বিজ্ঞাপন

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ‘পাকিস্তান আর্মির সাবেক সদস্য বিচারের আওতায়’

April 24, 2018 | 4:15 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে (৬৯) গ্রেফতার করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রভাবশালী আসামিদের মতো এ আসামিও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি বিভিন্ন সময় সাক্ষীদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। পাকিস্তান আর্মির একজন সাবেক সদস্য হিসেবে তাকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে।’

মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের পরিচয় তুলে ধরে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সারাবাংলাকে জানান, ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যে হত্যা গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে সেই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে। আরও অনেক ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি আমরা। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আসে তদন্ত সংস্থায়। সেই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, তদন্তকালে দেখা যায় আসামি ওয়াহিদুল হক বিভিন্নভাবে আমাদের সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় তদন্ত সংস্থার আবেদনের কারণে আমরা ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতারের আবেদন করি। আদালত ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গ্রেফতারের আদেশ দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল ওয়াহিদুল হককে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।’

এর আগে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সকালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা জারির পর এ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫শ থেকে ৬শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালদের মেশিনগান দিয়ে হত্যার ঘটনার সঙ্গেও তার জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানান তুরিন আফরোজ।

তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন। পরে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে রংপুর সেনা নিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন।

১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লা এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার। পরে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর‌্যন্ত ঢাকা মেট্রো পলিটনে অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ পালন করেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআই এর পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সাল তিনি পুনঃনিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমএইচ/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন