বিজ্ঞাপন

রাফায়েল জ্যাকব: যুদ্ধবিরতির বদলে লিখেছিলেন আত্মসমর্পণের খসড়া

January 14, 2019 | 5:49 pm

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, ভারতীয় বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জ্যাকব ফার্জ রাফায়েল জ্যাকব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের নেপথ্যের নায়ক তিনিই। চিরকুমার এই সেনার মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো গতকাল ১৩ জানুয়ারি।

মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে জ্যাকবকে ডেকেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু তিনি ঢাকা উড়ে এসেছিলেন আত্মসমর্পণের কাগজপত্র নিয়ে। আর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাক ফার্জ রাফায়েল জ্যাকব ১৯৭১ সালে তাঁর নেওয়া এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের জন্যই বিখ্যাত। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পটভূমি নির্মাণের পিছনে তার অবদান অনেক।

নিজের লেখা ‘স্যারেন্ডার এট ঢাকা-বার্থ অফ এ ন্যাশন’ বইতে জ্যাকব উল্লেখ করেন আত্মসমর্পণের বিষয়ে তিনি তাঁর সদর দফতরকেও ঠিকঠাকভাবে অবহিত করেননি। এমনকি ফিল্ড মার্শাল এস এইচ এফ জে মানেকেশও আত্মসমর্পণের ব্যাপারে জানতেন না।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও লিখেছেন, ঢাকায় তিনি জেনারেল নিয়াজিকে বলেছিলেন আত্মসমর্পণের পর পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে সহায়তা করবে। অন্যথায় নিয়াজীকে পরবর্তীতে এর ফলাফল ভোগ করতে হবে। নিয়াজী যখন জ্যাকবের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলো তখন ঢাকায় পাকিস্তানের ২৬ হাজার সেনাবাহিনীর বিপক্ষে ভারতীয় সেনাবাহিনী ছিলো মাত্র ৩ হাজার। কিন্তু নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছিলো।

পরবর্তীতে নিয়াজীকে পাকিস্তানী অনুসন্ধানী কমিশন জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বলে, ‘জ্যাকব আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছিলো।’ জ্যাকবের এই কাজ পরবর্তীতে নানারকম বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো। তিনি তাঁর বই এ উল্লেখ করেন, মানেকেশ অন্যান্য এলাকা শত্রুমুক্ত করার নির্দেশ দিলেও তিনি সেটাকে উপেক্ষা করে ঢাকা দখল করতে চেয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

১৯২৩ সালে ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা জ্যাকব ছোটবেলায় দার্জিলিংয়ের বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং ১৯৪১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ১৮ বছর বয়সে বাবার অমতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেন জ্যাকব।

১৯৭৮ সালে অবসর গ্রহণ করা জ্যাকব পরবর্তীতে বিজেপির সামরিক বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন। ১৯৯৮ সালে রাজনৈতিক সংকট চলাকালীন সময়ে তিনি গোয়ায় গভর্নরের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি পাঞ্জাবের গভর্নর হিসেবেও নিযুক্ত হোন।

শিল্প, কবিতা ও পশ্চিমা ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের বড় ভক্ত ছিলেন জ্যাকব। প্রচলিত আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি পকেটে একটি ডিকশনারি নিয়ে ঘুরতেন এবং যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে পড়তেন।

বিজ্ঞাপন

ইসরায়েল থেকেও জ্যাকব অনেক সম্মাননা পেয়েছেন, তাঁর ইউনিফর্ম ইসারায়েলি সেনাবাহিনীর যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। জ্যাকব ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রেও অবদান রাখেন। কিন্তু তিনি ইসরায়েল স্থায়ীভাবে বসবাস করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেছিলেন, ‘ইহুদি হিসেবে আমি গর্বিত কিন্তু আমি একজন ভারতীয়। আমি এ দেশে জন্মেছি এবং সারাজীবন এ দেশের সেবা করে যেতে চাই, আমি এখানের মাটিতেই মরতে চাই।’

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন