাটারে যে পরিমান খাবার থাকে তা তিনজনে অনায়াসে খাওয়া যায়।

ছবি – আশীষ সেনগুপ্ত ও হান্ডি

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেএম/আরএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন