বিজ্ঞাপন

শুরু হলো না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

January 23, 2018 | 3:00 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার: বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আর কৌশলগত কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া  পিছিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে নতুন দিনক্ষণও  দিতে পারছে না তারা।

মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন নিয়ে অনেক কাজই বাকি রয়েছে। নাফ নদের তীরে প্রত্যাবাসনের জন্য এখনো কোনো স্থান নির্ধারণ করা যায়নি। ট্রানজিট পয়েন্টগুলোতে এখনো তাঁবু নির্মাণ করা হয়নি। তবে বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের পক্ষে প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ চালানো হচ্ছে দ্রুত। যে কোনো সময় প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করা হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কাজ সম্পাদনে গঠিত যাচাই-বাছাই কারিগরি কমিটি এ সব তথ্য জানায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কারিগরি (টেকনিক্যাল) কমিটির আহ্বায়ক এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) কোনোভাবেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি মনে করেন, এটা এমন কাজ নয় যে এখুনি প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। তবে তার বিশ্বাস, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবেই। প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত জরুরি কাজ গুলো গুছিয়ে নেওয়ার পর যে কোন সময়ই তা শুরু করা সম্ভব হবে।

গত ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারের নেপিডো শহরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সম্পাদিত চুক্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে। মিয়ানমারে এই চুক্তি সম্পাদনের পর থেকেই বাংলাদেশে সরকারি ভাবে তোড়জোড় শুরু হয় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে।

যাওয়ার আগে ৭ বিষয় নিশ্চিত করতে চায় রোহিঙ্গারা

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ সরকার যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছে সেখানে রোহিঙ্গা এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছে মিয়ানমার এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি করা হয়েছে। তারা বলছে, তাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর আগে এই ৭ বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গাদের ৭ দফা হল, ফেরত পাঠানোর আগে মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। রোহিঙ্গা পরিচয়ে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। তাদের বাড়ি-ঘর এবং গ্রাম ফিরিয়ে দিতে হবে। মিয়ানমারে অন্য জাতি-গোষ্ঠীর মতো তাদের মর্যাদা দিতে হবে। হত্যা-ধর্ষণ ও জাতিগত নিধনের বিচার করতে হবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইইউ ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধি যুক্ত করতে হবে ও আগের কোনো ঘটনায় তাদের না ফাঁসানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে।

চুক্তির সাফল্যের বিষয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যেকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার তাদের অধিবাসীদের বাংলাদেশে অভিমুখী হতে বিরত রাখবে। তা স্বত্বেও প্রতিদিন সীমান্তের কোনো না কোনো পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পরেও কয়েকশত রোহিঙ্গা এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিজ্ঞাপন

উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চুক্তি রক্ষার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। তবে মিয়ানমারের চুক্তি কখনও সুখকর ছিল না। তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে না। ১৯৯২ সাল থেকে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা তাদের নাগরিকত্ব যাচাই বাছাই করে ছাড়পত্র প্রদানের পর ২০১৪ সালে মিয়ানমারের তৎকালীন সরকারের সাথে প্রতিশ্রুতির পরেও এদের ফেরত নেওয়া হয়নি। শুরু তাই নয় তারা আরও অনেক চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এবারেও যেন তাই না হয়।

আশাবাদী জেলা প্রশাসক

কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে বড় অর্জন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে মিয়ানমারকে রাজি করে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। মিয়ানমারের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে এদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের অবশ্যই তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এমএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন