বিজ্ঞাপন

‘মোবাইল রিচার্জে’র এক টুকরো কাগজ থেকে ধরা পড়লো খুনিরা

December 17, 2018 | 2:32 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: অপরাধ বিষয়ক নাটক সিনেমা, বিশেষ করে ‘ক্রাইম পেট্রোল’ এর বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড দেখে শিশু রাকিনকে (১০) অপহরণ করে দ্রুত বড়লোক হওয়ার পরিকল্পনা করে দুই তরুণ পারভেজ শিকদার (১৮) এবং ফয়সাল আহমেদ (১৯)। ছয় মাস আগ থেকে করা পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশু রাকিনকে অপহরণ করে তারা। এরপর দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা না পেয়ে দুজনে মিলে শিশুটির বুকের উপর উঠে গলা চেপে হত্যা করে। কিন্তু মোবাইল রিচার্জে’র এক টুকরো কাগজই তাদের অপরাধের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায়— বলছিলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ার-বিন-কাশেম।

গত ৫ ডিসেম্বর বিকেলে শিশু রাকিনকে অপহরণ করা হয়েছিলো। এর পাঁচ দিন পর তার অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার শিশুটির নিজ বাড়ির বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে। অপহরণের পর শিশুর বাবা সৈয়দ শামীম ইকবাল গত ৭ ডিসেম্বর শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এমন নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-১। এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) কাওরান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু রাকিন হত্যার মূল রহস্য এবং আসামিদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ার-বিন-কাশেম।

বিজ্ঞাপন

হত্যাকারীরা হলো- শ্রীপুরের ফাউগান এলাকার আলীম শিকদারের ছেলে পারভেজ শিকদার এবং একই গ্রামের আব্দুল লতিফ মোল্লার ছেলে ফয়সাল আহমেদ। প্রধান অভিযুক্তকারী পারভেজ গতবছর এলাকার ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এগ্রিকালচার ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়। তার পিতা মানসিক ভারসাম্য, মা গৃহিনী এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড় হওয়ায় তার পড়াশুনার খরচ চালাতো নিহত শিশু রাকিনের পরিবার। বিনিময়ে গত দু’বছর ধরে শিশু রাকিনকে প্রাইভেট পড়াতো অভিযুক্ত পারভেজ।

অপরজন, ফয়সাল একই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। একই এলাকার হওয়ায় দুজনে একই সঙ্গে গত তিন-চার বছর ধরে বিভিন্ন নেশা করায় ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে তারা। তাই দু’জনে মিলেই তারা শিশু হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ক সিনেমা-নাটক বিশেষ করে ক্রাইম পেট্রোলে দেখানো অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেখে উৎসাহিত হয়ে পারভেজ শিকদার এমন নৃশংস পরিকল্পনা করে। সেই বিভিন্ন সময় ছোটখাটো অপরাধমূলক কাজ করতো, তারই ধারাবাহিকতায় বড় অঙ্কের টাকার আশায় গত ছয় মাস পূর্বে সে ভিকটিম রাকিনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ চাওয়ার উদ্দেশে রাকিনের বাসা থেকে রাকিনের বাবার মোবাইল চুরি করে। এরপর সে পরিকল্পনা করে যে ভিকটিম এর বাবার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং খুব সহজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়া যাবে। এমনকি মোবাইলের কল ডিটেইলস থেকে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় গত ছয় মাস সে মোবাইল বন্ধ রেখেছিল এবং অন্য কোথাও কোনো কল করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পারভেজ শিকদার তার সহযোগী গ্রেফতারকৃত ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। অপহরণের দিন (৫ ডিসেম্বর) ফয়সাল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে খেলার ফাঁকে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে যেতে বলে। এমনকি কারো সন্দেহের উদ্রেক যেন না হয় এজন্য কিছু সময় পর পারভেজ ও ফয়সাল গোপনে তাদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় রাকিন কে। তারা ভিকটিমকে কৌশলে বাঁশঝাড়ের আরো গভীরে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গলের ভিতর ভিকটিমকে আটকে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু জঙ্গলের ভেতর ভিকটিমকে আটকাতে ব্যর্থ হলে এবং ভিকটিম ছাড়া পেলে তাদের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে এই ভয়ে তারা তৎক্ষণাৎ তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গ্রেফতারকৃত ফয়সাল ভিকটিম রাকিনকে মাটিতে ফেলে গলা টিপে ধরে এবং পরবর্তীতে পারভেজ তার শরীরের ওপর বসে একত্রে শিশুটির গলা টিপে হত্যা করে।’

সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্তকারীরা আগে থেকেই নেশাসক্ত ছিল। যে কারণে তারা যখন এ ঘটনা ঘটাচ্ছিল তাদের মানবিক হিতাহিত জ্ঞান বলতে হয়তো কিছুই ছিল না। তাছাড়া তারা খুবই মেধাবী। কারণ তারা যখন ভিকটিমের বাবার কাছে মুক্তিপণ চাইতে ফোন করেছিল তখনই তাদের ফোনের টাকা শেষ। এ অবস্থায় তারা যেখানে টাকা রিচার্জ করেছিল সেখানে কোনো প্রমাণ যেন না থাকে সেজন্য রিচার্জের নম্বরটি ছোট একটা কাগজে লিখে রিচার্জ শেষে সেটি ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়। আর সে কাগজ দিয়েই মূলত তাদের আটক করতে সক্ষম হয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলন শেষে নিহত শিশু রাকিনের বাবা সৈয়দ শামীম ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই দিন আমার ছেলে আছরের নাম পড়ে কিছুক্ষণ কোরআন তেলোয়াত করেছিল। এরপর তারা খেলার কথা বলে আমার ছেলেকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে হত্যা করে।’

সারাবাংলা/এসএইচ/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন