বিজ্ঞাপন

শিশুদের আবদারে কাটল বইমেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর

February 9, 2019 | 12:05 am

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সময়ের পথ পরিক্রমায় এবারের ‘অমর একুশেগ্রন্থ মেলা’র পার করেছে তার প্রথম সপ্তাহ। আজ তার অষ্টম দিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কারণে মেলার নিয়মানুয়ায়ী শিশুদের উচ্ছ্বসিত পদচারণার মধ্য দিয়ে এরইমধ্যে শুরু হয়েছে আপামর বাঙালির প্রাণের মেলা ‘বইমেলা’র এবারের ৮ম দিনের কার্যক্রম। এদিনের শুরুতেই ছিল শিশুপ্রহর। যা এবারের মেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর।

এদিনের এ শিশুপ্রহর উপলক্ষে সকাল ১১টায় মেলার প্রবেশ পথ খুলে দেওয়ার পর থেকেই সচেতন অভিভাবকদের হাতে হাত রেখে মেলার বাংলা একাডেমি ও তার পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে শিশুরা। এদের কেউ কেউ বাবা-মায়ের হাত ধরে, কেউ ভাই-বোনের হাত ধরে, আবার কেউ কেউ এসেছেন চাচা কিংবা চাচির সঙ্গে। মেলায় প্রবেশের জন্য সকাল থেকে অপেক্ষার অবসান আর মেলা প্রাঙ্গণের বিস্তৃত পরিসরের জায়গায় প্রবেশ করেই শিশুদের উচ্ছ্বসিত নির্মল পদচারণা আর তাদের প্রসন্নহাসি, উল্লাস, দৌড়াদৌড়ি, খুনসুটি, লাফালাফি এবং পছন্দের বই কিনে নেওয়ার আবদারের মধ্য দিয়ে জমে ওঠে মেলার উভয় প্রাঙ্গণ।

বিজ্ঞাপন

শিশুদের পদচারণায় মুখর মেলার এমন পরিবেশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে কথা হলো কবি ও সাংবাদিক হক ফারুক আহমেদ ও তার জীবনসঙ্গী সরকারি চাকরিজীবী তার স্ত্রী মেহেরী হাসানের সঙ্গে।

হক ফারুক আহমেদ সারাবাংলা’কে জানালেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ সপ্তাহের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শুধু শিশুদের জন্য মেলার সময় বরাদ্দ করেছে। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাতেই আমরা আমাদের সন্তানদের বইমেলায় নিয়ে এসেছি। কেননা, এই সময়ে শিশুরা তাদের অভিভাবকদের হাত ধরে নির্বিঘ্নে মেলা প্রাঙ্গণের এদিক থেকে ওদিক ঘুরে বেড়াতে পারে, বই দেখতে ও কিনতে পারে। তাছাড়া আমার প্রথম সন্তান মায়ান একটু বড় হয়েছে। ওকে বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করাতে এবং ওর যেহেতু সিসিমপুর, ডাইনোসর, ইকরি-মিকরি, বিভিন্ন জীব-জন্তু বিষয়ের বইয়ের প্রতি ভালোলাগা জন্মেছে তাই এগুলো কিনে দিতে এসেছি।

বিজ্ঞাপন

এই সময়ে কবি হক ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথায় যোগ দিলেন তার জীবনসঙ্গী সরকারি চাকরিজীবী মেহেরী হাসান। তিনি বললেন, এই সময়ের ছেলেরা একটু বড় হলেই বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। মোবাইলে গেম খেলার প্রতি ঝুঁকছে, কিন্তু সেই তুলনায় বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না। এমন চিন্তা থেকেই মূলত আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছি বইমেলায়, যাতে এখানে নিয়ে এসে বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায় এবং বইয়ের প্রতি মনোযোগী করা যায়।

তাদের সঙ্গে আসা পুত্র মায়ানের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, মেলায় এসে অনেক ভালো লাগছে। বেশকিছু বইও কিনেছি। আরও কিনব। আবারও মেলায় আসব।

এদিকে, মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বিভিন্ন শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললে, তারা জানালেন মেলায় শিশুপ্রহরগুলো শিশুদের জন্য। এ সময়ে পুরো প্রাঙ্গণই থাকে শিশুদের। এই সুযোগটাই আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে দেখা গেল-মেলায় আগত শিশুরা তাদের অভিভাবকদের হাত ধরে নির্বিঘ্নে মেলা প্রাঙ্গণের শিশুচত্বরে যেমন ঘুরে বেরিয়েছেন, তেমনই ঘুরে বেরিয়েছেন মেলার অন্যান্য প্রাঙ্গণেও। ঘুরে ঘুরে এক একটি স্টল-প্যাভিলিয়নে গিয়ে রঙবেরঙের বই দেখেছে। মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে গিয়ে অভিভাবকরা বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পছন্দের বইটি কিনেও দিচ্ছেন।

মেলায় আসা এক মা বলেন, ‘বাচ্চার পড়াশোনার সে রকম বয়স হয়নি এখনও। বিভিন্ন ধরনের ফল ফুল পশু-পাখির ছবি দেখে দেখে যেন বলতে পারে, এ জন্য সেসব বই খুঁজছি।’

সরকারি কর্মকর্তা আনিস আহমেদ জানান, ছোট বয়স থেকেই বই পড়ার ভিত্তিটা মজবুত করলে বইয়ের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় অনাবিল আনন্দ। তাই ছোটোবেলা থেকেই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসা।

শুধু বই নয়, শিশুদের কাছে সকালে মেলার মূল আকর্ষণ ছিল শিশুচত্বরে সিসিমপুরের পরিবেশনা। তবে সে পরিবেশনার আগে মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন।

এদিকে, এদিনের মেলার শিশুপ্রহরের সময় শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে মেলায় এসেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। তিনি এবারের মেলার সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে অবস্থিত শিশুচত্বরে সিসিমপুরের মঞ্চে বিভিন্ন শিশুর সঙ্গে খেলা করেন, আড্ডা দেন, গল্পও করেন।

এ সময় আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ইউএসএআইডি’র সহযোগিতায় সিসিমপুর চলছে। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান যা নিউইর্য়কের কিছু কার্টুন চরিত্রের আদলে সৃষ্টি।

তিনি বলেন, ‘এটি শুধুমাত্র টিভি অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাও। এর মাধ্যমে শিশুরা ভাষা, নৈতিকতা এবং মনন সম্পর্কে জানতে পারে। আমরা আমাদের সময়ে থাকা কার্টুন চরিত্রের সঙ্গে বড় হয়েছি। আর এখন আমাদের শিশুরা বড় হচ্ছে হালুম, ইকরি কিংবা টুকটুকির সঙ্গে।

আল রবার্ট মিলারের কথা শেষে মঞ্চে আসে শিশুতের প্রিয় চরিত্র হালুম, ইকরি, শিকু, টুকটুকি। এরপর শিশুরা তাদের এই প্রিয় চরিত্রদের সঙ্গে আনন্দযজ্ঞে মেতে ওঠে।

সারাবাংলা/এইচএস/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন