বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের অসচেতনতা বাড়াচ্ছে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি

April 25, 2018 | 12:11 pm

।।জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

বান্দরবান থেকে ফিরে: মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অসচেতনতা  ম্যালেরিয়া বিস্তারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ শুরু করেছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ১০ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদের থেকে ম্যালেরিয়া যেন বিস্তার লাভ না করতে পারে সে জন্য এক লাখ ৫০ হাজার কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয়েছে।

ম্যালেরিয়ার বিস্তার এবং এর নির্মূলে বান্দরবানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, মশারি ব্যবহারে রোহিঙ্গাসহ বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার মানুষের মধ্যে অনীহা আছে। যার কারণে সম্পূর্ণভাবে এ তিন জেলার ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ‍ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করছে এমন অনেকে থাকতে পারে। যদি তাদের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে সেটা পুরো বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। একইসঙ্গে ভাষাগত সমস্যার কারণেও এ এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি, তাদের কাছে সব তথ্য সময়মতো পৌঁছায় না।’

অপরদিকে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ সঠিক সময়ে সবসময় চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না, যান না স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতেও। তারা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন সেটি কাজ করে না তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

পার্বত্য এলাকাগুলোতে যদি ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে অন্যান্য এলাকাগুলোতেও সেটি ছড়িয়ে পড়ার আশাঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে  এই রিস্ক ফ্যাক্টরের তালিকাতে তিন জেলাতে আসা পর্যটকদের কথাও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে দেশে ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হন ২৯ হাজার ২৩৭ জন আর মারা যান ১৩ জন। যেখানে ২০১৬ সালে মোট ২৭ হাজার ৭৩৭ জন আক্রান্ত হন আর মারা যান ১৭ জন। অপর দিকে ২০১৫ সালে ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৯ হাজার ৭১৯ জন এবং মারা যান ৯ জন। ২০০৮ সালের তুলনায় ম্যালেরিয়াতে মৃত্যুহার কমেছে প্রায় ৯২ শতাংশ, আর আক্রান্ত হবার হার কমেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ।

এদিকে, ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ রয়েছে, যদিও আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়া নির্মূল করার জন্য জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘ম্যালেরিয়া একটি মশাবাহিত রোগ, আর বাহকবাহিত যে কোনো রোগই সম্পূর্ণ নির্মূল করা করা কঠিন। কিন্ত সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হলেও বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

ডা. সানিয়া বলেন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা গিয়েছে-যেটা বাংলাদেশের জন্য অ্যালার্মিং। কিন্তু তাদের থেকে ম্যালেরিয়া যেন ছড়িয়ে না পড়তে পারে সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অপরদিকে সন্ত্রাস এবং ম্যালেরিয়াকে বান্দরবান জেলার প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে জেলার জ্যেষ্ঠ মেডিকেল অফিসার ডা. বিশ্বজ্যাতি চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়াকে এখনও সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে পারিনি আমরা। ম্যালেরিয়া আক্রান্তের শতকরা ৬০ শতাংশই বাস করে বান্দরবানে। কারণ, গভীর জঙ্গলে জুম চাষিরা ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হন। রাবার বাগানে যেখানে চাষিরা রাবার সংগ্রহ করতে যান সেখানে সবসময়ই ম্যালেরিয়াবাহক মশার উপস্থিতি থাকে। আবার গভীর এই বনাঞ্চল এলাকাতে আক্রান্তরা যেমন চিকিৎসা করাতে পারেন না, তেমনি সবসময় সেখানে স্বাস্থ্য কর্মীদের পক্ষে যাওয়াও সম্ভব হয় না।’

সরেজমিন দেখা যায়, বান্দরবানের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রব রয়েছে। কিন্তু সেখানে প্রতিষেধকমূলক যে কোনো পদ্ধতি ব্যবহারে উদাসীনতা রয়েছে স্থানীয়দের।

তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচেতনতা তৈরি করতে না পারলে ম্যালেরিয়া নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।

সারাবাংলা/জেএ/একে/জেডএফ

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন