বিজ্ঞাপন

মানবতাবিরোধী অপরাধ: মৌলভীবাজারের আকমলসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

July 17, 2018 | 11:38 am

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের রাজনগর থানার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আকমল আলী তালুকদারসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।

চার আসামির বিরুদ্ধে দুই ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে। গণহত্যার প্রথম অভিযোগে চারজনের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হত্যা ও অপরাধ সংঘটনের দ্বিতীয় অভিযোগে তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

১৬০ পৃষ্ঠা রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। দ্বিতীয় অংশ পাঠ করেন বিচারপতি আমির হোসেন এবং রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে আকমল আলী তালুকদার কারাগারে রয়েছেন। বাকি তিন আসামি আব্দুর নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (৬২), আনিছ মিয়া (৭৬) ও আব্দুল মোছাব্বির। এ তিন আসামিই পলাতক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত : রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, সমস্ত অপরাধের শীর্ষ অপরাধ হলো গণহত্যা। আর রাজানগরে গণহত্যাসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা কেবল একটি জায়গায় কয়েকজন মানুষকে হত্যা করা নয়, পুরো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যারা এ অপরাধ করেছে তারা মানবতার শত্রু।

যা বললেন প্রসিকিউটর: রায়ের পর এ মামলার প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। আজ তার রায় হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি ছিল গণহত্যার।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকোলে মৌলভিবাজারে রাজনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫৯ জনকে বেঁধে পিটিয়ে,গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ওই গ্রামে যতগুলো বাড়িঘর ছিল তার সবগুলোই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ওই গ্রামের যে কজন মহিলা ছিল সবাইকে ধর্ষণ করেছিল।

এই ঘটনায় প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এ মামলার প্রসিকিউটর হায়দার আলী বলেন, ‘দ্বিতীয় অভিযোগটি ছিল অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন এবং হত্যার। রাজনগরের পশ্চিমবাগ গ্রামের চক্রবর্তীদের বাড়িতে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে দুইজনকে ধরে নিয়ে যায় আসামিরা। এই দুইজনের আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছি। তাদের লাশের সন্ধান পায়নি স্বজনেরা।

এই অভিযোগটিও প্রসিকিউশন সন্দোহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে। ফলে ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগে আসামিদের আমৃত্যু কারাভোগের আদেশ দিয়েছে। সব মিলিয়ে রায়ে সন্তুষ্ট। ন্যায় বিচার পেয়েছি।

এদিকে পলাতক তিন আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আবুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামিরা আত্মসমর্পণ করে যদি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, তাহলে তারা ন্যায় বিচার পাবে এবং খালাস পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

গত ২৭ মার্চ এ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর দীর্ঘ প্রায় চার মাস পরে মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী, সাইয়্যেদুল হক সুমন ও শেখ মুশফেক কবীর। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। পলাতকদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন আবুল হোসেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর গত বছরের ৭ মে এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা করে চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি এ বছরের মার্চ মাসে শেষ হয়। এরপর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর ওই চার জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রাম থেকে আকমল আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন