বিজ্ঞাপন

মতিয়া ইস্যুতে ভুল স্বীকার করল শেরপুর জেলা আ’লীগ

May 22, 2018 | 9:30 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: শেরপুর জেলা কমিটি থেকে সংসদ সদস্যসহ ৫ জন নেতাকে বহিষ্কার ও শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা ভুল ছিল- কেন্দ্রের কাছে জানিয়েছে নেতারা। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ।

মঙ্গলবার (২২ মে) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের এই সংক্রান্ত বৈঠক হয়।

এর আগে জেলার নেতাদের ঢাকায় আসতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন। আর শেরপুর জলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, সহ-সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, নাজিমুল হক, নির্বাহী সদস্য বদিউজ্জামান বাদশা, শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁন, নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ। তবে বৈঠকে মতিয়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতারা শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দলীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে উপস্থিত তিন নেতার মোবাইল ফোনে কল করা হলে কেউ রিসিভ করেননি। শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক কল রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এই প্রসঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে বৈঠকে উপস্থিত নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ওরা ভুল করেছে। মিটিংয়ে আমাদের সবাইকে আগের মতোই থাকার কথা বলেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যান্যদের বহিষ্কারের বিষয়টিকে চরম ভুল বলে সবাইকে সতর্ক করে দেন।

বিজ্ঞাপন

গত শনিবার শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নালিতাবাড়ী উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁনসহ পাঁচজনকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কার অন্য চারজন হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল হক ও নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ।

নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে অব্যাহতি দিয়ে তার জায়গায় ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. বুরহান উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পর পরই জেলা আওয়ামী লীগ অলিখিতভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিক ও শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মাঝে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী গত ১৫ বছরে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো বৈঠকে অংশ নেননি। পরপর তিন বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় মতিয়া চৌধুরীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক পত্রে দেশের সব জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়, কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া উপজেলা কমিটি ভাঙা বা স্থগিত করা যাবে না।

গত শনিবার রাতে শহরের চকবাজার জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিকের সভাপতিত্বে সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫২ জন উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় পর পর পাঁচ সভায় অনুপস্থিত থাকায় দলের পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কেউই জবাব দেননি। ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ১নং সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পর পর পাঁচ সভায় অনুপস্থিত থাকায় তার বিষয়ে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সভার কার্যবিবরণী পাঠানো হয়। এই কারণে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ।

মতিয়া চৌধুরীকে বহিষ্কারের বিষয়টি গণমাধ্যমে ফলাও হলে জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করে, হুইপ আতিকের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করে।

সারাবাংলা/এনআর/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন