বিজ্ঞাপন

‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমাদের জিততেই হবে’

July 22, 2018 | 9:07 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশে মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে আমাদের জিততেই হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে মাদকবিরোধী বিজ্ঞাপন (টিভিসি) ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা অনুষ্ঠান’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মিলে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তাই আমরা জঙ্গিবাদ নির্মূলের ন্যায় মাদককেও নির্মূল করব। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে আমাদের জিততেই হবে।’

বিজ্ঞাপন

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন ক্ষমতায় এলেন তখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঠুঁটো জগন্নাথের মতই ছিল। কিন্তু তিনি সেটিকে ঢেলে সাজিয়ে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এখন আমরা সেটিকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান সফল করছি। শুধু তাই নয় মাদকমুক্ত করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে মাদকসেবীদের নিরাময় ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াও এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মাদক শুধু পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমস্যা মনে করলে হবে না। এটি সামাজিক সমস্যা। সবাই সচেতনার সঙ্গে এটিকে প্রতিহত করতে হবে। নইলে আমরা পথ হারাব। এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। এ যুদ্ধ সেদিন থামবে যেদিন আমরা দেখব সেই বাংলাদেশকে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি। নেশাখোরেরা ভুলেই গেছে ফেনসিডিল নামে কিছু আছে। এখন নতুন আসছে ইয়াবা। এ ইয়াবায় তরুণরা সব হারাচ্ছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই অবৈধ ব্যবসা সেখানেই অবৈধ অর্থ, অবৈধ অস্ত্র। সুতরাং আগে মাদক নির্মূল জরুরি। সারা পৃথিবীতে দেখবেন মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক যুদ্ধেই নামতে হয়েছে। কলম্বিয়া আর সেই কলম্বিয়া নেই। আমরাও সেই জায়গাটিতেই যাব। আমরা যেমন করে জঙ্গিবাদ দমন করেছি তেমনিভাবে মাদকও দমন করা হবে। তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বলছি, আত্মসমর্পণ করুন। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের অনেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তবে আমরা কাউকে মারছি না। অনেক তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে গেলেই চ্যালেঞ্জ করেন, অস্ত্র ব্যবহার গুলি চালান, যে কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জেলখানার ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার। কিন্তু বর্তমানে ৯০ হাজার ক্রস হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪৩ হাজারই মাদক সংশ্লিষ্ট কারণে গ্রেফতারের পর কারাগারে। তারা যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদের ন্যায় মাদকবিরোধী প্রচারণা দরকার। বাংলাদেশকে আমরা সেই জায়গাতেই নিয়ে যেতে চাই, যেই স্থানটিই সবাই আমরা স্বপ্ন দেখি।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘শুধু অভিযান নয়, মাদকবিরোধী প্রচারণা আরও বেশি দরকার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর প্রতিষ্ঠার আগে পুলিশ এককভাবে মাদকবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে। মাদককে শুধুমাত্র পুলিশি সমস্যা ধরে নিলে চলবে না। এটা সামাজিক সমস্যা, ব্যাধি। মাদকবিরোধী ভূমিকায় সব শ্রেণির পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত হতে হবে। একটি পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য একজন মাদকসেবী থাকলেই যথেষ্ট। অনেক বাবা-মা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে জেলে দিন, যেন ৫/৬ বছর জেল থেকে বের হতে না পারে।’

‘মাদক উৎপাদন, কেনা বেচা, বিপণন, নিরাময়, পুনর্বাসন সবকিছুকেই মাদকবিরোধী ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৬৪ জেলার সরকারি হাসপাতালে যদি ১০টি করে বেড সংরক্ষিত রেখে মাদকসেবীদের চিকিৎসা দেওয়া যায় তবে কার্যকরী ভূমিকায় আসবে। কারণ দেশের প্রায় ২৬টি জেলায় কোনো মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র নেই’ বলেন আইজিপি।

অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন,  ‘কক্সবাজারে মাত্র ২৩ লাখ লোকের বসবাস। সেখানে কোনও কল-কারখানা নেই। তাহলে প্রতিমাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শতকোটি টাকার লেনদেন যায় কোথায়?’ এতে আমরা সন্দেহ করছি, এটা অবৈধ ও মাদক সংশ্লিষ্ট লেনদেন। অন্তত ২ মাসের জন্য কক্সবাজারমুখী সব ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ রাখুন। আমরা বিষয়টি দেখতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘গত ৮০ দিনে ১০২ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য জব্দসহ প্রায় ১০ হাজার লোককে মাদক সংশ্লিষ্টতায় গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ সময়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮৭৭ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ১ হাজার ৭১৩টি নিয়মিত মামলায় ২ হাজার ৯৫৯ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া, ১ হাজার ৩৮ জনকে ৪০ লাখ ৭২ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ।

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন