বিজ্ঞাপন

ব্রাজিল বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিল ভারত

June 19, 2018 | 12:20 pm

সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ তো একটি স্বপ্নের বিষয়। বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা দীর্ঘ প্রতীক্ষায় বসে থাকেন ৪ বছর পর পর হওয়া বিশ্বকাপের অপেক্ষায়। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ প্রত্যেকটি দেশের জন্য একটি গৌরবের বিষয়। বাংলাদেশ কখনো না পারলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত সুযোগ পেয়েছিল বিশ্বকাপে খেলার। বাংলাদেশ খেলেছিল ১৯৮৬’র বাছাইপর্বে, যে বিশ্বকাপটি স্মরণীয় হয়ে আছে দিয়েগো ম্যারাডোনা আর আর্জেন্টিনার হাতে শিরোপা ওঠার মাধ্যমে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলেছে ১৯৮৫ সালে। সেবার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে নামার ছাড়পত্র পেলেও সেখানেই শেষ হয় বাংলাদেশের স্বপ্ন।

এশিয়া থেকে বিশ্বকাপে খেলেছে অনেক দেশই। এই যেমন এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে এশিয়ার চারটি দেশ। এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা এ ৫টি অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের খেলা। ৩২ দল খেলছে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে। তাদের মধ্যে এশিয়া অঞ্চলের পাঁচটি দল নির্ধারিত হয়। যেখানে এশিয়া থেকে রয়েছে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সৌদি আরব। অন্য দল অস্ট্রেলিয়া এশিয়া অঞ্চলের বাইরে থেকে সুযোগ পেয়েছে। বিশ্বের শক্তিশালী সব দলকে বাছাইপর্বে টপকে যেতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শক্তির বিচারে ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেমন ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল অনেক পিছিয়ে। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র সৌভাগ্যবান দেশটি হচ্ছে ভারত। কারণ একবার বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ভারত। ১৯৫০ সালে চতুর্থ বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসেছিল ব্রাজিলে। ভারতবাসীকে এখনও পোড়ায় সেই সুযোগটি।

ব্রাজিলের সেই আসরে মোট ১৬টি দেশ অংশগ্রহণের কথা ছিল। স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি ছাড়া ৭টি দেশ আসে ইউরোপ থেকে, ৬টি আমেরিকা মহাদেশ থেকে এবং বাকি জায়গাটি জায়গা বরাদ্দ ছিল এশিয়ার জন্য। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ফিফা এশিয়ার চারটি দেশকে আমন্ত্রণ জানায়। এশিয়া থেকে বাছাইপর্ব খেলার সুযোগ পায় ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, বার্মা ( বর্তমান মায়ানমার) ও ভারত। এশিয়ার বাছাইপর্ব পেরিয়ে এই চার দলের মধ্য থেকে একদল পেত ব্রাজিলের টিকিট। কিন্তু বাছাইপর্বের বিরোধিতা করে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও বার্মা বিশ্বকাপ থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। তাতে ভারতের সামনে সুবর্ণ সুযোগ আসে বাছাইপর্ব না খেলেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ খেলার। সেবার অনেক দেশই বাছাইপর্বের বিরোধিতা করে বিশ্বকাপ থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।

১৯৫০ সালে ব্রাজিলে বিশ্বকাপে ভারত ছিল তিন নম্বর গ্রুপে। সেই গ্রুপে ছিল ইতালি, প্যারাগুয়ে ও সুইডেন। স্বপ্ন সত্যি হলেও ভারতকে সেই বিশ্বকাপে খেলতে দেওয়া হয়নি। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে অংশ নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ সামনে আসলেও সেটাকে পায়ে ঠেলেছিল ভারত। ১৯৫০ বিশ্বকাপ থেকে ফিফা খেলোয়াড়দের খালি পায়ে খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং বুট পরে খেলা বাধ্যতামূলক করে। নতুন আইনের ফলে বিপাকে পড়ে ভারত। কারণ, ভারত খেলতে চেয়েছিল খালি পায়ে (বুট ছাড়া)।কিন্তু ফিফার নতুন নিয়ম ছিল ১৯৫০ বিশ্বকাপে বুট ছাড়া কোনো খেলোয়াড় মাঠে নামতে পারবে না। ১৯৪৮ সালে অলিম্পিক ফুটবলে ভারত খেলেছিল খালি পায়ে। সদ্য স্বাধীন হওয়া ভারত সেবারই প্রথম অলিম্পিকে অংশ নেয়। ফাইনালে তারা ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেলেও বিশ্ব ফুটবলের নজরে আসে। সে সময় ভারতের ফুটবলাররা খালি পায়ে খেলতেই অভ্যস্ত ছিল।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু, ফিফা তার নতুন আইনে অনড় থাকায় এবং ভারতীয়দের বুট পরে খেলার অযোগ্যতার কারণে শেষ পর্যন্ত ভারত বিশ্বকাপ থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। তবে, এটাও প্রচলিত আছে যে, খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত বুট না থাকার কারণে ভারত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

ভারতের বিশ্বকাপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার আরও একটি কারণ ছিল। আর্থিক অনটনে থাকা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন ব্রাজিল যাওয়া-আসার জন্য ফিফার কাছে অর্থ সাহায্য চেয়েছিল। তখন ভারত থেকে ব্রাজিল যাওয়ার কাজটাও সহজ ছিল না। দীর্ঘ জাহাজ ভ্রমণ করে যেতে হতো ব্রাজিলে। ফিফা পুরোটা না দিলেও আসা-যাওয়ার বেশির ভাগ খরচ বহন করতে চেয়েছিল। তাতে ভারতের হতাশা বাড়ে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে পায়ে বুট গলিয়ে খেলতে না পারার লজ্জা আর সুযোগ পেলেও অর্থের অভাবে অংশ নেয়া হয়নি ভারতের।

তবে, ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের এক পুরোনো বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, দল নির্বাচন আর অনুশীলনের জন্য যথেষ্ট সময় না থাকায় তারা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি। ২০১১ সালে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে তৎকালীন ভারতীয় দলের অধিনায়ক শৈলেন মান্না জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের বিশ্বকাপ নিয়ে কোনোরকম ধারনা ছিল না। যদি ধারনা থাকতো তাহলে আমরা নিজেরাই উদ্যোগ নিতাম ব্রাজিল বিশ্বকাপে যাওয়ার। সে সময় আমাদের জন্য অলিম্পিকই ছিল সবকিছু। কোনো কিছুই অলিম্পিক থেকে বড় ছিল না।’

সারাবাংলা/এমআরপি

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন