বিজ্ঞাপন

মওদুদ আহমদের নামে ফেসবুক আইডি থেকে নারীর সঙ্গে প্রতারণা

February 20, 2019 | 10:21 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদ নামে একটি আইডি ব্যবহার করে আরেক নারী আইনজীবীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাইবার সিকিউরিটি আইনে সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভুক্তভোগী ওই নারী আইনজীবী সারাবাংলার কাছে প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে মওদুদ আহমদের নামের আইডি থেকে ওই নারীর পরিচয় হয়। ওইসময় বিএনপি দলীয় নানা পোস্টও ওই আইডিতে দেওয়া হতো। সেই সূত্র ধরে বিশ্বাস জন্ম নেয় যে, উনি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তরুণ আইনজীবী হিসেবে সবারই স্বপ্ন থাকে বড় কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করা। তাই মেসেঞ্জারে নিয়মিত কথা হতো। কিন্তু ফোনে কিংবা মোবাইলে কোনোদিন কথা হতো না। মোবাইল নম্বর চাইলে বলা হতো নম্বর নিয়ে কী হবে? আমি একা মানুষ কখন কোথায় থাকি, ঠিক নেই। যাই হোক আমি তো ফোন ধরি না। আমার ফোন তো আরেকজনের কাছে থাকে।

বিজ্ঞাপন

পরিচয় যখন খুব ভালো অবস্থায় যায় তখন তিনি বলেন, ‘শোন, তোমাকে আন্তর্জাতিক বা দেশীয় কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিতে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দেব। মেয়ে মানুষ কোর্টে কাজ করার চেয়ে কোনো কোম্পানিতে কাজ করা অনেক ভালো হবে। টাকাও অনেক, তবে পরিশ্রম বেশি নয়।

গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে ওই আইডি থেকে বলা হয়, দুবাই থেকে আমার একজন ক্লায়েন্ট আসবে। তার নাম শাকিল আহম্মদ। তুমি তাকে রিসিভ করবে এবং যা বলবে শুনবে। উনি তোমাকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে। এই কথা বলার পর গত বছরের ৩ আগস্ট পল্টন পলওয়েল মার্কেটের সামনে শাকিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। আলাপ-আলোচনায় তার সঙ্গে পরিচয় আরও ঘনিষ্ট হয়। তিনি সেখান থেকে তার গাড়িতে করে গ্রীন রোডের একটি হোটেলে নিয়ে যায়।

নারী আইনজীবী বলেন, এখানে তো আসার কথা নয়। আমরা হোটেলে আসছি কেন? তখন শাকিল আহম্মদ বলেন, কেন, স্যারের সঙ্গে তো এটাই কথা হয়েছে। স্যার তোমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। কেন, বলার কথা ছিল তো। তখন নারী আইনজীবী সেই ফেসবুক আইডিতে নক করলে কোনো রিপ্লাই পাননি। এরপর ওইদিন হোটেলে শাকিলের খারাপ আচরণের শিকার হতে বাধ্য হন ওই আইনজীবী।

বিজ্ঞাপন

ওইদিনের ঘটনার পর মওদূদ আহম্মদ ব্যবহারকারী আইডি থেকে যোগাযোগ করে বলা হয়, শাকিল যে এরকম খারাপ আচরণ করবেন তা তো বুঝিনি। এটা তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে। ঠিক আছে নেক্সট টাইম এটা দেখব। আর এটা বাইরের কেউ তো জানছে না। বিয়ে তো এখনো করনি যে, অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আর শোন, তোমাকে যেখানে চাকরির কথা বলেছি, সেখানে কিন্তু এক লাখ টাকা লাগবে। তুমি তাড়াতাড়ি যোগাড় করে দিও। এই কথার পর নারী আইনজীবী মওদূদ আহম্মদের সাথে দেখা করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে দেখা করা যাবে না। আর আমি টাকাও নিবো না। শাকিলকে টাকা দিলেই হয়ে যাবে।

তার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শাকিলের দেওয়া ডাচ-বাংলা মোবাইল বাংকের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা এবং বিকাশের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা দেই। এছাড়া পরবর্তীতে কয়েকধাপে চাকরি দেওয়ার নাম করে মোট ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা প্রদান করি। কিছুদিন পরে চাকরির নিয়োগপত্র চাইলে ওই আইডি নামধারী ব্যক্তি নিয়োগপত্র দেব, দিচ্ছি বলে ঘোরাতে থাকে। এরই মধ্যে শাকিল আরো বেশ কয়েকবার বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে যায় এবং খারাপ আচরণ করে। আমি বিভিন্নভাবে তাগিদ দেওয়ায় সে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, ওইদিন হোটেলের ঘটনা ভিডিও করা আছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখান। একপর্যায়ে আমার আইডিতে ওইসব ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে দেয়। নিজের আইডিটি বন্ধ করে দিলে তখন আমার বোনের আইডিতে ওইসব ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে দেয়। বোনের আইডিটিও বন্ধ করা হলে আরো একটি ভুয়া আইডি খুলে আমার আরও বেশকিছু ছবি পাবলিকলি আপলোড করে এবং বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে সে ছবি ও ভিডিওগুলি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে বুঝতে পারি মওদুদ আহমদ আইডিটি আসলে শাকিল আহম্মদের। এটি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের আইডি নয়। পরে গত ৩১ জানুয়ারি পল্টন থানায় একটি সাধারণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। জিডি নম্বর-২০৬৭।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ফোন করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কোনো ফেসবুক আইডি নেই। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সাইবার সিকিউরিটি আইনে এক নারী আইনজীবী মামলা করেছে। মামলাটি আমরা আজকেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন ডিবি তদন্ত করবে এই মামলা।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, মওদুদ আহমদের নামে আইডিধারী ব্যক্তি শাকিল আহম্মদকে চিহ্নিত করা গেছে। তাকে ধরতে এরইমধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান চলছে। যে কোনো সময় শাকিল আহম্মদকে গ্রেফতার করা হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন