বিজ্ঞাপন

মহাকাশজয়ের অপেক্ষায় ‘বঙ্গবন্ধু-১’

May 12, 2018 | 12:31 am

। সারাবাংলা ডেস্ক ।

বিজ্ঞাপন

মহাকাশে যাত্রা শুরুর কয়েক সেকেন্ড আগে থেমে যাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এর উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি আবারও শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশের এই স্বপ্ন মহাকাশ পানে ছুটবে শুক্রবার দিবাগত রাত ২ টা ১৪ মিনিটে। রাতে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে প্রস্তুতি শুরু হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময় রাত বারোটায় ড. শাহজাহান মাহমুদ মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সকল প্রস্তুতিই ভালো। সবকিছুই ভালোমতো এগুচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকের মতো প্রস্তুতি আবারও শুরু হয়েছে। যা যা করার দরকার সকাল থেকেই তা তারা শুরু করেছে।’ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি স্পেস সেন্টারের ভেতরে আছেন বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গতকাল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ওড়ার সময় নির্ধারিত ছিল। মহাকাশে স্বপ্নযাত্রার মাহেন্দ্রক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে সতের কোটি মানুষের বাংলাদেশে অনেকের চোখ ছিল টিভি আর মোবাইলের পর্দায়। অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছিলেন বাংলাদেশের স্বপ্নের মহাকাশযাত্রার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের মহাকাশের স্বপ্নযাত্রার অপেক্ষা একদিন বাড়িয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স জানায় শুক্রবার একই সময়ে ওড়ার চেষ্টা করবে স্যাটেলাইটটি।

স্পেসএক্স তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, প্রথম দফায় ওড়ানো যায়নি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। শেষ মুহূর্তে কারিগরি জটিলতায় উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়েছে। ওড়ানের জন্য রাখা রিজার্ভ ডে আজ শুক্রবার একই সময়ে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ আবারও উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মহাকাশে পাড়ি জমানোর কথা ছিল। পরে সেই সময় বাড়িয়ে ৩টা ৪৭ মিনিটে নির্ধারণ করা হয়। পরে সময় আরও ১৫ মিনিট বাড়িয়ে ৪টা ২ মিনিটে উৎক্ষেপণের কথা বলা হয়। সবশেষে ৪টা ৭ মিনিটে উৎক্ষেপণের স্থগিতের কথা জানায় স্পেসএক্স।

ইউটিউবে, টেলিভিশনের পর্দায় চোখ বিশ্বজুড়ে বাঙালির। এ যেন স্যাটেলাইটের মহাকাশযাত্রা নয়, বাঙালির মহাকাশযাত্রা। অনেকে আবার নিজের এলাকায় টাঙানো বড় পর্দায় প্রত্যক্ষ্য করবেন বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’কৃত্তিম উপগ্রহের মহাকাশের পথে রওনা হওয়ার মূহুর্তটি। তবে উৎক্ষেপণের ঠিক ৫৯ সেকেন্ড আগে থেমে যায় স্যাটেলাইটের কাউন্টডাউন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যাওয়ার পর ফ্লোরিডা থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে এসে উৎক্ষেপনের সময় একদিন পিছিয়ে গেছে। পুরো প্রক্রিয়াটিই কম্পিউটারেই ঘটে থাকে। ওরা হঠাৎ মনে করে যে হয়তো কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে, তখন থামিয়ে দেয়। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়, এখানে মানুষের হাত নেই। কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে স্যাটেলাইট বা রকেটে কোন সমস্যা নেই।’

বিজ্ঞাপন

ড. শাহজাহান মাহমুদ আরো বলেন, ‘মাঝেমধ্যে লাস্ট কাউন্টডাউনের পরেও থেমে যায়। লাস্ট কাউন্টডাউট ৭, ৮ ও ৯ ধাপে যাওয়ার পরও অনেক সময় থেমে যায়। তবে সবচেয়ে খুশির খবর এই যে, এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই আছে। নতুবা এতোটা পর্যন্ত যাওয়া যেত না।’

এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপন পিছিয়ে যাওয়ার পর পরেই  উৎক্ষেপনস্থল কেপ কেনেডিতে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‌স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্ত পুরোপুরি কম্পিউটারে নিয়ন্ত্রিত হয়। এসময় যদি স্যাটেলাইটের কোনো অংশ স্বাভাবিক নয় বলে কম্পিউটার খুঁজে পায়, তাহলে উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়।

সজীব ওয়াজেদ জয় আরো লিখেন, উৎক্ষেপণের মাত্র ৪২ সেকেন্ড আগে তা বাতিল করা হয়েছে। স্পেসএক্স সবকিছু যাচাই-বাছাই করবে এবং শুক্রবার একই সময়ে উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা আবারো শুরু হবে। ঝুঁকি নিতে না চাইলে এটা রকেট উৎক্ষেপণের সময় একেবারে স্বাভাবিক  ঘটনা।

নিজেদের ওয়েবসাইটে স্পেসএক্স জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের প্রোপিল্যান্ট লোডিং ভ্যারিফাই, আরপি-১ (রকেট জ্বালানি) লোডিং, প্রথম পর্যায়ের লিকুইড অক্সিজেন (এলওএক্স) লোডিং, দ্বিতীয় পর্যায়ের এলওএক্স লোডিং, লঞ্চ পূর্ববর্তী ফ্যালকন-৯ এর ইঞ্জিন শীতলীকরণ, চূড়ান্ত উৎক্ষেপণের আগে ফ্লাইট কম্পিউটার চেক, প্রপিল্যান্ট ট্যাংক প্রেশারাইজেশন সম্পন্ন হয়েছে।  স্পেসএক্সের লঞ্চ ডিরেক্টর উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত ভেরিফিকেশন গিয়ে পিছিয়েছে উৎক্ষেপনের সময়। শেষে উৎক্ষেপণের কাউন্টডাউনের শেষপর্যায়ে গিয়ে একদিন পিছিয়ে যায় বঙ্গবন্ধু-১ এর যাত্রা।

স্পেস এক্স ওয়েবসাইটে আরো জানিয়েছে এর উৎক্ষেপণযান বা রকেট ফ্যালকন-৯ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে মহাকাশে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত অরবিট প্লটে স্থাপন করবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।

 

সারাবাংলা/ ইএইচটি/ এসবি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন