বিজ্ঞাপন

মেহেরপুরের আশীর্বাদ ‘কাজলা’ এখন অভিশাপ

January 15, 2019 | 7:29 am

।। রফিকুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

মেহেরপুর: খরস্রোতা কাজলা নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধতার গল্প একটা সময় ছিল মানুষের মুখে মুখে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের আগ্রাসী দখলে সেই কাজলা সৌন্দর্য হারিয়ে পরিত্যক্ত খালে পরিণত হওয়ার পথে। দীর্ঘদিন ধরে পুনঃখনন না হওয়ায় নাব্য সংকটেও ভুগছে মেহেরপুরের এই ঐতিহ্যবাহী এই নদী। স্থানীয়দের কাছে একসময়ের আশীর্বাদ কাজলা এখন যেন অভিশাপ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বড় নদী হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী। এই মাথাভাঙ্গা নদীর কাজিপুর ইউনিয়নের অংশ থেকে কাজলা নদীর উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল থেকে এ নদী হিন্দা মাঠ, নওয়াপাড়া, ভাটপাড়া, গাড়াডোব এবং সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রাম হয়ে ভৈরব নদীতে মিশেছে। মাথাভাঙ্গা নদীটি গঙ্গার শাখা নদী ভারতের জলঙ্গীর সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে কাজলা। কিন্তু নাব্য হ্রাস পাওয়ায় বর্ষাকালে নদীর দুই পাড়ের বেশিরভাগ আবাদি জমি পানিতে ডুবে যায়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় সেচের পানির সংকট।

স্থানীয়রা বলছেন, কাজলার উৎপত্তিস্থল থেকে ভৈরব নদীর সংযোগ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দখলের ছাপ প্রকট। নদীর পাড় কেটে সমতল জমি তৈরি করেছেন দখলকারীরা। খণ্ড খণ্ড অংশে এখন বোরো ধানের চারা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পরই সেখানে রোপণ করা হবে বোরো ধানের চারা। কেবল ধান নয়, আবাদ হচ্ছে অন্যান্য ফসলও। অনেক জায়গায় পুকুর খনন করা হয়েছে। নদীর যে অংশে সামান্য পানি রয়েছে, সে অংশও কচুরিপানায় ভরা। এসব কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। মাটি কেটে নদীর পাড় সমতল এবং আবাদি জমিতে রূপান্তরিত করায় মারাত্মক নাব্য সংকট কাজলা’য়।

বিজ্ঞাপন

জেলার সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাজলা একটি ঐতিহাসিক নদী। এখান দিয়ে কোলকাতার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ ছিল। ইংরেজ বণিকরা এই নদী দিয়ে এ দেশে যাতায়াত করত। কাজলা নদীর তীরেই ভাটপাড়া নীল কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। একসময় এই নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। দেশীয় মাছ পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু এসব আজ শুধুই ইতিহাস, বইয়ের পাতায় বিষয়।’

সদর উপজেলার আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান বোরহানউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা শুনেছি, ভারতের কলকাতার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ হিসেবে এই কাজলা নদীকেই ব্যবহার করা হতো। সে কারণে ইংরেজ বেনিয়ারা এই এলাকার সবচেয়ে বড় কুঠিবাড়ী আমঝুপিতে স্থাপন করে। এখন কাজলা একটি মৃত নদীর নাম।’

বিজ্ঞাপন

যদিও কাজলা নদীর এমন দুর্দশাতেও খানিকটা আশার আলো দেখাচ্ছে ডিসি ইকোপার্ক। গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া নীলকুঠিতে এই ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠার সময় পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে নদীর কিছু অংশ পুনঃখনন করা হয়। ফলে এই অংশটিতে এখন সারাবছরই পানি থাকে। ছোট ছোট নৌকায় পুনঃখনন করা অংশে চলাচল করেন দর্শনার্থীরা। এমনভাবে নদীর বাকি অংশও পুনঃখনন করা গেলে স্থানীয় কৃষি ও মৎস্যজীবীদের জন্য এই নদী ফের আশীর্বাদে রূপান্তরিত হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কাজলা নদী রক্ষার বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ‘পুনঃখনন না হওয়ায় নদীটি মৃতপ্রায়। নদীর প্রাণ ফিরিয়ে এলাকার মানুষের আশীর্বাদে পরিণত করতে পুনঃখনন জরুরি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন