বিজ্ঞাপন

মাঠভরা ধান তবুও কৃষি নিয়ে শঙ্কা

December 29, 2017 | 8:53 am

মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

চরকুকরী মুকরী থেকে ফিরে : ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চরকুকরী মুকরীতে আবাদি জমির পরিমাণ ২ হাজার ৬৪ হেক্টর। যার সিংহভাগেই আবাদ হয় ধান। চরের প্রতিটি বাড়ির উঠানে এখন নতুন ধানের মো-মৌ গন্ধ। গৃহস্থবাড়ির ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে নারীরাও ব্যস্ত ধান মাড়াইসহ নানা কাজে।

আমীনপুরের এমনই এক বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল— গৃহস্থ বৃদ্ধ ওয়াজী উদ্দীন উঠানের একপাশে তাফালে ধান সিদ্ধ করছেন। উঠানে ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিরা ধান ভাঙানোর কাজে ব্যস্ত। ক্যামেরা হাতে দেখে বাড়ির লোকেরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তাদের জানালাম, ‘আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। ধান আর কৃষিকাজ নিয়ে কথা বলতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

এরপর বৃদ্ধ ওয়াজী উদ্দীনের সঙ্গে কৃষি আর চরের মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে  দীর্ঘ আলাপ হলো। আমীনপুরের বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাড়িতে-বাড়িতে ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে। এবার ফসলের আবাদ কেমন হলো? —এমন প্রশ্নে তিনি জানালেন, নিজের দুই একর জমির সঙ্গে অন্যের কিছু জমি আবাদ করেছেন তিনি। ফসল খুব ভালো হয়েছে। তবে খরচ মিটিয়ে গায়ে-গায়ে থাকবে।

বিষয়টি পষ্ট করতে বললে তিনি যা জানালেন তা হলো— চরে যে পরিমাণ আবাদি জমি সে অনুপাতে কৃষি-শ্রমিক নেই। যাদের পাওয়া যায় তাদের দুই বেলা খাওয়ানোর পর জনপ্রতি ৪৫০ টাকা মজুরি দিতে হয়। তবে চরের বাইরে থেকে শ্রমিক আনলে খরচ আরও বেশি। তাদের তিন বেলা খাওয়ানো কেবল নয়, থাকারও ব্যবস্থা করতে হয়। এতে করে সার, ওষুধ আর বীজের খরচ এবং শ্রমিকের মজুরি দিয়ে যে ধান পাই তা দিয়ে মোটামুটি চলে।

এত খরচ তাহলে কেন আবাদ করেন? —এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদা কৃষক ছিলেন। আমিও এই কাজই করেছি। এখন জীবনের শেষ সময়। তাই বাড়ির উঠানে ধান না দেখলে বুকের মধ্যে কষ্ট হয়। ভাবতেই পারি না আমার বাড়িতে নতুন ধান আসবে না। সারাজীবন নিজের হাতে আবাদ করা ধানের ভাত খেয়েছি এখন বাজার থেকে চাল কিনে খাব সেটা কী করে হয়!’

বিজ্ঞাপন

চুলোয় শুকনো খড়কুটো ঠেলে দিচ্ছেন ওয়াজী উদ্দীন। টিনের তাফাল থেকে সিদ্ধ ধানের ধোঁয়া উড়ছে। বললেন, ‘এখনো শরীরে শক্তি আছে তাই জমি আবাদ করার সাহস পাই। কিন্তু কত দিন পারব জানি না।’ বলতে বলতে কিছুটা আনমনে হয়ে গেলেন তিনি।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘আমার চার ছেলে, চার মেয়ে। ছেলেদের কেউই কৃষি কাজ করে না। ছোট ছেলে নোয়াখালীতে চাকরি করে। বাকি তিনজনের দুইজন আলাদা ঘর তুলে এ বাড়িতেই থাকে। অন্যজন পাশে বাড়ি করেছে। তারা ছোট-খাট ব্যবসা-বাণিজ্য করে। নগদ টাকা আয় করে। আমি মরে যাওয়ার পর এ বাড়িতে যে কৃষি কাজ হবে না তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।’ মুহূর্তে চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন বৃদ্ধ।

গোঁধূলি নেমে এসেছে। বহু দূরে লাল থালার মতো সূর্যটা মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে। আমীনপুরের বিস্তীর্ণ মাঠে তখনো ধানকাটার দৃশ্য চোখে পড়ছে। এ দৃশ্য একেবারেই কৃষি প্রধান গ্রাম-বাংলার। ওয়াজী উদ্দীনের ছেলেদের মতো সবাই যদি কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় মন দেয়, তবে এই ধানকাটা কিংবা ধানের বোঝা মাথায় বাড়ি ফেরার যে সৌন্দর্য তা কাদের মাধ্যমে দেখবে দেশের মানুষ?  দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কৃষিকাজে থাকা-না থাকার বিষয়ে ভাবনা মাথায় নিয়েই ফিরে এলাম গন্তব্যে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমএস/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন