বিজ্ঞাপন

ভোটের ৭ দিন আগে সেনা মোতায়েন দাবি বিএনপির

April 17, 2018 | 12:58 pm

।।স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সাত দিন আগে সেনা মোতায়েন চায় বিএনপি। পাশাপাশি গাজীপুরের পুলিশ সুপারসহ দুই সিটির ‘বিতর্কিত’ সরকারি কর্মকর্তাদেরও প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দলটি।

মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে এসব প্রস্তাব লিখিত আকারে তুলে ধরে বিএনপির একটি প্রতিনিধ দল।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন ও বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম সাত্তার।

বিজ্ঞাপন

সকাল সোয়া ১১ টা থেকে বেলা সোয়া ১২ টা পর্যন্ত টানা ১ ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর ১ ঘণ্টা পর নির্বাচন কমিশনের হয়ে ব্রিফিং করেন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ।

সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সে মোতাবেক দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’

‘কিন্তু অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালটবক্স ভর্তি, ভোট ডাকাতি, সশস্ত্র ক্যাডারদের অস্ত্রের মহড়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিক খবর দেশবাসী গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি কমিশনের বিবেচনার জন্য উপস্থান করা হয়েছে’—  বলেন মোশাররফ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্দিষ্ট তারিখের ৭ দিন পূর্ব হতে নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে অবশ্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। গাজীপুর জোলার বর্তমান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’

বিএনপির এসব দাবির ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী বলেছেন?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ দাবির সঙ্গে তারা (কমিশন) এক মত পোষণ করেছেন। তবে সেনা মোতায়েন ও বিতর্কিত কর্মকর্তা প্রত্যাহারের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত আমাদেরকে পরে জানাবেন।’

‘কমিশনের অ্যপ্রোসে আমরা সন্তুষ্ট’— বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এর ১ ঘণ্টা পর নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালু্দ্দীন অনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তো আইন অনুযায়ী চলে। সেক্ষেত্রে বিএনপির দেওয়া প্রস্তাবগুলো যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। ‘বিতর্কিত’ কর্তকর্তাদের প্রত্যাহার বা সেনা মোতায়েনের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির দেওয়া অন্য প্রস্তাগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দৃশ্যমানভাবে নাম ও র‌্যাঙ্ক ব্যাচসহ ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন, দল নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা প্যানেল তৈরি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি প্রদান ও গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ, প্রচার-প্রচারণায় সমান সুযোগ সষ্টি, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসে একটি করে অভিযোগ কেন্দ্র চালু করা, গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী এলাকায় নিরপেক্ষা পর্যবেক্ষক নিয়োগ, প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ইভিএম/ডিভিএম ব্যাবহার না করা এবং ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শেষ করা।

এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন সমন্বয় কমিটি বাতিলেরও দাবি করেছে বিএনপি। বিষয়টি নির্বাচনী বিধির লঙ্ঘনের অভিযোগ করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারকে সহায়তা করার জন্য কোনো সমন্বয় কমিটি গঠনের সুযোগ নেই। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

অবশ্য এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘সমন্বয় কমিটি গঠন মোটেই নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। এ ধরনের কমিটি অতীতেও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি মূলত, নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে থাকে।’

বিএনপির দেওয়া বেশিরভাগ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেগুলোর বেশিরভাগের সঙ্গে কমিশন একমত। তবে নির্বাচন আইনে রয়েছে যত বেশি সম্ভব প্রযুক্তি ব্যবহার করা। সে ক্ষেত্রে ইভিএম/ডিভিএম নিয়ে বিএনপি যে  আপত্তি তুলেছে, সে ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আরো আলোচনা হতে পারে। যে মেশিনগুলো ব্যবহার হবে, সেগুলো তাদের সামনে পরখ করে দেখানো হবে।’

বিএনপি এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যকার এই বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব এবং অন্য কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন