বিজ্ঞাপন

মাসাকাদজা-রাজার কাছে ম্লান দুই পেরেরা

January 17, 2018 | 8:03 pm

মোসতাকিম হোসেন, মিরপুর থেকে

বিজ্ঞাপন

জিম্বাবুয়ে জানত, উইকেট নিতে পারলেই তাদের সুযোগ আছে। শ্রীলঙ্কা জানত, অন্তত একজনকে থাকতে হবে শেষ পর্যন্ত। বিপিএল মাতিয়ে যাওয়া থিসারা পেরেরা হচ্ছেন সেই একজন, সে অনুযায়ীই লেখা হচ্ছিল চিত্রনাট্য। কিন্তু জয় থেকে যখন মাত্র ১৬ রান দূরত্ব পেরেরা আউট হলেন, গড়বড় হয়ে গেল সবকিছু।

মিরপুরে প্রায় দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে হিমেল সন্ধ্যায় যে রোমাঞ্চ ছড়াল, সেটাও তো লেখা ছিল চিত্রনাট্যে। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের প্রথম ম্যাচে এমন অসহায় আত্মসমর্পণের পর। তবে আজ উইকেটটা অনেকটাই ব্যাটিং-বান্ধব হয়ে উঠল। মিরপুরে শততম ওয়ানডেতে সেই ব্যাটিং দেখার জন্য অবশ্য দর্শক ছিলেন হাতেগোণা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের হ্যাটট্রিক জয়টা তাই অনেকটা চুপিসারেই এলো। ১২ রানের জয়ে আগের ম্যাচের দুঃস্বপ্নটাও ভুলল।

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কি এমন কিছু কল্পনা করেছিলেন? এই মিরপুরে কম সুখস্মৃতি নেই তার, স্নায়ুচাপের মুহূর্তও কম আসেনি। তবে মুদ্রার অন্য পিঠ থেকে সবকিছু দেখতে হচ্ছে এই প্রথম। গ্যালারিভর্তি দর্শকের স্লোগান এখন আর সঙ্গে নেই। এখন তিনি শ্রীলঙ্কার কোচ। চেনা অঙ্গনে নতুন করে ফেরাটা এমন ভুলে যাওয়ার মতো হবে, সেটা কি ভেবেছিলেন?

বিজ্ঞাপন

অথচ পেরেরা একাই জিতিয়ে দেবেন বলে মনে হচ্ছিল। পেরেরা যখন ক্রিজে এসেছেন, শ্রীলঙ্কা ১৮১ রানে তখন হারিয়ে ফেলেছে ৫ উইকেট। জয়ের জন্য তখনো করতে হবে ১০০ বলে ১১০ রান। খুব কঠিন কিছু নয়, আবার খুব সহজও নয়।

কিন্তু খানিক পরেই গ্রায়েম ক্রেমারের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে গেলেন আসিলা গুনারত্নে। ১৯৪ রানে শ্রীলঙ্কা হারাল ছয় উইকেট। পেরেরা ক্রেমারের এক ওভারেই নিলেন ১৬ রান, বুঝিয়ে দিলেন আজ ত্রাণকর্তা তাকেই হতে পারে। ২২৪ রানে হাসারাঙ্গার বিদায়ে যখন চলে এলো টেল-এন্ডারও, দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেল পেরেরার।

কিন্তু সেই চাপে নুইয়ে যাননি। রান রেট তখন অনেকটাই কমে এসেছে, কিন্তু থিসারার ব্যাট যেন খাপখোলা তলোয়ার। তোপটা ক্রেমারের ওপর দিয়েই গেছে বেশি, পরে তাকে এক ওভারেই মেরেছেন দুইটি ছয়। ফিফটি পেয়েছেন মাত্র ২৯ বলে। সবকিছুই ঠিক ছিল, কিন্তু টেল-এন্ডারদের নিয়ে জয়টা এনে দেবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু চাতারার বলে পুল করতে গিয়েই আউট হয়ে এলেন, ৩৭ বলে ৬৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটাও বিফলে গেল।

বিজ্ঞাপন

শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ সরাসরি দেখুন সারাবাংলা.নেটে

অথচ ইনিংসের শুরুতে মনে হচ্ছিল, কুশল পেরেরা ২৯০ রানের লক্ষ্যটা সহজ বানিয়েই ছাড়বেন। প্রথম দুই বলে পর পর দুই চারে আভাস দিয়েছিলেন বড় কিছুর। পরের ওভারে আরও দুই চার, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পেরেরাও তখন উড়ছিলেন। কিন্তু থারাঙ্গা আউট হয়ে গেলেন ১১ রান, একটা ধাক্কা খেল শ্রীলঙ্কা। পরের ওভারেই ফর্মের জন্য ধুঁকতে থাকা কুশল মেন্ডিস আউট হয়ে গেলেন কোনো রান না করেই। ম্যাথিউজ শুরু থেকেই বেশ সতর্ক ছিলেন, অন্য পাশে পেরেরা অবশ্য সুযোগ পেলেই রান তুলছিলেন। শ্রীলঙ্কার রান রেটের চাকাটা সচল ছিল ভালোমতোই। ৩২ বলেই ফিফটি পেয়ে গেলেন কুশল পেরেরা, শ্রীলঙ্কা এগিয়ে যাচ্ছে জয়ের দিকে।

এর মধ্যে ৫৭ রানেই একবার জীবন পেয়ে গেছেন পেরেরা। সেঞ্চুরি থেকে যখন ২০ রানের দূরত্বে, তখনই সিকান্দার রাজার বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেলেন। ৮৩ বলে ৮০ রানের ইনিংসটা অবশ্য গড়ে দিয়েছে জয়ের ভিত। কিন্তু ১৫৭ রানে অধিনায়ক ম্যাথিউজকেও হারাল শ্রীলঙ্কা। দীনেশ চান্ডিমাল শুরুটা করেছিলেন দারুণ, কিন্তু ৩৩ বলে ৩৪ রান করার পর কাইল জার্ভিসের দারুণ একটা বল বেল ফেলে দেয় তার। থিসারা নেমেছিলেন তখনই, দলকে প্রায় জয়ের বন্দরেই নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত, তীরে এসে তরী ডুবে যাবে?

বিজ্ঞাপন

জিম্বাবুয়ের ২৯০ রান পর্যন্ত যাওয়ার মূল কৃতিত্বটা অবশ্য সিকান্দার রাজারই। আগের ম্যাচে ফিফটিটা পেয়েছিলেন অনেক সংগ্রাম করে, তবে আজ শুরু থেকেই দারুণ সপ্রতিভ। যখন ক্রিজে নেমেছিলেন ৭৩ রান করে আউট হয়ে গেছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। শুরু থেকেই আজ দারুণ খেলছিলেন মাসাকাদজা, অনেক দিনের চেনা মিরপুরে ফিরে সেঞ্চুরিটা আজ পেয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু রীতিমতো ব্যাখ্যার অতীত এক আত্মঘাতী শট খেলে দিয়ে এসেছেন নিজের উইকেট।

রাজা অবশ্য তার মতোই খেলছিলেন, শুরুতে ব্রেন্ডন টেলর কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু ১৬৯ রানে টেলর ফিরে যাওয়ার পর ওয়ালারকে নিয়েই এগিয়ে গেছেন। দুজন এরপর পরের ১০ ওভারে যোগ করেছেন ৫৮ রান। ওয়ালার আউট হয়ে গেলেও পিটার মুর সঙ্গ দিয়েছেন তাকে, ষষ্ঠ উইকেটে দুজন যোগ করেছেন আরও ৬১ রান। একটা সময় ৩০০’র আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ২৯০ রানে থেমে গেছে জিম্বাবুয়ে। মিরপুরে এর চেয়েও বেশি রান করে জেতার কীর্তি আছে বেশ কয়েকটি, কিন্তু কে জানত তখন এই রান প্রয়োজনের চেয়েও যথেষ্ট হয়ে যাবে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২৯০/৬ (সিকান্দার রাজা ৮১*, মাসাকাদজা ৭৩, টেলর ৩৮, সলোমন মিরে ৩৪; গুনারত্নে ৩৭/৩, থিসারা ৪৩/২)
শ্রীলঙ্কা: ২৭৮/১০ (৪৮.১ ওভার) (কুশল পেরেরা ৮০, থিসারা পেরেরা ৬৪, ম্যাথিউজ ৪২, চান্ডিমাল ৩৪; তেন্দাই চাতারা ৩৩/৪, জারভিস ৫৬/২, ক্রেমার ৬২/২)
ফল: জিম্বাবুয়ে ১২ রানে জয়ী

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন