বিজ্ঞাপন

শেলটেকের স্থপতি নিখোঁজ: ‘টাকা তোলা’ নিয়েই এগোচ্ছে তদন্ত

July 11, 2018 | 9:47 pm

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: চারদিন ধরে নিখোঁজ শেলটেক কোম্পানির প্রধান স্থপতি এ বি এম মাহফুজ নবীনের কোন হদিস খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে মাহফুজ নিখোঁজ হওয়ার আগে নিজেই ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলেছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেই ‘টাকা তোলা’ নিয়েই নিখোঁজের তদন্ত এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভাষানটেক থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন।

বুধবার (১১ জুলাই) বিকেলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাহফুজ বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে ওই বুথের সরবরাহ করা ভিডিও ফুটেজে মাহফুজকে টাকা তুলতে দেখা গেছে। এছাড়া এটিএম বুথে প্রবেশ করার সময় দুই পাশের দুই দোকানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজেও মাহফুজকে প্রবেশ এবং বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাহফুজ নবীন অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন। অফিসে যাওয়ার সময় কেন তার ২০ হাজার টাকা লাগবে তা বোঝা যাচ্ছে না। এরকম ক্ষেত্রে টাকা তুলে কোথাও নিরুদ্দেশ হওয়াটাই অতীতের নিখোঁজের ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে।’

বিজ্ঞাপন

মাহফুজের ছোটবোন জামাই ইমরান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসআই রুহুল আমিনের সাথে ইমরান নিজেও গিয়ে দেখেছেন মাহফুজ টাকা তুলতে বুথে প্রবেশ করছেন এবং বেরিয়ে যাচ্ছেন। এখন তিনি নিজে কোথাও নিরুদ্দেশ হলেন নাকি কেউ তাকে নিয়ে গেছে তা বুঝতে পারছেন না বলে জানান ইমরান।’

তিনি আরও জানান, গত কয়েক দিনে ঢাকার সব থানা, হাসপাতাল, শেলটেক অফিস, খুলনার গ্রামের বাড়িসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। কোথাও তিনি যাননি। এমনকি গত কয়েকদিনে তাকে অপহরণ করেছে এমন কারো ফোনও পাওয়া যায়নি। সাধারণত কাউকে অপহরণ করা হলে মুক্তিপণ চেয়ে স্বজনদের কাছে ফোন করা হয়ে থাকে। মাহফুজের ক্ষেত্রে এর কোনটি হয়নি।

এদিকে, মাহফুজ নবীনের সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী এশা স্বামীকে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অসুস্থ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান শেলটেকের প্রধান স্থপতি মাহফুজ নবীন গত রোববার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ভাষানটেকের বাসা থেকে পান্থপথের অফিসের উদ্দেশে বের হওয়ার পর তার আর কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। এরপর ৯ জুলাই মাহফুজের ছোটবোন জামাই ইমরান হোসেন ভাষানটেক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

জিডি করার কারণ হিসেবে ইমরান বলেন, ‘কেউ তাকে অপহরণ করেছে কিনা এই সন্দেহে জিডি করা হয়েছে। তবে এরকম কেউ বাসায় ফোন করেননি। তার ফোন সব সময় বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’

মাহফুজকে র‌্যাব আটক করেছে কিনা জানতে চাইলে র‌্যাবের মিডিয়া শাখার সহকারী পরিচালক মেজর আব্দুল্লাহ আল মেহেদি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাহফুজ নবীন নামে গত কয়েক দিনে কাউকে আটক করা হয়নি।’

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিবি কিংবা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কেউ মাহফুজ নামে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। জিডির বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অতীতে যারা মিসিং হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কেউ পরকীয়ায় লিপ্ত, কেউ পাওনা টাকার জেরে পালিয়ে আছে, কাউকে অপহরণ করা হয়েছে আবার দেখা গেছে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ঘর ছেড়েছে। মাহফুজের বেলায় আসলে কোনটি হয়েছে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করলে বোঝা যাবে।’

এর আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হয়ে মেয়েকে বিমানবন্দর থেকে আনতে গিয়ে সাবেক কুটনীতিক মারুফ হোসেন নিখোঁজ হন। ওই দিন রাতেই ৩জন লোক এসে তার বাসা থেকে ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যান। পরে তার গাড়িটি বসুন্ধরা ৩০০ ফুট সড়ক এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। একই বছরের ২৯ আগস্ট ধানমন্ডির স্টার কাবাব থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহাম্মেদ নামে এক তরুণ। আজও খোঁজ মেলেনি তার।

আরও পড়ুন: ৩ দিন ধরে নিখোঁজ শেলটেকের স্থপতি মাহফুজ নবীন

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন