January 20, 2018 | 2:48 pm
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট
মাস দেড়েকেরও বেশি সময় কলকাতা-পুরুলিয়া-সুন্দরবন কাটিয়ে জ্যোতিকা জ্যোতি দেশে ফিরছেন শুক্রবার। মাঝখানের এই সময়টা তার ভীষণ স্মৃতিজাগানিয়া। দীর্ঘ অভিনয় জীবনের সম্ভবত শ্রেষ্ঠ সময়টি কাটিয়ে ফেললেন তিনি। সুসময় এখনও শেষ হয়নি। রেশ রয়ে যাবে সিনেমা হলগুলোর সামনে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র বিরাট বিলবোর্ড সেঁটে দেওয়ার পরের আরও দীর্ঘদিন পর্যন্ত।
দীর্ঘ সময় ধরে চরিত্রটিতে একেবারেই ডুবে থাকা যাকে বলে, ছিলেন তিনি। ওই অধ্যায় শেষ হয়েছে ১৭ জানুয়ারি। মন একটু খারাপ, সঙ্গে উচ্ছ্বাস-আশার মিশেল। চোখের সামনে অবারিত প্রত্যাশা মেলে জ্যোতি ফিরছেন মায়ের কোলে। যে মায়ের আদুরে চুমু অনেকদিন ধরে মিস করছিলেন।
‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র প্রতিটি মুহূর্ত জ্যোতি ধরে রেখেছিলেন তার ফেসবুক টাইমলাইনে। রাজলক্ষ্মী-টাইমলাইনের পরিমার্জিত সংস্করণ সারাবাংলার পাঠকদের জন্য থাকলো, অনেকটা ফ্ল্যাশব্যাক আঙ্গিকে।
আজ হতে রাজলক্ষ্মী থেকে বিচ্ছিন্ন হবো। এক বছর ধরে আমার ভেতর একটু একটু করে রাজলক্ষ্মীকে ধারণ করতে করতে একসময় সে আর আমি এক হয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য। মাঝখানে কত দিন-রাত-হিসেব-বেহিসেব-সুখ-দু:খ-টানাপোড়েন-আশা-নিরাশার খেলা! সেসব নিয়ে নিজেকে ছাপিয়ে কতটা রাজলক্ষ্মী হতে পেরেছি আমি জানি না। পর্দা বলবে, তারপর আপনারা।
তবে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ আমার জন্য এক বর্ণিল অভিজ্ঞতা! কতোশত নতুন মানুষ, নতুন ঘটনা, নতুন জায়গা, নতুন গল্প !
ভীষণ মন খারাপ লাগছে রাজলক্ষ্মী থেকে বিচ্ছিন্ন হতে, আমার টিম থেকে বিচ্ছিন্ন হতে, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র সময়টুকু থেকে বিচ্ছিন্ন হতে, ভীষণ…।
একটা টিম যতোটা আপন হয়ে উঠতে পারে আমরা ততোটাই হয়েছিলাম। এই কাজ, এই মানুষগুলো থেকে দূরে যাওয়া সত্যি কষ্টের। অথচ নতুন সময়কে জায়গা দিতে বয়ে যেতে হয় এই আবহমান কষ্টের যন্ত্রণা!
পুরুলিয়া পার্টের শুটিং শেষ হলো। অনেকখানিই হয়ে গেলো আমাদের ‘ রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির শুটিং। এরপর সুন্দরবন। ফেরার সময় পুরুলিয়া স্টেশনে পরিচালক জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনি এখন রাজলক্ষ্মী না জ্যোতিকা?’ আমি বললাম ঠিক বুঝতে পারছি না। তিনি বললেন ‘আরো কয়েকটা দিন রাজলক্ষ্মী হয়েই থাকুন।’
ওকে থাকলাম।
একটু যোগাযোগহীন হয়ে আছি সব থেকে। ফিরবো শীঘ্রই।
অনেকেই জানতে চাচ্ছেন কেমন হচ্ছে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র শুটিং। সে উত্তর দেওয়া আমার জন্য মুশকিল। তবে রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র স্ক্রিপ্ট পড়তে আমার কয়েকঘণ্টা, চিত্রনাট্য বুঝতে কয়েকমাস, আর নিজেকে বুঝাতে প্রায় এক বছর লাগলো। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও কখনো মনে হতো আমি বোধহয় পারবো না!
এখন কতোটা রাজলক্ষ্মী হয়ে উঠতে পেরেছি সে আমি বলতে পারবো না, শুধু এটুকু টের পাচ্ছি মাথার ভেতর রাজলক্ষ্মীর ঘোরাফেরা ছাড়া আর কিছু নেই, ঘুমের মাঝেও!
এই ১০ দিনে শ্রীকান্ত রাজলক্ষ্মীর কোন এন.জি শট নেই সম্ভবত। এ এক এমন মিরাকল! রোল থেমে গেলে কেমন শুণ্য শুণ্য লাগে। সামনে আরো কুড়ি দিন।
বাকিটা পর্দায়।
অনেকটাই বেশী চাপ নিয়ে ফেলেছিলাম!
প্রথমদিন শুটিংয়ের দারুণ অভিজ্ঞতার পর তা কমতে শুরু করেছে। আমার অসাধারণ ডিরেক্টর, চমৎকার টিম, অপরাজিতা ঘোষ দাস ও ঋত্বিক চক্রবর্তীর মত বড় মাপের দু’জন সহশিল্পী মানুষ হিসেবে যারা আরো বড়, সব মিলিয়ে একটা সুখের জগতে ছিলাম যেন!
ঋত্বিক চক্রবর্তীর মতো বড় মাপের অভিনেতার সাথে স্ক্রীন শেয়ার করাটাও ছিল টেনশনের। অথচ খুব সহজেই অদ্ভুত সিংক হয়ে যাচ্ছে আমাদের! হি ইজ এ গ্রেট কো-আর্টিস্ট ।
বাকিটা শুটিং এভাবেই শেষ করতে চাই।
সবুজ শ্যামল গ্রাম ছেড়ে এক বুক স্বপ্নের জোরে আলো ঝলমলে যাদুর শহর ঢাকায় এসেছিলাম ২০০৭ সালে। অভিনয়কে ভালোবেসে জীবনের সব স্বাদ আহ্লাদ ত্যাগ করে আজ অব্দি যুদ্ধ করে যাচ্ছি একা। ফলাফলের হিসেব মেলানোর সাহস হয়নি এখনো। প্রতিদিনই যেন শুণ্য থেকে শুরু হয় আমার !
আর এই ‘১৭ তে দেশের ভুগোল পেরিয়ে শুরু করছি নতুন যাত্রা। এখন আমার স্বপ্নদের আরো অনেক অনেক পাখা! সেই পাখায় ভর করে উড়ছি নতুন আকাশে। আবার কখনো পাখা খসে যাওয়ার বেদনা ঢাকি রঙিন মেকাপে। এগিয়ে যাই, ঠিকানা জানি না। আর কে-ই বা জানে স্বপ্নের ঠিকানা! তবু পাথেয় হয় আকাশছোঁয়া স্বপ্নের শক্তি। কাজ শুরু করছি এক নতুন দেশে, নতুন ইন্ডাস্ট্রিতে।
আজ সুর্যোদয়ের সাথে সাথে ‘রাজলক্ষ্মী’ হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছি। একদম জীবনের প্রথম দিনের শুটিংয়ের মতো অনুভূতি হচ্ছে!
সারাবাংলা/কেবিএন/পিএম