বিজ্ঞাপন

ভাড়ায় চলবে বাইসাইকেল

December 27, 2017 | 8:42 am

হাসান আল মাহমুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

বিজ্ঞাপন

এবার বাংলাদেশেও চালু হচ্ছে স্মার্টফোন এপ্লিকেশন (অ্যাপ) নির্ভর বাইসাইকেল শেয়ারিং সেবা। জানুয়ারি থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হবে সেবাটি। ‘জোবাইক’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসছে এই সেবা। উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে এরকম সেবা আগে থেকে থাকলেও বাংলাদেশে এই প্রথম সেবাটি নিয়ে আসছে জোবাইক।

দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতেও পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে এটি। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য শহরেও এটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে জোবাইকের। সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী খাঁন হেলালউজ্জামান অয়ন।

সেবাটি গ্রহণ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জোবাইক কর্তৃপক্ষ জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, অনুষদের সামনে ও বটতলা, ডেইরি গেইট, প্রান্তিক গেইটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে জোবাইকের সাইকেল স্ট্যান্ড করা থাকবে। ব্যবহারকারী ইচ্ছামতো একটা সাইকেল নিয়ে কিউআর কোড স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে আনলক করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

প্রথমে ব্যবহারকারীকে স্মার্টফোনে জোবাইকের অ্যাপটি ইনস্টল করে একটি একাউন্ট খুলে নিতে হবে। অ্যাপটির মাধ্যমে সাইকেলের সাথে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে ইচ্ছেমত ক্যাম্পাসের যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে সাইকেলটি। তবে অ্যাকাউন্টে থাকতে হবে জোক্রেডিট ব্যালেন্স।

মোবাইল ফোন ব্যালেন্স রিচার্জের দোকানের মত ক্যাম্পাসে থাকবে জোক্রেডিট ব্যালেন্স রিচার্জ করার জন্য জোবাইক’র কাউন্টার। ৫ মিনিটের জন্য ব্যালেন্স কাটা হবে ৩ টাকা হারে। অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেলের লক খোলার সাথে সাথে শুরু হবে সময় গণনা। গন্তব্যে পৌঁছে ব্যবহারকারী যখন সাইকেলটি স্ট্যান্ড করে পুনরায় লক করবেন তখনই সময় গণনা শেষ হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, সাইকেলগুলোতে থাকবে সোলার প্যানেল ও একাধিক জিপিএস ট্র্যাকার, যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সাইকেলের অবস্থান নজরে থাকবে। কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে সাইকেল নিয়ে যেতে চাইলে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে। এছাড়া সাইকেলগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করায় শনাক্ত করা যাবে সহজেই। আপাতত ১০-২০টির মত সাইকেল নিয়ে জাহাঙ্গীরনগরে যাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা জোবাইকের। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী সাইকেলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

সেবাটি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী খাঁন হেলালউজ্জামান অয়ন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে এ ব্যাপারে আমাদের কথা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝেও আমরা জরিপ চালিয়েছি। জরিপে আমাদের মনে হয়েছে জোবাইক শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনে রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই ক্যাম্পাসের ভেতরে সেবাটি পাবেন। আশা করছি এতে ইতিবাচক সাড়া মিলবে। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেই আমরা ভাড়া নির্ধারণ করেছি। জোবাইকের সেবা গ্রহণের পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, তারা সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন।’

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এরকম সেবা আমরাই প্রথম শুরু করতে যাচ্ছি। আর সেটা শুরু হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। ফলে আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আমরা বন্ধু হিসেবেই পাব।’

সেবাটি পরিচালনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে জোবাইক’র। কমিউনিটি লিডের দায়িত্বেও থাকবেন শিক্ষার্থীরা। ফলে এখানে শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগও তৈরি হবে বলে জানান হেলালউজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সেবাটি চালু হওয়ার সংবাদ শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আমিনুর রহমান নামের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে প্রাইভেট গাড়ি রিক্সার কারণে যে পরিমাণ যানজটের সৃষ্টি হয় সেবাটি চালু হলে অন্তত এটা থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। তাছাড়া দুপুরে আর সন্ধ্যার পর রিকশা পাওয়াটা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। রাত নয়টা-দশটার পর তো রিক্সা আর পাওয়াই যায় না। অনেক উপকার হবে এটা চালু হলে।’

কামরুন্নাহার শারমীন নামের নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভাড়াটা যদি শিক্ষার্থী বান্ধব থাকে তাহলে বিষয়টা খুবই চমৎকার হবে। এমনিতেই ক্যাম্পাসে চরম পরিবহন সংকট। একটু রাত হলেই রিকশা পাওয়া যায় না আর। এটা চালু হলে এ বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাছাড়া বিশেষভাবে উপকৃত হবেন নারী শিক্ষার্থীরা। কারণ নারী শিক্ষার্থীদের শরীর চর্চার সুযোগ সাধারণত কম। শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য সাইকেল চালানোটা খুবই উপকারী। সেবাটি চালু হলে একদিকে যেমন শরীর চর্চা হবে অন্যদিকে পরিবহন সংকটও দূর হবে। অর্থ সাশ্রয়ও হবে অনেক।’

সারাবাংলা/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন