বিজ্ঞাপন

রাজবাড়ীতে নদী ভাঙনের আতঙ্ক, কর্তৃপক্ষ উদ্যোগহীন

May 4, 2018 | 8:23 am

।। মো. আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

রাজবাড়ী: বর্ষা মৌসুম শুরুর বাকি প্রায় আরো দুই মাস। কিন্তু এরই মধ্যে ভাঙতে শুরু করেছে পদ্মার পাড়। রাজবাড়ীর শহর রক্ষাকারী বাঁধও রয়েছে হুমকির মুখে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মার তীরবর্তী শত শত পরিবারে। এরপরেও নদী শাসনে কর্তৃপক্ষের নেই কোনো উদ্যোগ। স্থানীয়দের আশঙ্কা, শিগগিরই নদী শাসনে স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এ বছর বর্ষা মৌসুমে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে শহর রক্ষা বাঁধটি।

জেলা প্রশাসন ‘অনতিবিলম্বে’ সংস্কার কাজ শুরুর আশ্বাস দিলেও সুনির্দিষ্ট কোনো দিন-ক্ষণ জানাতে পারেনি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র বলছে, বর্ষা মৌসুম চলে আসায় এ বছর কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত শুরু না হলেও বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ঝড়ো বাতাসে নদীতে দেখা দিয়েছে বড় বড় ঢেউ। আর এই ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙতে শুরু করেছে পদ্মার পাড়। এর ফলে এরই মধ্যে চরবরাট, বেথুরী, সাঁজাপুর, বেতকা ও চর দেলুন্দি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে বিলীন হতে শুরু করেছে ফসলি জমি।

বিজ্ঞাপন

রাজবাড়ীর উড়াকান্দা এলাকার কৃষক আকবার সরদার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, গেল বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর গ্রাসে বাপ-দাদার ভিটেমাটি, চাষাবাদের জমি— সবই হারিয়েছি। সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের এ পাড়ে, অন্যের জমিতে। কিন্তু এ বছর এরই মধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙতে ভাঙতে পদ্মা এসে ঠেকেছে শহর রক্ষা বাঁধের কাছে। আবার সামনেই বর্ষা মৌসুম। কিন্তু এখনও বাঁধ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই।

বিজ্ঞাপন

আকবার সরদার বলছেন, রাজবাড়ীর উড়াকান্দা, অন্তারমোড়, নয়নসুখ, চরবরাট, বেথুরী, সাঁজাপুর, বেতকা ও চর দেলুন্দিসহ কয়েকটি গ্রামে তার পরিবারের মতো শত শত পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের সবগুলোই রয়েছে ভাঙনের আতঙ্কে। জেলা প্রশাসন থেকে দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এসব পরিবার এ বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার গ্রাসে তাদের শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও হারাবে।

রাজবাড়ীর বরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সালাম বলেন, রাজবাড়ী শহর রক্ষাকারী বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছর। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনও সেই কাজ শুরু হয়নি। পদ্মার ভাঙনে শত শত ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাঁধ রক্ষায় দ্রুত ও স্থায়ী পদক্ষেপ না নিলে এ বছর বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে রাজবাড়ী শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে।

এদিকে, রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়ি বাঁধকে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ‘বেড়ি বাঁধ রক্ষা আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন তরুণরা। বুধবার (২ মে) বিকালে রাজবাড়ী সদরের উড়াকান্দা বাজারে ভাঙন কবলিত এলাকায় গণসমাবেশ করেছে সংগঠনটি। সমাবেশে জেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ মানুষ সমবেত হন।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিবছর নদী ভাঙনে শত শত পরিবার সব হারিয়ে পথে বসছে। কিন্তু নদী শাসনে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পদক্ষেপ নেই। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কারে স্থায়ী কার্যক্রম দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, নদী ভাঙনের কবল থেকে রাজবাড়ী শহর রক্ষাকারী বাঁধটি রক্ষার জন্য একনেকে ৩৪২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড অনতিবিলম্বে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে।

তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা জানাতে পারেননি জেলা প্রশাসক। আর রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র বলছে, প্রকল্প অনুমোদন পেলেও বর্ষা মৌসুম চলে আসার কারণে এ বছর কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। তাই আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হওয়ার কথাও রয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর/এমএইচ

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন