বিজ্ঞাপন

ভল্টের সোনায় হেরফের, অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অস্বীকার

July 18, 2018 | 12:57 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সুর মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির ভল্টে রক্ষিত সোনার পরিমাণে হেরফেরের ঘটনা অস্বীকার করলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, সোনা নিয়ে মিডিয়ায় আসা তথ্য সত্য নয়। ক্ল্যারিক্যাল কিছু ভুলের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এতে কারও গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সচিবালয়ে বুধবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনার পরিমাণে হেরফেরের বিষয় নিয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনার পরিমাণে হেরফের হওয়া নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল, সচিবালয়ে বৈঠকের পর অর্থ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যেও সেই একই সুর ছিল।

বিজ্ঞাপন

এ সময় অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় ক্ল্যারিক্যাল কিছু ভুলের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ছয় স্তরের নিরাপত্তা আছে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা সম্ভব না। তারপরও যেহেতু এ ধরনের একটি অভিযোগ এসেছে, সে কারণে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই পরবর্তী ব্যবস্থা কী হবে— জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থমন্ত্রী ফিরে এলে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতকাল (মঙ্গলবার) খবরের কাগজে প্রথম দেখে অবগত হই। এর আগে এ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। পরে আমি আঁৎকে উঠেছি, স্বীকার করব। যেভাবে খবরের কাগেজে এসেছে, এটা ভয়াবহ ব্যাপার মনে হয়েছে আমার কাছে। যেহেতু আমার জ্যেষ্ঠমন্ত্রী (অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) দেশে নেই, আমি সারাদিন যতটুকু সম্ভব বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলেছি এবং তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরে বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রেস কনফারেন্স করেছে। সন্ধ্যা নাগাদ আমার ভীতি কমে এসেছে।’ এ ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাকে আশ্বস্ত করেছে বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘যে পরিমাণের কথা বলা হয়েছে ৯৬৩ কেজি, তা মোটেই ঠিক নয়। সব সোনা ঠিক আছে, ঘরেই আছে। জনগণ বা যেকোনো সংস্থা গিয়ে দেখতে পারে, বাংলাদেশে ব্যাংকের দরজা খোলা আছে। ৪০ ও ৮০ শতাংশ নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে, এটি ক্লারিক্যাল এরর। লেখার মধ্যে ইংরেজি-বাংলা মিক্সচার হয়ে গেছে। কিছু ব্যাপার আমরা করি— মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থায় কষ্টিপাথর দিয়ে সোনা ঘষে পরিমাপ করা হয়। এখন সর্বশেষ ইলেকট্রনিক উপায়ে পরিমাপ করা হয়। এর মধ্যে চুল পরিমাণ বেশকম আসতে পারে রিডিংয়ে। সকালে যেটা মাপা হয়, বিকেলে মাপলে সেটা দেখা যায় পয়েন্ট জিরো জিরো জিরো ওয়ান কমেছে। উভয় নির্বাহী কর্তৃপক্ষ আমাকে আশ্বস্ত করেছে, আপনারা ভয় পাবেন না।’

তবে এ ঘটনায় কারও কোনো ধরনের গাফিলতি থাকলে অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জনগণের সম্পদ রক্ষায় ঘুণাক্ষরেও কোনো গফলতি ঘটে থাকলে সেটা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। সরকার সে দায়িত্ব পালন করবে। আগামীতে আরও তথ্য পেলে আপনাদের টাইম-টু-টাইম জানানো হবে।’

এ ঘটনা তদন্তে কোনো কমিটি করা হবে কিনা— জানতে চাইলে এম এ মান্নান বলেন, আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একমত হয়েছি যে আমরা বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করব। আমি মন্ত্রীকে ব্রিফ করব। তদন্ত কমিটি হবে নাকি পর্যালোচনা কমিটি হবে- এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে ইট ইউল বি লুকড ইনটু (বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে)। যাই করব, আইনের মাধ্যমে করা হবে। তবে তদন্ত শব্দটি আমি ব্যবহার করছি না।’

এর আগে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শুল্ক গোয়েন্দা ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকে বসেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম ও এনবিআরের সদস্য কালীপদ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশিরভাগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সোনা পরিণত হয়েছে সংকর বা মিশ্র ধাতুতে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।

পরে ওই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করে, ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনার পরিমাণে তারতম্য হওয়ার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়। কিছু ‘ক্ল্যারিক্যাল মিসটেকে’র কারণে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, সোনার পরিমাণ ৪০ শতাংশ থাকলেও তাকে ইংরেজি ভাষার ‘80’ মনে করে কেরানির ভুলে ৮০ শতাংশ বলে উল্লেখ করায় এই হেরফের ঘটেছে। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং সেখানে প্রবেশের জন্য গভর্নরকেও অনুমতি হয় উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, সেখান থেকে কেউ সোনার চাকতি নিয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। শুল্ক গোয়েন্দাদের ব্যবহৃত সোনা পরিমাপের যন্ত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন