বিজ্ঞাপন

‘শহরের ৮২ ভাগ শিশু নির্যাতনের শিকার’

February 20, 2018 | 10:40 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নিয়ম মেনে না  চলায় ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৮ জনই মানসিক বা শারীরিকভাবে শাস্তির শিকার হয়েছে। এক্ষেত্রে জরিপ চলাকাল থেকে তার এক মাস আগে পরিবার কিংবা পরিবারের বাইরে কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে বস্তি এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সিটি করপোরেশনের বস্তি এলাকার বাইরে ৮১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য শহর এলাকায় সাড়ে ৮২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ধমক, চর থাপ্পড়, কানমলাসহ বিভিন্ন বিভিন্ন নির্যাতন বোঝানো হয়েছে।

এছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা, পুষ্টি, কমওজনের শিশু, মাতৃদুগ্ধ দান, টিকা গ্রহন, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে চিকিৎসা, মাতৃত্বকালীন সেবা, প্রশিক্ষিত দাইয়ের হাতে সন্তান প্রসব, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার, হাত ধোয়া, বাল্য বিয়ে, জন্ম নিবন্ধন এবং শিশু শ্রম ক্ষেত্রে শহরের শিশুদের মধ্যেই রয়েছে পার্থক্য। বস্তিতে বসবাসকারি শিশুরা বস্তির বাইরে থাকা শিশুদের চেয়ে সব ক্ষেত্রে রয়েছে পিছিয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চাইল্ড ওয়েল বিং সার্ভে ইন আরবান এরিয়াস অব বাংলাদেশ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ ব্যাপারে সহায়তা করেছে ইউনিসেফ।

মাধ্যমিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তিতে সারাদেশের মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এখানে ৫৯ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এ বিভাগের ৭৪ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা নিচ্ছে। এছাড়া শহরঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম পরিবারের ৫ জন শিশুর মধ্যে ৪ জনই মাধ্যমিক স্কুলে পড়ে। কিন্তু গরীব পরিবারের ৫ জন শিশুর মধ্যে মাত্র ২ জন শিশু মাধ্যমিক স্কুলে যায়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও-এ পরিসংখ্যান ভবন সম্মেলন কক্ষে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

বিবিএস এর মহাপরিচালক আমীর হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কিশোর দাস, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব কাজী আশরাফ  উদ্দিন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি অ্যাডোয়ার্ড বেগবেদার। বক্তব্য রাখেন জরিপের ফোকাল পয়েন্ট অফিসার এ কে এম আশরাফুল হক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশু শ্রমে যুক্ত। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ বসবাস করে শহরের বস্তিতে। ধনী পরিবারের চেয়ে গরীব পরিবারের শিশুরা পাঁচগুন বেশি শিশু শ্রমে জড়িত। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে খুলনায় বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি, ৬৬  শতাংশ। আর সবচেয়ে কম সিলেটে, ৪০ শতাংশ।  শহরে বসবাসকারী ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সের ৫ জন মহিলার মধ্যে ২ জন এবং ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সের ৫ জনের মধ্যে তিন জন মহিলাই জানান, তাদের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগেই।

বিজ্ঞাপন

বলা হয়েছে  বস্তি এলাকার ২০-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার শহুরে মহিলাদের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।  শহরের প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে মাত্র একজনের জন্ম নিবন্ধন সনদ রয়েছে। তবে বস্তি এলাকায় শিশুদের জন্মনিবন্ধনের হার তুলনামূলক কম এবং বাল্যবিয়ের হার বেশি।

প্রতিবেদনে শিশুর পুষ্টি বিষয়ে বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সিলেটে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।  ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি ৪ জনে ১ জন খর্বাকৃতির শিকার। এছাড়া প্রতি ৫ জনে ১ জন ওজনহীনতায় ভুগছে। বস্তি এলাকার শিশুদের খর্বাকৃতির ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় তিনগুণ বেশি। প্রতি ৫ জনে তিন জন শিশু জন্মেও এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ পানের সুযোগ পায়।  জন্মের পরপর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বস্তির মায়েরা এগিয়ে আছেন।

১২ থেকে ২৩ মাস বয়সি প্রতি ১০ জন শিশুর ৯ জনেই জীবন রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ টিকার আওতায় এসেছে। তবে বস্তি এলাকার এ হার কিছুটা কম। বস্তির প্রতি জনের মধ্যে ৭ জন টিকার আওতায় এসেছে।

জরিপ এলাকার মধ্যে জন্ম গ্রহণকারী প্রতি ৫ জন শিশুর ৩ জন দক্ষ দাইয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে। তবে দরিদ্র পরিবার গুলোতে শিশু জন্মের সময় এ সেবা প্রাপ্তির হার কম। প্রতি ১০ জনে মাত্র ৪ জন শিশু দক্ষ দাইয়ের মাধ্যমে ভুমিষ্ঠ হয়েছে। জরিপ অনুযায়ি দক্ষ ব্যর্থ এ্যাটেনডেন্টের সংখ্যা তুলনা সবচেয়ে বেশি, ৮০ শতাংশ, সবচেয়ে কম সিলেটে ৫১ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী বিভাগ। বিভাগের ৬২ শতাংশ পরিবারে যথাযথভাবে হাত ধোয়ার সুবিধা রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বরিশাল বিভাগ মাত্র ৪৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে দেশের শহরঞ্চলে ৫৫ শতাংশ পরিবারে হাত ধোয়ার সুবিধা রয়েছে। হাত ধোয়ার সুবিধা বলতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাবান ও পানি ব্যবস্থা বুঝানো হয়েছে। সার্বিক ভাবে শহরঞ্ছলের উন্নত স্যানিটেশনের হার ৫৭ শতাংশ। তবে বস্তি এলাকার এ হার মাত্র ১৯ শতাংশ।

ইউনিসেফের আবাসিক প্রধান বলেন, ২০১৫ সালে দেশের শহরাঞ্চলে সাড়ে ৫ কোটি মানুষ ছিল। ২০২৯ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৮ কোটি ১০ লাখে।

শহরের সার্বিক ব্যবস্থাপণায় সামষ্টিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। এসডিজি বাস্তবায়নে শিশু অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। শহর ও বস্তির মধ্যে ব্যবধান রয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, সরকার শিশুদের সুরক্ষায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসডিজি বাস্তবায়নে এ প্রতিবেদন বগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সারাবাংলা/জেজে/এমএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন