বিজ্ঞাপন

শ্রীলঙ্কার আশা বাঁচিয়ে রাখলেন পেরেরা

January 21, 2018 | 7:41 pm

বিশেষ প্রতিনিধি, মিরপুর থেকে

বিজ্ঞাপন

এক দিনের মধ্যে কী ভীষণ অচেনা মিরপুরের উইকেট! বল ব্যাটে আসছে কিছুটা ধীরে, বাড়তি বাউন্সও মিলছে। ব্যাটসম্যানরাও ‘সাহায্য’ করায় ১৯৮ রানই হয়ে গেল অনেক কিছু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এই রান টপকাতে প্রায় ৪৫ ওভার পর্যন্ত খেলতে হলো শ্রীলঙ্কাকে। ত্রিদেশীয় সিরিজে জিইয়ে থাকল রোমাঞ্চ, ৫ উইকেটের জয়ে শ্রীলঙ্কা বাঁচিয়ে রাখল ফাইনালের আশা।

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সেজন্য আলাদা করেই ধন্যবাদ দেবেন থিসারা পেরেরাকে। ৪ উইকেটের পর ২৬ বলে ৩৯ রানে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন নিজের ওপরেই।

শুক্রবারের গমগমে গ্যালারি আজ আবার হয়ে গেল দর্শকশুন্য। মেরেকেটে ৩০০ দর্শকও হবে নাকি সন্দেহ, সকালে অবশ্য জিম্বাবুয়ের চার-ছয়ে এর মধ্যেও কয়েকজন তালি আর শিস দিচ্ছিলেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংকে সেটিও উদ্দীপ্ত করতে পারল না! কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে এই রান টপকাতে ৪৪.৫ ওভার খেলতে হবে, কে জানত!

বিজ্ঞাপন

অথচ এতোটা কাঠখড় পোড়াতে হবে, শুরুতেও তা মনে হয়নি। উপুল থারাঙ্গা আজ আরও একবার ব্যর্থ, ৩৪ বলে ১৭ রানের ‘সংগ্রামী’ ইনিংস শেষ হলো চাতারার বলে বোল্ড হয়ে। এর পরেই রানের চাকাটা গতি পেল, দুই কুশলে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। ২১.১ ওভারেই হলো শ্রীলঙ্কার ১০০ রান।

এর পরেই যেন হঠাৎ করে ছন্দপতন। এক রানের জন্য ফিফটি পেলেন না কুশল পেরেরা, ৫৭ বলে ৪৯ রান করে ক্যাচ দিলেন বদলি উইকেটকিপার মারফিকে। জিম্বাবুয়ের জন্য হুট করে ‘ব্লেসিং’ হয়ে আসা মুজারাবানির বলে একটু পরেই বোল্ড হয়ে গেলেন কুশল মেন্ডিস। ১১০ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় তিন উইকেট। হঠাৎ করেই যেন রান তোলাটা কঠিন হয়ে গেল। ১১৭ রানে যখন নিরোশান ডিকওয়েলাও আবার সেই মুজারাবানির বলেই ফিরে গেলেন, ঈশান কোণে মেঘ দেখতে শুরু করল শ্রীলঙ্কার।

রান তোলাটা হঠাৎ করেই যেন কঠিন হয়ে গেল। আসিলা গুনারত্নেকে নিয়ে অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমাল ঢুকে গেলেন খোলসে। তবে বিপর্যয়টা সামাল দিলেন দুজন, ৯ ওভারে ২৮ রানের জুটিটাও পরিস্থিতির বিচারে তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুজন যখন একটু একটু করে এগিয়ে নিচ্ছেন, তখনই আবার জিম্বাবুয়ের আঘাত। দারুণ বল করা কাইল জার্ভিসের বলে মারফির তার চেয়েও দারুণ এক ক্যাচে ফিরে গেলেন গুনারত্নে। ১৪৫ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় আরেকটি উইকেট।

বিজ্ঞাপন

তবে পেরেরার জন্য মঞ্চটা সাজানোই ছিল। এই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার মলিন জার্সিতে যা একটু উজ্জ্বল ছিলেন তিনিই। আজ আসল কাজটা বল হাতেই সেরে ফেলেছিলেন, তবে ব্যাট করতে নামার সময় কাজটা সহজ ছিল না মোটেই। তখনও জয়ের জন্য দরকার ৫৪ রান, আরেকটি উইকেট হারালেই ঘটতে পারত বিপদ।

পেরেরা খেললেন তার স্বাভাবিক খেলাই। শুরুতেই অবশ্য আউট হয়ে যেতে পারতেন, একটুর জন্য তার ক্যাচের নাগাল পাননি মাসাকাদজা। তবে খানিক পরেই শট খেলা শুরু করেছেন। কঠিন মনে হওয়া উইকেটেও তিন ছয়ে জানান দিয়েছেন, নিজের সেরা ফর্মেই আছেন এখন। জয়সূচক রানও ছয় মেরে নেবেন, সেটা তো চিত্রনাট্যেই লেখা ছিল!

শ্রীলঙ্কার জয়ের পথটা পেরেরা অবশ্য প্রশস্ত করেছেন বল হাতেই। মাসাকাদজা ও মিরে যখন জিম্বাবুয়েকে বেশ একটা স্বস্তির শুরু এনে দিয়েছেন, তখনই পেরেরার আঘাত। মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মাসাকাদজা, ৪৪ রানে প্রথম উইকেট হারাল জিম্বাবুয়ে।

ক্রেইগ আরভিনের রানখরা চলতেই থাকল। খানিক পরেই ২ রান করে সেই থারাঙ্গাকেই ক্যাচ দিলেন পেরেরার বলে। জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডার গুড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও একটু পর সেরে ফেলেছেন পেরেরা, মিরেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ২১ রানে। ৫৬ রানে তখন জিম্বাবুয়ে হারিয়েছে ৩ উইকেট। ৭৩ রানে রাজাকেও হারিয়ে ফেললে বেশ বিপদেই পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

বিজ্ঞাপন

তবে ব্রেন্ডন টেলর আরেক প্রান্তে অবিচল ছিলেন। ম্যালকম ওয়ালারের সঙ্গে ৫৬ রানের পঞ্চম উইকেটের জুটিতে সামাল দিয়েছেন বিপর্যয়। ওয়ালার ২৪ রান করে ফিরে যান, আবারও ধস জিম্বাবুয়ের। দুই রানের মধ্যে আরও দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। তবে টেলর তখনও ছিলেন, জিম্বাবুয়ের জন্য ২৩০-২৪০ রান মনে হচ্ছিল সম্ভব।

তখনই আবার দৃশ্যপটে পেরেরা। আবারও থারাঙ্গার সঙ্গে যুগলবন্দিতে আঘাত, টেলর ফিরে গেলেন ৫৬ রান করে। শেষ পর্যন্ত ২০০ করতে পারল না জিম্বাবুয়ে, শেষ দিকে তিন উইকেট নিয়ে লেজটা মুড়ে দেওয়ার কাজ করেছেন নুয়ান প্রদীপ। তবে আসল কাজটা করেছেন পেরেরাই, এই সিরিজে শ্রীলঙ্কার আশা বেঁচে আছে তো তার জন্যই!

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন