বিজ্ঞাপন

মিডিয়া পিছিয়ে ১ বছর ১ দিন, বিএনপি ১ বছর ২ দিন

March 31, 2018 | 6:34 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে বলে এফবিআই নিশ্চিত করেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎরিজার্ভ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে এফবিআই জানিয়েছে।’

শনিবার (৩১ মার্চ) সকাল ১১ টায় নয়াপল্টন কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এ বক্তব্যের পর একটু নড়চড়ে বসতে হলো। ভেতরে ভেতরে পুলকিত বোধ করলাম। কারণ, ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ রিজার্ভ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশের কাছাকাছি পৌঁছেছে এফবিআই— এ নিয়ে কিছু দিন ব্যস্ত থাকা যাবে। স্পেশাল নিউজ নিয়ে ভাবতে হবে না!

কিন্তু বিধি বাম! অফিসে ফিরে এফবিআই’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং রয়টার্স তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এ সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট বা নিউজ পাওয়া গেল না। তাহলে রুহুল কবির রিজভী পেলেন কোথায়? কীসের ভিত্তিতে তিনি এত বড় বোমা ফাঁটালেন?

সব কাজকর্ম ফেলে নয়াপল্টন কার্যালয় আঁকড়ে বসে থাকা বিএনপির সবচেয়ে ‘ডেডিকেটেড’ নেতা কি তাহলে কোনো ভুল তথ্য দিলেন? নাকি কেউ তাকে দিয়ে ভুল করালেন?— বিষয়টি জানার জন্য কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি!

বিজ্ঞাপন

তবে হ্যাঁ, তিনি কোনো ভুল করেননি। জাস্ট ১ বছর ২দিন পিছিয়ে আছেন! অবশ্য দায়টা তার একার নয়! আমাদেরও! অর্থাৎ আমরা যারা মিডিয়াতে কাজ করি, তাদেরও!

ঘটনা হলো, ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ল্যামন্ট সিলার ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সিকিউরিটি ফোরামের এক প্রোগ্রামে এফবিআই’র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

সে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই সাইবার ডাকাতদের নাম শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচারের ঘটনা ব্যাংকিং খাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া আঘাতের সব চেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে।’
এছাড়া ওয়াশিংটন থেকে এফবিআই’র একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এ অর্থ চুরির ঘটনা উত্তর কোরিয়া দায়ী থাকতে পারে এবং চায়নার মধ্যস্ততার সম্ভবনাও রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এক বছর আগে রয়টার্সে ছাপা হওয়া এই নিউজটিই ডেটলাইন চেক না করে শুক্রবার (৩০ মার্চ) বাংলাদেশের কয়েকটি মিডিয়া প্রকাশ করে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব যেহেতু কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই থাকেন। প্রতিদিন অন্তত একবার মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। তারও নতুন নতুন ইস্যু প্রয়োজন হয়। সুতরাং এত বড় ইস্যু তিনি ছাড়বেন কেন।
তাই হয়তো সকাল সকাল সংবাদ সম্মেলন ডেকে খুব জোসের সঙ্গে বললেন, ‘আমরা যে অভিযোগ করেছিলাম সেটিও এখন সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আমরা সংবাদকর্মীরাও ভাবলাম, ‘লে বাবা, নতুন ইস্যু। এটা নিয়ে কয়েকদিন ব্যস্ত থাকা যাবে। চাট্টিখানি কথা নয়!— ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ রিজার্ভ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশের কাছাকাছি পৌঁছেছে এফবিআই!’

‘বিশ্বের ইতিহাসে এত বড় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাটির তদন্ত প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী কেন এত বছর ধরে আটকিয়ে রেখেছেন?— এফবিআই এর রিপোর্টে সেটি এখন পরিস্কার। আওয়ামীক্ষমতাসীনরা সাধারণ মানুষের টাকা চুরির উন্নয়ন ছাড়া আর কোন উন্নয়নই করেনি। জনশ্রুতি আছে যে, রিজার্ভ চুরির পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি আছেন, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা সরকারের নেই। বাংলাদেশ নামক স্টেটের ওপরে সুপারস্টেট কার্যকর আছে বলেই জনগণের টাকা হাওয়াই মিলিয়ে যায়। এই সুপারস্টেটকারা, তা জনগণ জানে। তাদেরকে ঘাটলে নাকি সরকারের গদিও নড়ে যাবে’— বলেন রিজভী।

কিন্তু রুহুল কবির রিজভীর এমন চমৎকার গোছানো বক্তব্য যে ইস্যুতে, সেটি আসলে ১ বছর ২ দিন আগের! অর্থাৎ আমাদের মিডিয়া পিছিয়ে ১ বছর ১ দিন। আর দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি পিছিয়ে ১ বছর ২দিন। এভাবেই চলতে থাক। সবাই পিছিয়ে থাকলে কেউ তো আর পিছিয়ে থাকা নিয়ে কথা বলবে না! সবাই থাকবে উইন উইন পজিশনে!

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন