বিজ্ঞাপন

‘ব্যাংক আইন সংশোধন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী’

January 17, 2018 | 11:20 am

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মুষ্টিমেয় কয়েকজন পরিচালক তথা পরিবারকে সুবিধা দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এই আইন সংশোধনের ফলে ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। পাশাপাশি ব্যাংকের  ওপরের স্তরে কর্মকর্তাদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে করে ব্যাংকের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। পাকিস্তান আমলে দেশের অর্থনীতি মুষ্টিমেয় কয়েকটি পরিবারের হাতে জিম্মি ছিল। বঙ্গবন্ধু অর্থনীতিকে পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্ত করতে সংগ্রাম করেছিলেন।’

শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ সরাসরি দেখুন সারাবাংলা.নেটে

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়া তথা দেশে পরিবারতন্তের অবসান। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে পরিবারতন্ত্র কায়েম করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।’

ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকে সাধারণত ৯০ শতাংশ টাকা জমা রাখেন গ্রাহকরা, আর মাত্র ১০ শতাংশ টাকা থাকে পরিচালকদের। ফলে পরিচালকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করায়, গ্রাহকসমাজ, এটা পছন্দ করেননি। শুধু তাই নয় অনেকেই এই আইনের বিরোধীরা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে যারা চাকরি করেন, মানে মূল পক্ষ যারা তাদের জন্য এটা একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার হবে। বিশেষ করে ব্যাংকের উপরের লেভেলে কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়বে। আরেকটি পক্ষ যারা নাকি ব্যাংকের মালিকপক্ষ সেখানেও মেজরিটি শেয়ারহোল্ডার এটা চায়নি। তারাও এই ধরনের সংশোধনীর বিপক্ষে ছিল। মুষ্টিমেয় কয়েকজন পরিচালকের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে এটা করা হয়েছে। অনান্য পক্ষ ব্যাংকার, কাস্টমার, শেয়ারহোল্ডার ও বিশিষ্টজনদের মতামত কেন অগ্রাহ্য করা হল, এট আমাদের কাছে বোধ্যগম্য নয়। এর, পরিণতি ব্যাংকের জন্য খুবই অশুভ হবে বলে আমরা মনে করছি।’

বিজ্ঞাপন

ন্যাশনাল ব্যাংকের উদারহণ দিয়ে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, যখন এক পরিবার থেক দুইজনের বেশি পরিচালক ছিল না। তখন ন্যাশনাল ব্যাংকটি ছিল বাংলাদেশের সেরা চারটি ব্যাংকের অন্যতম। যখন এক পরিবার থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫ জন পরিচালক হল, তখন থেকেই এটার পতন শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টরে বড় ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে এই ব্যাংকটি। সবচেয়ে বেশি ঋণ শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। কাজেই ব্যাংক কোম্পানি আইনটি সংসদে পাস হওয়ায় আমরা মনে করি, এটি একটি অশুভ প্রক্রিয়ার জন্ম দিল।’

শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ সরাসরি দেখুন সারাবাংলা.নেটে

অন্যদিকে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্ঠা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের কোন প্রয়োজন ছিল না। এই পরিবর্তন কাঙ্ক্ষিত না। এই ধরনের সংশোধনীর ফলে ব্যাংকিং খাতে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই ব্যাংকিং খাতে নানা রকম সমস্যা আছে। পরিচালকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন ব্যাংকি খাতে সুশাসনের পরিপন্থী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার এটা হয়ত রাজনৈতিক চাপে করেছে। এই ধরনের পরিবর্তন সুশাসনের পরিপন্থী।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এক পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকলে আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকরাও আস্থার সংকটে পড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের সংশোধনী কোনো প্রয়োজন ছিল না।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাক বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন সাধারণ জনসাধারণের মতের পরিপন্থী। এক পরিবার থেকে চারজন এবং ৯ বছর থাকা এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে পরিবার থেকে মালিকানা আলাদা করা দরকার। কারণ পাবলিকের টাকায় ব্যাংক চলে, ফলে সরকার উল্টো পথে হাঁটছে বলে আমি মনে করছি। তবে বলব সরকার চাইছে তাই হয়ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নাই।’

গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধনী) বিল, ২০১৭ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনটি সংশোধনের ফলে ব্যাংকের পরিচালকদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ল। এত দিন এক পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে ২ জন থাকতে পারতেন। সংশোধিত আইনে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। শুধু তাই আগে যেখানে দুই মেয়াদে তিন বছর করে মোট ছয় বছর পরিচালক পদে থাকা যেত। নতুন আইনে তিন মেয়াদে টানা ৯ বছর থাকা যাবে। আবার ৯ বছর শেষ হওয়ার পর তিন বছর বিরতি দিয়ে পুনরায় ৯ বছর পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। অন্যদিকে এত দিন যারা টানা ৬ বছর পরিচালক ছিলেন। আইন সংশোধনের ফলে নতুন করে তারাও আবার ৯ বছর করে থাকার সুযোগ পাবেন।

শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ সরাসরি দেখুন সারাবাংলা.নেটে

এর আগে, গত সেপ্টেম্বর মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বিলটি উত্থাপন করেন। তবে গত বছরের ৮ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদন করে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ পাস হওয়ার পর থেকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের মেয়াদ-সম্পর্কিত ধারাটি পাঁচবার সংশোধন করা হয়েছে। এই ধারায় ব্যাংকের পর্ষদে একজন পরিচালক কত বছর পরিচালক থাকতে পারবেন, সে কথা বলা রয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/আইজেকে

তুমুল আপত্তির মুখে পাস হলো ব্যাংক-কোম্পানি সংশোধিত বিল!
আপত্তি থাকলেও ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হবে : অর্থমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন