বিজ্ঞাপন

‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেতে আইনি বাধা নেই’

December 23, 2017 | 9:24 am

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা এবং সুযোগ রয়েছে। দেশটির ১৯৪৮ সালের ইউনিয়ন সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট এবং ১৯৮২ সালের বার্মা সিটিজেনশিপ আইন অনুযায়ী, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেতে কোনো বাধা নাই।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপে এ তথ্য জানান। জ্যেষ্ঠ এই কূটনীতিক মিয়ানমারে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে গত ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণভাবে সবাই বলে যে নাগরিকত্ব আইনের কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়ছে। এটা ঠিক না। নাগরিকত্ব আইন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বহীন করেনি। ১৯৪৮ এবং ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের নাগরিক হতে কোনো বাধা নেই। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে যে মিয়ানমারের প্রশাসন এমন জটিলতা করে রেখেছে যাতে রাখাইনের জনগোষ্ঠী নাগরিকত্ব না পায়। আবার এই নাগরিকত্ব আইন বিষয়ে রোহিঙ্গারাও সচেতন না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশটির অন্য অঞ্চলের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কিন্তু মিয়ানমারের নাগরিক। শুধুমাত্র রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব পেতে সমস্যা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্য অঞ্চলের রোহিঙ্গারা যদি নাগরিকত্ব পেতে পারে তবে রাখাইন অঞ্চলের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব দিতে সমস্যা কোথায়।’

অনুপ কুমার চাকমা বলেন, ‘রোহিঙ্গা বিষয়টি পুরোটাই রাজনৈতিক। রোহিঙ্গারা অবহেলিত। তাদেরকে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে হবে। এই বিষয়ে সমাধান হচ্ছে দুটি। এক, প্রথমে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে হবে, তারপর নাগরিকত্বের বিষয়। দুই, আগে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ফেরত নিতে হবে, তারপর তারা নাগরিক হওয়ার আবেদন করবে।’

১৯৪৮ সালের ইউনিয়ন নাগরিকত্ব আইনের ৩ এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, সংবিধানে মিয়ানমারের উপজাতি বলতে আরাকানিজ, বার্মিজ, চীন, কাচিন, কারিন এবং মঙদের বোঝাবে।
৩ এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির ২ পূর্ব পুরুষ যদি বার্মায় জীবন কাটায় অথবা তাদের যদি এই অঞ্চলে স্থায়ী আবাস থাকে অথবা কোনো ব্যক্তির পিতামাতা এবং সে নিজে যদি এই অঞ্চলে জন্ম নেয় তবে সে বার্মার নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬ নম্বর প্যারার এইচ চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে, এই আইন তৈরির সময় বা আগে যে ব্যক্তি মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে তিনি এই আইনের বলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব লাভ করবে।

অনুপ কুমার চাকমা বলেন, ‘আবদুল হাফিজ নামের মিয়ানমারের একজন নাগরিক দেশটিতে শ্রেষ্ঠ রফতানিকারকের পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি মূলত রোহিঙ্গা এবং তাকে শনাক্তকরণের প্রমাণপত্রেও রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর বাংলাদেশে যখন বিশ্ব ইজতেমা হয় তখন প্রচুর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভিসা নিয়ে এই ইজতেমায় অংশ নেয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে মিয়ানমার আসলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে এবং রোহিঙ্গা যে তাদেরই জনগোষ্ঠী তা স্বীকারও করেছে। শুধুমাত্র রাখাইন অঞ্চলের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার ভিন্ন এবং নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি জানান, জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্ব রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সকলেই অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চেয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে ভারত, চীনসহ পুরো অঞ্চলই আক্রান্ত হচ্ছে। শান্তি, প্রগতি এবং মানবতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের বসত-ভিটায় ফিরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন