বিজ্ঞাপন

মধুরেণ!

May 19, 2018 | 4:09 pm

। সন্দীপন বসু ।

বিজ্ঞাপন

রাজার বাড়িতে আজ বিয়ে। বিয়ে খোদ ইংল্যান্ডের যুবরাজের ছোট ছেলে হ্যারির। আমাদের তো রাজার শাসন গেছে সেই কবেই! অর্ধপৃথিবীর অধিশ্বর এই ইংল্যান্ডের রাজারাও আমাদের শাসন করেছেন প্রায় দুইশ বছর। রাজত্বের পাট চুকেছে সে-ও আশি বছর হতে চলল। পাণ্ডববর্জিত এই দেশে বহুদিন আর পা পড়ে না রাজা-যুবরাজদের। তাই বলে এই আলোচিত বিয়েতে আমাদের আগ্রহের খামতি আছে তা কিন্তু নয়। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে বহুজনের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আজকের এই রাজকীয় বিয়ে অনুষ্ঠান।

তাৎক্ষণিক খবর জানানোর এই সময়ে সবারই এই বিয়ের নানা দিক জানা। কি নেই এই বিয়েতে! কতো শত আয়োজন। নবহতে হাতি-ঘোড়া-সানাইয়ের দিন তো আর নেই। বদলে যা আছে তাও বা কম কিসে। সানাইয়ের বদলে ট্রাম্পেট, ফুল বিছানো চাদরের জায়গায় লাল গালিচা আর হাতি-ঘোড়ার বদলে হাল মডেলের রোলস রয়েস, জাগুয়ার আর লিমুজিন। আর আছে রাজকীয়  বিয়ের সাক্ষী হতে রাস্তায় মানুষের ঢল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে অনেকেই এসেছেন এই বিয়ের সাক্ষী হতে। ভরে গেছে লন্ডনের অধিকাংশ হোটেল-মোটেল। উইন্ডসরের গির্জা সেইন্ট জর্জেস চ্যাপেলের সামনে শুক্রবার রাত থেকেই অনেকেই তাঁবু খাটিয়ে অপেক্ষা করছেন মাহেন্দ্রক্ষণের। অপেক্ষা খুব কাছ থেকে মেগান মেরকেল আর প্রিন্স হ্যারিকে দেখার।

বিজ্ঞাপন

রাজকীয় এই বিয়েতে অবশ্য আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা বেশি নয়। বরাবরের মতোই রানি এলিজাবেথ নিজে অতিথিদের নিমন্ত্রপত্র পাঠিয়েছেন। বড় নাতি প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেট মিডলটনের সময় তিনি এক হাজার ৯০০ নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন। প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মেরকেলের ক্ষেত্রে সেই হিসাবটা অবশ্য এখনো জানা যায়নি। তবে পাপারাৎজ়িরাও কম যান না। রাজবাড়ির হেঁশেল থেকে জোগাড় করে ফেলেছেন নিমন্ত্রিতদের খবর। দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, রাজপুত্রের বিয়েতে অবশ্য পুরো দেশের কবজি ডুবিয়ে খাবার বিষয়টা থাকছে না। কেবল দুই হাজার নিমন্ত্রিত অতিথিই পাবেন রাজহেঁশেলের খাবার। বাকিরা খাবেন নিজ নিজ খরচেই। আর এই খাওয়া উপলক্ষে পিকনিক বাক্সেটের বিক্রি বেড়েছে লন্ডন শহরে।

বিজ্ঞাপন

তবে রাজবাড়িতে না খেতে পেলেও রাজপুত্র আর রাজবধূকে নিয়ে আগ্রহেরও কমতি নেই মানুষের। লন্ডনের অলিগলি থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাতায় পাতায় চলছে এ আলোচনা। আলোচনা লক্ষ্য করলে, ৩৩ বছর বয়েসী রাজপুত্র হ্যারি সোনার টুকরোর খেতাবই পাবেন। ইটন কলেজ থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে যোগ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের রাজকীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ কোর ‘ব্লুজ অ্যান্ড রয়েলস’এ। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট পদমর্যাদা নিয়ে যুদ্ধ করেছেন আফগানিস্তানে। এখন তিনি রাজকীয় বিমানবাহিনীর অ্যাপাচি দলের লেফটেনেন্ট।

রাজবধূ মেগান মেরকেলও কম বিখ্যাত কেউ নন। হলিউডের এ অভিনেত্রী যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়। টিভি সিরিয়াল ও চলচ্চিত্র অভিনয়ের পাশাপাশি জড়িত আছেন বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। মেগান জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ভিশন কানাডা ও ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ডর বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে এই রমণিশ্রেষ্ঠাকে নিয়েও রক্ষণশীল ইংল্যান্ডবাসীর তুমুল আপত্তি ছিল। কারণ আর কিছুই নয়, ৩৬ বছর বয়েসী এ অভিনেত্রীর সাবেক স্বামী ও বংশপরিচয়। ২০১১ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক ট্রেভর এঙ্গেলসনকে বিয়ে করেছিলেন মেগান। ৪১ বছর বয়সী ট্রেভরের সঙ্গে অভিনেত্রী মেগানের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০০৪ সালে। কিন্তু সাত বছর প্রেমের পর বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। শেষ খবরে পাওয়া মেগান-হ্যারির বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে খোঁজ মিলছে না ট্রেভরের। সবারই ধারণা সাবেক স্ত্রীর বিয়ের ক্ষণে গণমাধ্যমের চোখ এড়াতেই তাঁর এই নিরুদ্দেশ যাত্রা।

এদিকে রাজপরিবারসহ প্রিন্স হ্যারি ও মেগানের এজেন্টরা বারবারই সংবাদমাধ্যমকে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁদের  ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে প্রকাশ না করতে। কিন্তু পাপারাৎজ়িদের আগ্রহের তো আর কমতি নেই। তারকা-জীবনের সব খবরের প্রতি সাধারণ মানুষের অসীম তৃষ্ণা থেকেই পাপারাৎজির জন্ম। সেজন্যই হয়তো মানুষের মুখের কথায় যেমন লাগাম পরানো যাচ্ছে না- তেমনি এজেন্টের কথায় ক্ষান্ত হচ্ছেন না পাপারাৎজ্জিরাও। ছোট ছোটো সংবাদও বেরিয়ে আসছে রাজবাড়ির অন্দরমহল থেকে।

বিজ্ঞাপন

আর এভাবেই বেরিয়ে এসেছে বিয়ের আগেভাগে মেয়ের বিয়ের পোশাক নিয়ে পাপারাৎজ়ির সামনে মেগানের বাবা টমানের ‘বিশেষ পোজের’ খবর। যুক্তরাজ্যে ট্যাবলয়েড দ্য সান টমাসের এ ছবি ও খবর প্রকাশ করে। এর পরপরই অভিযোগ ওঠে, ছবি তোলার বিনিময়ে অর্থ নিয়েছেন তিনি। প্রথমে সে কথা অস্বীকার করলেও পরে মেনে নেন টমাস। শেষমেশ গোটা বিষয় নিয়ে হইচই হতে তিনি জানিয়ে দেন, মেগানের বিয়েতে আসছেন না। আর গতকাল মেগান বিবৃতি দেন, অসুস্থ থাকায় বিয়েতে আসতে পারছেন না তার বাবা টমাস মেরকেল।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিয়েতে মেগানের পরিবারের পক্ষ থেকে একমাত্র তার মা-ই উপস্থিত থাকবেন।  এই বিয়েতে দাওয়াত দেওয়া হয়নি মেগানের সৎ ভাইবোনদের কাউকেই। জানা গেছে মেগানের অনাগ্রহের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। অবশ্য দাওয়াত না পেয়েও মেগানের বহু আত্মীয়স্বজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে এসেছেন লন্ডনে। অনেকেই অংশ নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের বিশেষ শো-গুলোতে।

এতো আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যেও এটাই সত্যি যে গোটা ইংল্যান্ডে এখন বিয়ের খুশি। শেষ পাওয়া খবরে দেশটির আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ সারাদিন আকাশ থাকবে রৌদ্রজ্জ্বল। আর এই রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়ায় ছোট রাজপুত্র আর যুবরানির বিয়ের খুশিতে মেতেছে দেশটি।

সারাবাংলা/এসবি/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন