বিজ্ঞাপন

শেষ মুহূর্তে বাজেটের আকার কমালেন অর্থমন্ত্রী

June 6, 2018 | 10:31 am

।। জিমি আমির।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: শেষ মুহূর্তে বাজেট ছোট করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ৩০ এপ্রিল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের পর মূল বাজেট কিছুটা ছোট করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা কমিয়ে সবশেষ বাজেটের আকার নির্ধারণ করেছেন ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫শ ৭৩ কোটি টাকা। যা অর্থমন্ত্রী সংসদে উত্থাপন করবেন ৭ জুন।

সাধারণত প্রতি বছর বাজেটের আগে এপ্রিল মাসের মধ্যেই বাজেটের মূল আকার নির্ধারণ করে থাকে অর্থমন্ত্রণালয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারেও ৩০ এপ্রিল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নতুন বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এর আগে চলতি অর্থবছরেও বাজেটের আকার ৫ লাখ টাকা করার বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু প্রায় কয়েক দফা আকার নির্ধারণের পর শেষ মুহূর্তে কাঁটছাট করলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখেই অর্থমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের এই পরিবর্তন।

গত সোমবার সাংবাদিকদের কাছে অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এবার বাড়তি করের বোঝা থাকবে না মানুষের ওপর। বরং মানুষ হয়রানি ছাড়া কর দেবে। তাই, কর না বাড়ালেও কর আদায় বেড়ে যাবে। সেই হিসেবে আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে নতুন বাজেট। এবার অল্প কিছু বিলাস পণ্যে ভ্যাট ও সম্পুরক শুল্ক বসানো হবে। ভ্যাটের স্তর ৯টি থেকে ৫টিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। করপোরেট কর কমানো হচ্ছে। এসব বিবেচনাতেই বাজেটের আকার কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পে-স্কেল অনুযায়ী ৫ শতাংশেরও বেশি হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা থাকছে, বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। খরচের এই চাহিদা মেটাতে অর্থমন্ত্রী তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে চান। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর থেকে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, এনবিআর-বহির্ভূত করব্যবস্থা থেকে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

বাড়তি খরচের চাহিদা মেটাতে অর্থমন্ত্রীকে বড় অংকের ঘাটতি রাখতে হচ্ছে নতুন অর্থবছরে। বাজেটে ঘাটতি থাকছে এক লাখ ১৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের-জিডিপি ৪.৯ শতাংশ। অবশ্য বাজেটে চার হাজার ৫১ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা থাকছে। ওই অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৭ শতাংশ।

ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ঋণ নেবেন ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১০ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ হবে। ফলে সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে চার হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিতে এক হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা, অন্যান্য স্কিমে ৩২৭ কোটি টাকাসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মোট এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা খরচের হিসেব করা হয়েছে।

বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৯ হাজার ১৪২ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে এক লাখ ৯৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও সে তুলনায় বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়েনি। দারিদ্র্য বিমোচন ও সম্পদের বৈষম্য কমার হারও হ্রাস পেয়েছে। অর্থমন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন।

চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছিল ৫.৫ শতাংশ, কিন্তু বেশ কয়েকমাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা বাড়িয়ে ৫.৮ শতাংশ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে নতুন অর্থবছরে তা ৫.৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা থাকছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেএএম

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন