বিজ্ঞাপন

লাফার্জের সঙ্গে গ্যাস বিক্রয় চুক্তি পুনঃপর্যালোচনা করছে সরকার

January 18, 2018 | 6:36 pm

হাসান আজাদ, স্পেশাল করসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি লাফার্জ হোলসিমের সঙ্গে করা গ্যাস বিক্রয় চুক্তি (জিএসএ) পুনঃপর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ জন্য চার সদস্যের একটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জ্বালানি বিভাগে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই কমিটি গঠন করা হয়। জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সম্প্রতি বহুজাতিক কোম্পানিটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের বাইরে অতিরিক্ত গ্যাস চাইলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের পক্ষ থেকে বিইআরসির সর্বশেষ মূল্যহার অনুযায়ী নতুন দাম নির্ধারনের কথা বলা হয়। এ পরিপেক্ষিতে কোম্পানিটি পুরানো দামে গ্যাস ক্রয়ের প্রস্তাব দিলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তা নাকচ করে দেয়।

এই অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানির পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত আলভারো ডি সালাস গিমেনেজ ডি আজারেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে এক চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে দামের বিষয়টির সমাধান ও আগের দাম রাখার জন্য অনুরোধ করেন স্পেনের রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রদূতের এই অনুরোধের কারণে জ্বালানি বিভাগ কোম্পানিটির সঙ্গে গ্যাস বিক্রয় চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার উদ্যোগ নেয়।

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালেকুজ্জামান সারাবাংলা’কে বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের প্রকল্পের জন্য যে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে, তা পুরনো দামে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত যে গ্যাস চেয়েছে তার জন্য তারা পুরনো দাম দিতে চাইছে।’

পুরনো দাম কত প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘গড়ে প্রতি ঘনমিটার ৫ থেকে ৬ টাকার মতো হয়।’

খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তাদের বিইআরসির সর্বশেষ কর্মাশিয়াল দামে কেনার জন্য বলেছি। কিন্তু এই দামে নিতে চাইছে না। তারা পুরানো দামে কিনতে চাইছে।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সুরাহা করতে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির জন্য লাফার্জের পক্ষ থেকে দুইজনের নাম দেওয়া হয়েছে। আর জ্বালানি বিভাগ থেকে কালকের মধ্যে দুজনের নাম দেওয়া হবে। পরে এই কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে।’

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিটিআরসির সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য শিল্প কারখানার ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৬২ পয়সা এবং শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৭৬ পয়সা। এই দুই দামেই বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি লার্ফাজকে গ্যাস সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা করা যাচ্ছে না।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০০৩ সালে ২০ বছরের জন্য এই চুক্তি করা হয়। চুক্তির ১৪ বছর হলেও তাদের এই কোম্পানিটিকে সরবরাহ করা গ্যাসের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে এই কোম্পানিটিকে সরবরাহ করা হয় ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বাইরে আরও ৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অতিরিক্ত চেয়েছে কোম্পানিটি। চুক্তি অনুযায়ী ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দাম সর্বশেষ বিইআরসির দামে এবং চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত গ্যাস কর্মাশিয়াল দামে কেনার জন্য বলা হয়।

বিইআরসির সবশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম ১৪ বছর আগের দামে লাফার্জ সিমেন্টকে গ্যাস সরবরাহ করার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। একইসঙ্গে তাদের সঙ্গে চুক্তি পুনঃপর্যালোচনা করার জন্য বলেন। এ সময় বিইআরসি বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

এদিকে, চুক্তি অনুযায়ী পুরানো দামে গ্যাস সরবরাহ করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৪ জানুয়ারি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড একটি বিদেশি বিনিয়োগের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এই কোম্পানিটি বাংলাদেশের সিলেটের ছাতকে সিমেন্ট কারখানা স্থাপন করে। একইসঙ্গে সিমেন্টের কাঁচামাল হিসেবে গ্যাসের জন্য জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের সঙ্গে গ্যাস বিক্রয় চুক্তি করে। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস বিক্রিতে নতুন দাম প্রস্তাব এবং অতিরিক্ত চাহিদার গ্যাসের দাম নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। এই অবস্থায় চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা না হলে বাংলাদেশে স্পেনের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়বে। যেহেতু এটি বিদেশি বিনিয়োগ সে কারণে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানান রাষ্ট্রূতে।

সারাবাংলা/এইচএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন