বিজ্ঞাপন

রবি ঠাকুর, ব্লেকের কবিতা উল্টে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জবাব রিজভীর

April 15, 2018 | 2:04 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তিনি। প্রোটোকল অনুযায়ী দলের ৬ নম্বর পদ এটি! তারপরও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের জবাব নিজ দায়িত্বেই দিয়ে থাকেন রুহুল কবির রিজভী।

নয়াপল্টন কার্যালয়ে ‘স্থায়ী’ আবাস গড়া রিজভী প্রতিদিনের মতো রোববার (১৫ এপ্রিল) সকাল সোয়া ১১টায় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। এজেন্ডা দু’টি—  বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার আপডেট এবং পহেলা বৈশাখে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাব!

তেমন কোনো রাজনৈতিক খিস্তি-খেউর ছাড়াই পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে শনিবার (১৪ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অশুভ শক্তি যেন আর ক্ষমতায় না আসতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

চিরায়ত অভ্যাসবশত পহেলা বৈশাখের ওই অনুষ্ঠানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘১৪০০ সাল’ কবিতাটিও পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কবিতা পড়ার প্রসঙ্গটা টেনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী ১ লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে কবিগুরুর ‘১৪০০ সাল’ কবিতাটি আউড়িয়েছেন। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এটুকুই বলতে চাই, বিরোধীদের প্রতি সরকারের প্রধানের ক্ষোভ, ঘৃণা এবং ধ্বংস করার মানসিকতার কারণে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঐ কবিতাটি এখন কীভাবে গৃহীত হচ্ছে সেটি তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি।’

‘কবিগুরু ‘১৪০০ সাল’ কবিতার এক জায়গায় লিখেছেন, আজিকার বসন্তের আনন্দ-অভিবাদন/পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে/আমার বসন্তগান তোমার বসন্ত দিনে/ধ্বনিত হউক ক্ষণতরে।’

বিজ্ঞাপন

‘এই কবিতায় কবিগুরু শতবর্ষ পরে অনাগতকালের কবিকে নিজের বসন্ত গান অভিবাদন পাঠিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে বসন্তদিন হারিয়ে গেছে অরাজকতার তীব্র তাপদাহে নির্মম অভিঘাতে— বলেন রিজভী।

তিনি বলেন,  ‘ইংরেজ কবি উইলিয়াম ব্লেক এর একটি কবিতা শেখ হাসিনার এই দুঃসময়ের জন্য প্রযোজ্য। কবি বলেছেন, ‘And their fields are bleak/ And their ways are filled with throns/It is eternal summer (winter) there. এখন বাংলাদেশে কবিগুরুর বসন্তদিন হারিয়ে গেছে, ছয় ঋতুচক্রের আবর্তন নেই, আছে শুধু মরুতাপে দগ্ধ অবিরাম দুঃসহ গ্রীষ্ম।’

‘আমি এখানে উল্টে দিয়েছি একটি শব্দ। উইলিয়াম ব্লেকের দেশ ইউরোপ তো! ওখানে চরম দুর্বিষহকাল হচ্ছে শীতকাল। আর আমাদেরটা হচ্ছে গ্রীষ্ম-গরম! দীর্ঘদিন এখানে গরম থাকে। গরম আমাদের কাছে খুবই কষ্টকর। আর ওদের কাছে `Winter’ খুব কষ্টকর। উনি (ব্লেক) লিখেছেন `It is eternal winter’ আর আমি শব্দটা চেঞ্জ করে দিয়ে এখানে শুধু `Summer’ লিখেছি’— বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘কবি গুরুই আবার বলেছেন, ভাঙ বাধ ভেঙে দাও/ বাধ ভেঙে দাও/ বাধ ভেঙে দাও/ জীবনের জয়গান গাও। আমরা আগামী দিনে জীবনের জয়গান গাইতে এই দুঃসহ দুঃশাসনের সকল বাধ ভেঙে দেব। বাধ ভেঙেই আমরা আবার নতুন ‘কালবৈশাখী’ উদযাপন করব।’

বিজ্ঞাপন

‘সেটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ওই নতুনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর— আমরা সেই কালবৈশাখী উদযাপন করব, যেদিন শেখ হাসিনার দুঃশাসন, অগণতান্ত্রিক শাসন, এই নৈরাজ্য এবং তার কর্তৃত্ববাদী শাসন যেদিন অবসান হবে। সেই অবসানেই আমরা কালবৈশাখের জয়ধ্বনি করব’— বলেন রিজভী।

দীর্ঘ ‘কাব্যিক’ বক্তব্য’র আগে কিছু প্রাত্যহিক অভিযোগ তুলে ধরেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন মনে করে দেশের সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি বর্তমান মহাজোট সরকার। ভোটারবিহীন অগণতান্ত্রিক শক্তি হচ্ছে সবচাইতে নিকৃষ্ট অশুভ শক্তি। মানুষ দিন গুনছে এই অশুভ শক্তি পতনের।

‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচারীরা কী শুভ শক্তি?— এমন প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘অনাগত দিনের দুঃশ্চিন্তা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঘনায়মান হতাশা আর বিরোধীদের গুম, খুন, অদৃশ্য করা, হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা, হাঁটুতে গুলি করে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী প্রাণখুলে হাসতে পর্যন্ত ভুলে গেছে— এই পরিস্থিতি কি কোনো শুভ শক্তির লক্ষণ?’

‘জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, জনগণের সমস্ত মৌলিক ও মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে সম্পূর্ণ বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছেন—এটা কী শুভ শক্তির পরিচয় বহন করে?’— প্রধানমন্ত্রীকে রিজভীর প্রশ্ন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন