বিজ্ঞাপন

ম্যাঙ্গো জরিপ: সিলেটে দল আ’লীগ, ব্যক্তি জোবায়দা জনপ্রিয়

October 20, 2018 | 5:56 pm

||বিশেষ সংবাদদাতা||

বিজ্ঞাপন

সিলেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় কে? ভোট সামনে রেখে এমন একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পর- সবচেয়ে এগিয়ে থাকা নামটি পাওয়া যায় ডাঃ জোবায়দা রহমানের। একটি জরিপ দেখাচ্ছে- দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই বিভাগে ৩০.৭৯ শতাংশ মানুষ বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের এই পুত্রবধূকে পছন্দ করেন।

তবে জোবায়দার এই জনপ্রিয়তা স্রেফ ব্যক্তিগত- কারণ ওই জরিপটি এও দেখাচ্ছে- সিলেট বিভাগে দল হিসাবে জনপ্রিয়তায় ৭২.২০ শতাংশের ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই জরিপে বিএনপি দ্বীতীয় অবস্থানে রয়েছে ২৪.০৫ শতাংশ জনপ্রিয়তা নিয়ে। বাকি দলগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে রয়েছে বাকি ৩.৭৫ শতাংশ জনপ্রিয়তা। সিলেট অঞ্চলে জামায়াত-শিবিরের শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে যে রাজনৈতিক ধারনা অতীতে বিভিন্নভাবে উঠে আসলেও- এই জরিপ তা ভুল প্রমাণ করে জানাচ্ছে- এই অঞ্চলে জামায়াতের জনপ্রিয়তা মাত্র ১.৩৩ শতাংশ।

আর শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান সিলেট অঞ্চলের ৮০.৮৬ শতাংশ মানুষ। যেখানে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফের দেখতে চান মাত্র ৯.১৪ শতাংশ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের মানুষের পক্ষ থেকে তুলে ধরা কথা-বার্তা, মত-অভিমত, পছন্দ-অপছন্দর ওপর ভিত্তি করে এই জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপটি চালিয়েছে ম্যাঙ্গো। ‘Machine learning Artificial Intelligence And Network Analysis for Good Governance’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘ম্যাঙ্গো’ (MANGO)।

** আম জনতার মনের কথা ব্যাখ্যা করবে ম্যাংগো– পড়ুন এখানে

লুজলি কাপলড টেকনোলজিস নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তৈরি সফটওয়্যারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসা তথ্যগুলো বিচার বিশ্লেষণ করেই এই তথ্য-উপাত্ত সামনে এসেছে। সফটওয়্যারভিত্তিক জরিপটি সামাজিক মাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত নির্ভর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই মানুষ যেহেতু তার মনের কথাটি সবচেয়ে খোলামেলা মন নিয়ে বলে সুতরাং এখানে প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে বলেই মনে করছে ম্যাঙ্গো।

ম্যাঙ্গোর এই জরিপে আরও দেখা গেছে- সিলেটের মানুষ আওয়ামীলীগের প্রতি বেশি ঝুঁকে রয়েছে। আর তাদের মধ্যে যে মন্তব্যটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষের পছন্দ কিংবা প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট-১ আসন থেকে প্রতিবার তার নির্বাচনী প্রচার অভিযান শুরু করার বিষয়ে। বিষয়টিকে সিলেটবাসী ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। এই অঞ্চলে বিএনপি’র প্রতি সমর্থন ২৪.০৫ শতাংশ এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় শ্লোগান- ‘দেশ গড়েছেন শহীদ জিয়া… নেত্রী মোদের খালেদা জিয়া।’

বিজ্ঞাপন

জরিপে দেখা গেছে সিলেটে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’র প্রতি জনসমর্থন ১.৩৩ শতাংশ। তবে সেটুকুও বিএনপি’র সঙ্গে জোট বাঁধার কারণে বলেই মনে করছেন অনেকে। স্যোশাল মিডিয়ার যে মন্তব্যটি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেটি হচ্ছে- ‘জামায়াত একটি আসনও পেতো না যদি বিএনপি’র সাথে জোট না করতো… বরং বিএনপি’র আসন বেড়ে যেতো।’

এই অঞ্চলে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা এতটাই কম যে সোশ্যাল লিসনিংয়ের এই প্রক্রিয়াতে তা অত্যন্ত গুরুত্বহীনভাবে ধরা পড়েছে। বরং খেলাফত মজলিসের প্রতি জনসমর্থন রয়েছে বলেই দেখতে পেয়েছে ম্যাঙ্গো। “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট পশ্চিম জেলার পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন,”এমন একটি মন্তব্য ১.২৬ শতাংশ জনপ্রিয়তা নিয়ে এই অঞ্চলে চতূর্থ অবস্থানে রয়েছে। আর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে “আমার পিয় একটি দল”বলে করা মন্তব্যে ০.৯৯ শতাংশ মানুষের পছন্দের চিহ্ন পড়েছে।

তবে দলের বাইরে ব্যক্তি বিবেচনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সিলেটে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা দেখতে পাওয়া যায় জোবায়দা রহমানের। জিয়া পরিবারের পুত্রবধূ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দাকে নিয়ে করা একটি মন্তব্য “নিজ প্রতিভায় আলোকিত… ডাঃ জোবায়দা রহমান… গনতন্ত্রের জয় হবেই হবে… আপনার কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা,” এই মন্তব্যটি ৩০.৭৯ শতাংশ মানুষ গুরুত্ব দিয়েছে, পড়েছে, পছন্দ করেছে এবং তার ওপর মন্তব্য করেছে।

সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় এমন ২০.৯৯ শতাংশ মানুষ “আহ!!!! কতই না ভালোলাগে যখন প্রিয় মানুষদের দেখতে পাই”এমন একটি মন্তব্যকে পছন্দ করেছে। যেটি তুলে ধরা হয়েছে জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানের একটি ছবি দিয়ে। দল হিসাবে জামায়াতের অবস্থান তলানিতে থাকলেও ব্যক্তি হাবিবুর রহমানকে নিয়ে করা এমন মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তাকে নিয়ে করা “Sir apni onk valo manus ,joy hok apnr!” মন্তব্যটি ৯.৩২ শতাংশ মানুষের কাছে পছন্দ হয়েছে। আর সিলেট-৩ আসনের এমপি, প্যানেল স্পিকার, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী কায়েসের ছবি সম্বলিত “ধন্যবাদ প্রিয় ভাইজান দোয়া করবেন আমাদের জন্য!” এমন একটি মন্তব্য ৭.৬২ শতাংশ মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা এহিয়া চৌধুরীকে নিয়ে “জনাব এমপি মহোদয় ব্যাক্তিগতভাবে আপনার কর্মকান্ড গুলা ভালোই লাগে ,ভবিষ্যতে আপনার মতো নেতার বড়ই দরকার এই সমাজের জন্য!” এমন একটি মন্তব্য গুরুত্ব পেয়েছে ৭.৬২ শতাংশ মানুষের কাছে। আর পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে- “সিলেটের দুই রত্ন – জোবায়দা রহমান ও তাহমিনা রুশদি লুনা। সিলেটের গর্ব, বিএনপির অহংকার”এমন একটি মন্তব্য। তাহমিনা রুশদি লুনা সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি, বিএনপি’র নিখোঁজ কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

ম্যাঙ্গো তার জরিপে আওয়ামী লীগ প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তি জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে এই সোশ্যাল লিসনিংয়ের মাধ্যমে। এতে দেখা গেছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা রয়েছে ৯০.৮৬ শতাংশ। যারা শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। তার বিপরীতে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা সিলেট অঞ্চলের সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় মানুষের মধ্যে মাত্র ৯.১৪ শতাংশ। এই অংশ খালেদা জিয়াকে তাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতে চান।

তবে প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে মানুষ বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ‘দেশ গড়েছেন শহীদ জিয়া… নেত্রী মোদের খালেদা জিয়া।’ এমন একটি স্লোগানে। এতে রিঅ্যাকশন পড়েছে ৬০.৭১ শতাংশ মানুষের। অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে করা মন্তব্য-“জননেত্রী শেখ হাসিনা লও.. লও.. লও সালাম-”এ প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৩৯. ২৯ শতাংশ।

সামাজিক মিডিয়ায় যাদের এমপি হিসেবে দেখতে চাওয়ার বিভিন্ন ধরনের বাণী, বক্তব্য মন্তব্য আসছে সে তালিকায়ও সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জোবায়দা রহমান। দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছেন খন্দকার আবদুল মুকতাদির নামে ইতালি প্রবাসী একজন বিএনপি নেতা। এমপি হিসেবে আবারও দেখতে চান এমন তালিকায় রয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের নাম।

সোশ্যাল মিডিয়া লিসনিংয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে বর্তমান ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়েও যাচাই করে দেখেছে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ্গো। এতে ১৭.৬১ শতাংশ মানুষ এই প্রক্রিয়ার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে, ৬.৪৮ শতাংশ মানুষ নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে, আর বৃহত্তর সিলেটের ৭৪.৯১ শতাংশ মানুষই এই প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনো নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে।

উন্নয়নের ধারণা সিলেটবাসীর কাছে কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে সে জরিপে দেখা যাচ্ছে শতভাগ মানুষই মনে করে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ৫৯.১৩ শতাংশ মানুষ শিক্ষা খাতের উন্নয়নকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন আর ৪০.৮৭ শতাংশ মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব কথা হচ্ছে তা যাচাই ও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- এখনো ৪৬.০০ শতাংশ মানুষ তেমনই একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রত্যাশা করেন। ১৪ শতাংশ মানুষ মনে করছেন- এমনটার প্রয়োজন নেই ও দেশে আর ফিরে আসার সুযোগও নেই। তবে ৪০ শতাংশ মানুষ এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছেন।

ম্যাঙ্গোর জরিপে আরও দেখা গেছে- সিলেট অঞ্চলে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় মানুষগুলোর মধ্যে ৬০.০৭ শতাংশই নতুন নেতৃত্ব আনার পক্ষে। ২.৫৮ শতাংশ এ ব্যাপারে তাদের নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন আর ৩৭.৩৫ শতাংশ তাদের নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন