বিজ্ঞাপন

শ্রীহীন মেলা মঞ্চ, দর্শক উপস্থিতিও কম

February 7, 2018 | 12:48 pm

এসএম মুন্না :
অমর একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম আয়োজন বিষয়ভিত্তিক সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই আয়োজন ছাড়া মেলা পূর্ণতা পায় না। ১৯৭৪ সাল থেকে মেলা চলাকালীন সময়ে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বর্ধমান হাউসের পূর্ব পার্শ্বে রবীন্দ্র চত্বরে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ঐতিহ্য বজায় রেখে এবারও এখানে মেলা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি এই মঞ্চ থেকে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলেও দিয়েছেন এই মঞ্চ থেকে। মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে প্রথম দিন মঞ্চ এবং এর আশপাশ জমকালোভাবে সাজানো হয়। কিন্তু মেলা উদ্বোধন আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই শ্রীহীন হয়ে পড়েছে মেলা মঞ্চ। কোনো আকর্ষণ নেই। এবারের মেলা মঞ্চে নেই কোনো প্রাণ।

থাকবে কী করে? মেলা মঞ্চ ঘিরে যে সব অনুষঙ্গ থাকার, তার লেশমাত্র নেই। নান্দনিকতা তো দূরের কথা। পাড়া-মহল্লার মতো সাদামাঠাভাবে সাজানো হয়েছে মেলা মঞ্চ। তাই দর্শক-শ্রোতা টানতে পারছে না। আগে মেলা মঞ্চ নানা রকম শীতকালীন ফুল দিয়ে সাজানো হতো। এবার তাতে ভাটা পড়েছে। নামকাওয়াস্তে কিছু ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। যা এরই মধ্যে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। ফুল ফোটেনি।

মনীষীদের জনপ্রিয় উক্তি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন থাকতো মঞ্চের খুঁটিতে খুঁটিতে। এবার মঞ্চ লাগোয়া দুইটি ব্যানার ছাড়া আর কিছুই নেই। সেখানে আবার বাংলা একাডেমির লোগোর চেয়ে বড় করে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সেমিনার চলার সময় লোক সমাগম হচ্ছেই না। আগের বছরগুলোতে এই সময়ে লোক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে এখানে বসার জন্য চেয়ার পেতেন না। বিশিষ্টজনদের জন্য আলাদা বসার জায়গা ছিল। এবার তাও নেই। মাত্র ৪০-৫০টি প্লাস্টিকের চেয়ার ছাড়া মঞ্চের সামনে আর কিছু নেই। চুরি যাওয়ার ভয়ে চেয়ারগুলো রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আগে মেলা মঞ্চের সামনে লাল গালিচায় মোড়ানো থাকতো। এবার সেই ব্যবস্থা নেই। দুর্বাঘাসহীন ন্যাড়া মাঠ। স্যাঁতস্যাঁতে। কোনো যত্নের ছাপ নেই।

সোমবার মেলা মঞ্চে ছিল ‘আ জ ম তকীয়ূল্লাহ : জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। বিকেল সোয়া চারটার দিকে যখন আলোচনা শুরু হয়। তখন দর্শক ছিল মাত্র ১১ জন। এর মধ্যে চারজন নিরাপত্তা কমী। আরও যারা বসেছিলেন তারা মূলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যন্ত্রীশিল্পীরা। গ্রীণরুমে বসার জায়গা না পেয়ে এখানে তারা বসেছিলেন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলে কিছু দর্শক-শ্রোতা দেখা যায়।

মেলা মঞ্চে কেনো এই দর্শক খরা এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেলো, ‘মেলা দুইটি অংশে নিয়ে যাওয়াতে একাডেমিতে লোক সমাগম কম হচ্ছে। এ কারণে মেলা মঞ্চে দর্শক কম আসছেন। তাছাড়া দর্শক-শ্রোতা ধরে রাখার মতো কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে না ।

বিজ্ঞাপন

বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে সামনে নাতি সায়ন্ত লিজাকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুল শিক্ষিকা জাহানারা জামান। সারাবাংলা ডট নেট এর কাছে তিনি বলেন ‘একটা মেলা মঞ্চ যেমনটা জাকজমক হওয়ার কথা ছিল এবার তা দেখছি না। পাড়া-মহল্লার মঞ্চ এর চেয়ে ভালো থাকে। তিনি বলেন ‘সাহিত্যের শিক্ষক হওয়ায় আলোচনা শুনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাজে সাউন্ড আর বসার মতো কোনো পরিবেশ না পাওয়া সেখান থেকে চলে নজরুল মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি’।

এ প্রসঙ্গে একাডেমির পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ) ও মেলা কমিটির সদস্য সচিব ও ড. জালাল আহমেদ সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন, ‘মেলা মঞ্চটি বিকাশ-এর আর্থিক সহায়তা নির্মাণ করা হয়েছে। নান্দনিককতার যথেষ্ঠ অভাব ও অন্যান্য বিষয়ে অসঙ্গতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন ‘খ্বু শিগগিরই মেলা মঞ্চটি নান্দনিক করে তোলা হবে। নান্দনিক করার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির নয়। এই দায়িত্ব ইভেন্টন ম্যানেজ কোম্পানির। তাদের জিজ্ঞাসা করলে হয়তো উত্তর পাবেন’।

মেলার ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে অন্যকাজের অজুহাত দেখিয়ে তিনি বলেন ‘আমি কোম্পানির চেয়ারম্যান। মেলা মাঠে কি হলো না হলো তা আমার জানার দরকার নেই। আমার লোক আছে মাঠে তাদের খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসা করেন।’
ইলিয়াস কাঞ্চন গত ৩০ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদকের করা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেনÑনান্দনিকতার সব ছোঁয়া থাকবে এবারের মেলায়। কিন্তু এখন তার কথা মিল পাওয়া যাচ্ছে না। দোয়েল চত্বর ও টিএসসি’র দিকে দুইটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে এই ইভেন্ট কোম্পানির তত্বাবধানে। কিন্তু সেখানেও নান্দনিকতার লেশমাত্র নেই। মেলার পাঁচ দিনের মাথায় দোয়েল চত্বরের দিককার তোরণের উপরের অংশ ভেঙে গেছে। পাতলা হার্ডবোড লাগার কারণে কোথাও কোথাও এরই মধ্যে চলটা উঠে গেছে। আবার কোনো অংশে লাল সালু দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইলিয়াস কাঞ্চন কিছুই বলতে চাননি।

এদিকে মেলা প্রাঙ্গণকে ১২টি চত্বরে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো নিদের্শনা বোর্ড বা প্ল্যাকার্ড লাগানো নেই। তাই সহজে কোনটা কোন চত্বর তা জানা যাচ্ছে না। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত সেই সুবিধাও চালু হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন