বিজ্ঞাপন

শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর ওই ডালে ডালে…

December 15, 2018 | 2:25 pm

।।এসএম মুন্না ।।

বিজ্ঞাপন

আজ পহেলা পৌষ। শীতের সূচনা দিন। বিদায় নিল হেমন্ত। পৌষ আর মাঘ মাস নিয়ে শীতকাল। পঞ্জিকার হিসেবে আজ শীতকালের শুরু। কিছুদিন ধরেই উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীত তার হালকা কামড় বসাচ্ছে। তবে শহরাঞ্চলে এখনও শীতের দেখা নেই। পুরোদমে শীত অনুভূত করতে হলে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে, সে রকম বলা হচ্ছে আবহাওয়া বিভাগ থেকে।

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে পৌষ ও মাঘ (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি) এই দুই মাস শীতকাল শুরু হলেও বাস্তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে বলে বাংলাদেশের সূর্যের রশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। ফলে তাপমাত্রার পরিমাণ কমতে থাকে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চলে ২০ থেকে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বজায় থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর প্রভাবে শীতকালে কিছুটা বৃষ্টিপাতও হয়। বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের মাত্র ৪ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয় এ ঋতুতে। গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পশ্চিম ও দক্ষিণে ২ সেমির কম থেকে উত্তর-পূর্বে ৪ সেমির সামান্য কিছু বেশি হয়ে থাকে। এ বায়ু ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মোটামুটিভাবে গঙ্গা অববাহিকা অনুসরণ করে প্রবাহিত হয়।

শীতের রাত দীর্ঘ। দিন ছোট।

বিজ্ঞাপন

শীতের অতিথি পাখিরাও এসে গেছে। পাখিদের কলকাকলিতে মুখর নদী-নালা-খাল-বিল-হাওর-বাঁওড়। ঢাকার ফুটপাতজুড়ে শীতের নানারকম মুখরোচক পিঠেপুলির পসরা। মা-বোনদের অনেকেই ঘরে বসে যান চিতই, ভাঁপা, নকশি পিঠা, পাটিসাপটা, চিকন সেমাই, জামাই-তোষণ পিঠাসহ নানারকম পিঠা-পুলি তৈরি করতে। সে ক্ষেত্রে ঘরের লোকের পাশাপাশি পাড়া-পড়শিরাও বাদ যান না পিঠা-পুলির আস্বাদন থেকে। সকাল বেলা রোদ পোহাতে পোহাতে খেজুরের রস পানের মজাই আলাদা।

বিত্তবানদের কাছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও আরামদায়ক আর উপভোগ্য ঋতু এই শীতকাল। কিন্তু গরিব মানুষের কাছে এ ঋতু দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার। শীতবস্ত্রের অভাবে তাদের নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।

শীত নিয়ে বন্দনা আছে বাংলা সাহিত্যেও। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন- শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর ওই ডালে ডালে…, কিংবা পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয় রে চলে আয় আয় আয়…।

বিজ্ঞাপন

বাংলার প্রকৃতির নানা লাবণ্য আর রিক্ততার, বিষাদ আর আনন্দের ব্যতিক্রমী রূপকার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় শীতের বর্ণনা পাওয়া বিষাদ, স্মৃতিময়তা, সৌন্দর্য আর মৃত্যুর অনুষঙ্গে । মৃত্যুর আগে কবিতায় তিনি লিখেছেন- আমরা হেঁটেছি যাঁরা নির্জন খড়ের মাঠে পৌষ সল্পব্দ্যায় /দেখেছি নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল কুয়াশার..। ওই কবিতায় ফসলরিক্ত মাঠের শিয়রে চাঁদকে চুপে এসে দাঁড়াতে দেখা যায়। লিখেছেন ‘যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ/কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে…। আবার ইঁদুর নরম রোদে রেশমের মতো দাঁতে মাখিয়াছে খুদ, এ রকম বহু বিরল প্রতিমা ও চিত্রকল্পে জাদু ছড়িয়ে আছে তার কবিতায়।

শীতে রকমারি ফুল ফুটে। রুক্ষ, শুষ্কতার মধ্যেও স্নিগ্ধ ফুলের রঙবাহার ও গন্ধ মন কেড়ে নেয়। অনেক ধরনের বাহারি ফুল রয়েছে, যা শীতকালেই ফোটে। ঘন কুয়াশার ঘোর, শিশির ভেজা রাত। ধুলোমাখা বিবর্ণ আবহে কিছুটা স্বাদ জাগিয়ে তোলে শিশিরে ভেজা শীতের এসব মৌসুমি ফুল। শীতের বিবর্ণ প্রকৃতিকে বর্ণিল রঙ ছড়ায় বলে এগুলোর বিশেষ সমাদর রয়েছে। বেশিরভাগ বিদেশি প্রজাতির। শীতে ফোটা ফুলগুলোর মধ্যে বেশিরভাগের বাংলা নাম নেই। শীত শেষ হলেই এরা হারিয়ে যায়।

নিসর্গিক বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেন, ‘পৌষ এলেই ফুলে ফুলে ভরে উঠবে বাগান। এরইমধ্যে ফুটতে শুরু করে দিয়েছে ডালিয়া, গাঁদা, কালী গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, মোরগফুল, লিউপিন, কারনেশন, জিনিয়া, ডায়ন্থাস, ক্যারিওপসিস, বর্ষাতি কসমস, মর্নিংগ্লোরি, কসমস, ফকস, সূর্যমুখী, আস্টার, পপি, হলিহক, কর্ন ফাওয়ার, সুইট সুলতান, সুইট উইলিয়াম, অ্যাজিরাটাম, পেনসি, পিংক, গ্যালাডিয়া, বোতাম ফুল, সুইট পি, পেটুনিয়া, পর্তুলেকা, স্যালভিয়া, ভারবেনা, দোপাটি, লুপিন হরেকরকম ও রঙ-বেরঙের গোলাপসহ নানা রকম ফুল।

বিজ্ঞাপন

নানা রকম সবজিতে ভরপুর থাকে হাট-বাজার এই শীতকালেই। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, মটরশুঁটি, পালং শাক ইত্যাদি মিলবে শীতকালজুড়ে।

নয়ন ভোলা সর্ষে ফুল দেখা যায় এই শীতে। এই শীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় দেশি মাছ বিশেষ করে পুঁটি, শিং, কই, মেনি মাছ, টাঁকি মাছ।

কমলালেবু এ ঋতুর ফল। বরই পাওয়া যায় ঋতুতে। পৌষালি শীতে গ্রামাঞ্চলে মেলে টাটকা খেজুরের রস।

নানা উপাচার, অনেক উপহার আর সেই সঙ্গে নানা আপদ সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়েছে পৌষের পথচলা। এ চলা থামবে না যতদিন না কোকিল পাতার ঘোমটার ভেতর থেকে গলা ফাটিয়ে বলবে ‘কুহু’। যতক্ষণ না শীত নিজেই তার বিদায় মুহূর্তের ঘোষণা দেবে :  ‘মনে করো আমি নাই/বসন্ত এসে গেছে…।

ছবি : আব্দুল মোমিন

সারাবাংলা/পিএম

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন