বিজ্ঞাপন

মি টু: নির্যাতনকারী বসদের নাম বলে দিলেন ভারতের নারী সাংবাদিকরা

October 9, 2018 | 4:15 pm

রোকেয়া সরণি ডেস্ক ।। 

বিজ্ঞাপন

এবার মি টু আন্দোলনে ভারতীয় নারী সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সাবেক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, সম্পাদক কিংবা ব্যুরো প্রধানের হাতে হয়রানির চিত্র তুলে ধরতে শুরু করেছেন। গত দুই তিনদিন ধরে একের পর এসব ঘটনা প্রকাশ স্যোশাল মিডিয়াকে আলোচনা সমালোচনায় গরম করে রেখেছে।

বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেতা নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে বলিউড অভিনেত্রী ও সাবেক মিস ইন্ডিয়া তনুশ্রী দত্তের করা যৌন হয়রানির অভিযোগের পর এবার একইধরনের অভিযোগ নিয়ে সরব হলেন নারী সাংবাদিকরা। সবার প্রথমে সাংবাদিক সন্ধ্যা মেনন তার টুইটার একাউন্টের মাধ্যমে প্রভাবশালী ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার হায়দ্রাবাদের রেসিডেন্ট এডিটর কেআর শ্রীনিবাসের বিরুদ্ধে দশ বছর আগে তাকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ আনেন। তিনি লিখেছেন, একদিন কাজের শেষে গভীর রাতে তাদের কয়েকজনকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রীনিবাস। সন্ধ্যার বাড়ি ছিল সবার শেষে। বাড়িতে পৌঁছে তারা যখন কথা বলছিলেন তখন শ্রিনিবাস সন্ধ্যার উরুতে হাত রাখেন আর বলেন যে তার স্ত্রী তাকে বুঝতে পারে না এবং তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা এরপর মানবসম্পদ বিভাগে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রিনিবাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাকে সন্ধ্যার অভিযোগ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।

সন্ধ্যার টুইটারের পর একের পর এক নারী সাংবাদিক শ্রীনিবাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

হাফিংটন পোস্টের সাবেক সম্পাদক অনুরাগ ভার্মার বিরুদ্ধেও তাদের কাছে নগ্ন ছবি চাওয়ার অভিযোগ করেছেন একের অধিক নারী।

শ্রীনিবাসের পর সন্ধ্যা একে একে মুম্বাইতে ডিএনএর সাবেক প্রধান সম্পাদক গৌতম অধিকারী, হিন্দুস্তান টাইমসের অন্যতম সম্পাদক প্রশান্ত ঝা-সহ বহু সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করে ফেসবুক ও টুইটারে।

সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষক সনোরা ঝা গৌতম অধিকারীর বিরুদ্ধে তাকে ১৯৯৫ সালে হয়রানি করার অভিযোগ করেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, তখন তার বাচ্চার বয়স মাত্র দুই মাস। গৌতম অধিকারি তাদের বেঙ্গালুরু অফিস পরিদর্শনে এসেছিলেন। কাজের ব্যপারে আলোচনা করতে সনোরা কে তার হোটেলের রুমে যেতে বলেন অধিকারী। হোটেলের রুমে যাওয়ার পর অধিকারি তাকে আরাম করে পা উঠিয়ে শুয়ে পড়তে বলেন। সোনরা সে কথা শোনেননি। এরপর অধিকারী সোনরার মুখ চেপে ধরে জোর করে চুমু খেতে খেতে বিছানায় শোয়ানোর চেষ্টা করেন। সোনরা তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে চলে এসেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

২৭ বছরের সোনরা তখন ধাক্কা খেলেও দুই মাসের বাচ্চা নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ক্ষমতাশালী বসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাননি। তাই তিনি আর কেস করেননি।

বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান থেকে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা যেহেতু প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের আদৌ বিচারের আওতায় আনা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে নানা মহলে।

ভারতে রিপোর্টার্স উইডাউট বর্ডার্সের প্রতিনিধি সাংবাদিক ঋতুপর্ণা চ্যাটার্জি বলেন, এক বছর আগে একটিভিস্ট রায়া সরকার ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেক্সুয়াল প্রিডেটর বা যৌন হয়রানি যারা করে তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। এখন একই জিনিসটা ভারতীয় মিডিয়াতেও শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বিষয়গুলো নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানে ভারতে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা দিয়ে ভিক্টিমরা কখনই সুবিচার পান না। কেসগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা না হতে হতে কেসগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। এভাবে ন্যায়বিচার দীর্ঘায়িত হয়।

ভারতে বিবিসির উইমেন্স ও সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর গিতা পান্ডের মতে ভারতে মিডিয়া হাউজগুলো এতটাই শক্তিশালী যে মাঝারি মাপের নাম সামনে আসলেও বড় বড় নামগুলো এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গীতা পান্ডে আরও বলেন, বহু মেয়ে এগিয়ে এসে অভিযোগ করলেও গত কয়েকদিন ধরে অভিযুক্তদের ভয় দেখানোর ফলে বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় অনেকেই অভিযোগ করে লেখা সেসব টুইট মুছে দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন যেসব অভিযোগ সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ সাক্ষী, স্ক্রিনশট বা অন্য প্রমাণ আছে সেগুলোতে আইনগত সুবিধা পাওয়া সহজ হলেও ভারতের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাকিগুলোর বিচারিক সুবিধার ব্যপারে তিনি নিশ্চিত নন।

তবে এসব অভিযোগ যারা করছেন তারা কতটা আইনগত সুবিধা পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও নারী সাংবাদিকরা যে নির্যাতনকারীদের নামসহ পরিচয় প্রকাশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে, তাকেই একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মানছেন অনেকেই।

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন