বিজ্ঞাপন

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলে কী হবে?

December 11, 2018 | 8:19 am

।। নাদিম হোসেন ।।

বিজ্ঞাপন

প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে ‘ব্রেক্সিট’ নিয়ে স্থির কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি যুক্তরাজ্য। এই ব্রেক্সিটের ধাক্কায় একের পর এক মন্ত্রীকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতেও লেগেছে ধাক্কা। তবু এখনও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর ঝুলে রয়েছে ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কাউন্সিলে ‘ব্রেক্সিট’ অনুমোদন পেলেও তা নাকচ হয়ে যেতে পারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। সেক্ষেত্রে দেশটির পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের কাজটি সহজ হবে না।

মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার চুক্তিটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে ভোট দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ সময়ে আকস্মিকভাবে তা স্থগিত করেন মে। এমপিরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র আনা ব্রেক্সিট প্রস্তাব বাতিল করলে ফের ইইউয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে মে’কে। তবে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে উভয়পক্ষ কোনো সমঝোতায় না পৌঁছাতে পারলে ‘নো-ডিল’ ব্রেক্সিট কার্যকর হবে। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট কোনো আইনি কাঠামো ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করবে যুক্তরাজ্যে। এক্ষেত্রে, ইইউ ও যুক্তরাজ্যকে ভবিষ্যতে ‘অমীমাংসিত সমস্যা’ মোকাবিলার ঝামেলা পোহাতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরেও বিকল্প পথ খোলা থাকবে যুক্তরাজ্যের জন্য। যেমন— পুনরায় সংশোধিত ব্রেক্সিট চুক্তি উপস্থাপন করতে পারে দেশটি, আবার ‘নরওয়ে মডেল’ বাস্তবায়ন কিংবা ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিবর্তনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে থেরেসা মে’কে সরে যেতে হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে। আর শেষ পর্যন্ত ইইউতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনার দ্বার তো খোলা আছেই।

এদিকে, ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক আয়ারল্যান্ড সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ হবে। পণ্য ও অন্যান্য জিনিস পরিবহনে বলপ্রয়োগ ও শারীরিকভাবে তল্লাশি চালানো হতে পারে, যা সীমান্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। জিব্রাল্টার, সাইপ্রাসের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা এবং যুক্তরাজ্যের সমুদ্র সীমার অধিকার প্রশ্নে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাড়বে উদ্বেগ। তাই ব্রিটিশ এমপিদের অনেকেই চান না, এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির মুখে পড়ুক ব্রিটেন। তবে ব্রেক্সিটের কট্টর সমর্থকরা প্রয়োজনে নো-ডিল ব্রেক্সিটেও রাজি।

অন্যদিকে, ‘নরওয়ে মডেল’ অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইকোনমিক এরিয়া বা ইইএ’র অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সেইসঙ্গে, ইইউ’র মৌলিক নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে তাদের। তবে ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ সদস্য দেশের মর্যাদা পাবে না তারা। এক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা রাজনৈতিক সদিচ্ছায় বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এই মডেলেও মর্যাদা নিশ্চিত না হওয়ায় রাজি নন অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

তবে এসব কোনো ক্ষেত্রেই পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা শেষ কথা নয় এবং এখানেই রয়েছে পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলোর অনিশ্চয়তা। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের কাছে আগাম নির্বাচন চাইতে পারে বিরোধী লেবার পার্টি। লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মে যদি ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করতে না পারেন, তাহলে তার দল মে’র বিপক্ষে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে। সেক্ষেত্রে টোরি (কনজারভেটিভ অ্যান্ড ইউনিস্ট) দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন হবে করবিনের।

এদিকে, ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চায় না— এমন একটি গ্রুপের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস (ইসিজে) তাদের রায়ে বলেছে, যুক্তরাজ্য চাইলে পুনরায় ইইউতে থেকে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে জোটটির বাকি ২৭ সদস্যদের অনুমতি বা সমঝোতার প্রয়োজন হবে না। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে আরও একটি গণভোটের প্রয়োজন হতে পারে।

আর যদি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করে, তাহলে ইইউ ও যুক্তরাজ্য সম্পর্ক পরিবর্তনে নির্ধারিত সময়ের পর থেকে ২২ মাস একে অন্যকে সহযোগিতা করে যাবে বলে কথা রয়েছে। তবে এ সময়সীমা পারস্পরিক সম্মতিতে বাড়ানোও যাবে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান চুক্তিতে পার্লামেন্টের দ্বিমত কোথায়?

ব্রিটিশ এমপিদের আপত্তি নর্দান আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড সীমান্তে প্রস্তাবিত ‘ব্যাকস্টপ পলিসি’ নিয়ে। স্পর্শকাতর এই সীমান্তে কঠোর না হতে ইইউ ও ব্রিটেন একমত হলেও তা বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে দ্বিধা রয়ে গেছে।

যুক্তরাজ্যে ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে তারা ইউরোপের সিঙ্গেল মার্কেট কাঠামোয় আর অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। তাই ইউরোপীয় স্ট্যন্ডার্ড নিশ্চিত করতে সীমান্তে যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হওয়ার কথা যুক্তরাজ্যের। এক্ষেত্রে কার্যকর হবে সেফটি নেট হিসেবে পরিচিত ব্যাকস্টপ পলিসি। অর্থাৎ দুপক্ষের মধ্যে নতুন কোন বাণিজ্য চুক্তির সমঝোতা না হলে শুধুমাত্র নর্দান আয়ারল্যান্ড ইইউর সিঙ্গেল মার্কেট সুবিধা পাবে এবং নিরাপত্তার অংশীদার হবে। তবে ব্রিটিশ এমপিরা আশঙ্কা করছেন, নর্দান আয়ারল্যান্ড ইস্যুতে যুক্তরাজ্যকে জিম্মি করবে ইইউ।

দুপক্ষের অনিশ্চিত ভবিষ্যত সম্পর্ক ও নিরাপত্তার বিষয়কে সামনে রেখে, পুরো যুক্তরাজ্যের জন্য অভিন্ন বাণিজ্য চুক্তির দাবি তাদের। যা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বেশি ছাড় এখনই দিতে প্রস্তুত নয় বলে দাবি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র। প্রস্তাবিত ব্যাকস্টপ পলিসি নিখুঁত করতে অথবা বিকল্প কোন পথ খুঁজতে মে ইউরোপীয় নেতাদের সাথে আবারও আলোচনায় বসবেন।

যেভাবে এলো ব্রেক্সিট ইস্যু

ইইউয়ের ভার যুক্তরাজ্যকে বইতে হচ্ছে— এমন অভিযোগ ব্রিটিশ নাগরিকদের পুরনো। ইইউতে ব্রিটিশরা সুখী নয়— এমন বিতর্ক নিরসনে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২০১৫ তার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনি ইশতেহারে ব্রেক্সিট প্রশ্নে গণভোট ডাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নিজে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে থাকলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিট গণভোটের আয়োজন করেন তিনি। ওই গণভোটে দেশটির ৫২ ভাগ লোক ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেন। নিজের অবস্থানের পক্ষে গণভোটের রায় না আনতে পারায় পদত্যাগ করেন ক্যামেরন। তবে সরকারি ও বিরোধী দল জানায়, ব্রিটিশদের চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এদিকে, ক্যামরনের উত্তরসূরী থেরেসা মে’ও ব্রেক্সিটের পক্ষে ছিলেন না। তবে জনমতের বাস্তবায়নেই ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে হচ্ছে তাকে।

ব্রেক্সিট শব্দের উৎপত্তি

‘ব্রিটেন’ আর ‘এক্সিট’— এই দুই শব্দ মিলিয়ে ব্রেক্সিট শব্দটির প্রথম সূত্রপাত ঘটান পিটার ওয়েলডিং নামের এক ব্রিটিশ। সেটা ২০১২ সালের কথা। তিনি যুক্তরাজ্যের ইইউতে থাকার পক্ষপাতী ছিলেন। পিটার বলেন, সে সময় গ্রিসের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিক্ষোভ গ্রেক্সিট নামে এক প্রসঙ্গ উঠেছিল। সে থেকেই ব্রেক্সিট বিষয়টি তার মাথায় আসে। ব্রেক্সিট শব্দটি উল্লেখ করে তিনিই প্রথম টুইট করেন।

বিবিসি অবলম্বনে

সারাবাংলা/এনএইচ/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন