বিজ্ঞাপন

‘সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’

September 18, 2018 | 10:13 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে নিজ কার্যালয়ে সারাবাংলাকে এসব কথা বলেন তিনি।

ইসি কমিশনার বলেন, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা, কমিশনের কোনো বৈঠকে আলোচনা করা হয়নি। ফলে এটা নিয়ে অযথা বির্তক হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে সব অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান আইনে রয়েছে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই যন্ত্র ব্যবহারের কোনো সুযোগ ছিল না। তবে প্রয়োজনে সংসদ নির্বাচনে যেন ইভিএম ব্যবহার করা যায়, সেজন্য আমরা আরপিও সংশোধন করেছি। তার মানে এই নয় যে, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবেই।’

নির্বাচন কমিশনের এই কমিশনার আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে হলেও আরপিও সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। সেটা মাথায় রেখেই আমরা আরপিও সংশোধন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, ভবিষ্যতে যেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে।

শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ইভিএমের মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে এটা অনেক কম সময়। আমাদের চেষ্টা থাকবে, ইভিএম মেশিনগুলো যেন অন্তত ১০ বছর ব্যবহার করা যায়। তাহলে আমাদের আর্থিক সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, ইভিএম কেনার পর এর রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়টিও দেখতে হবে। গাজীপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) তৈরি করা হবে এই ইভিএম মেশিন।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২০১০ সালে বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু আগের কমিশন ইভিএম মেশিনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা আবার নতুন করে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’ নির্বাচনে সঠিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী থেকে দক্ষ লোক নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে আমরা ব্যাপকভারে ইভিএম ব্যবহারের চেষ্টা করব।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি কমিশনার বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণসহ ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, এবং ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ চূড়ান্ত করার কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে বর্তমান কমিশনের সক্ষমতা রয়েছে। আমি নিজেও জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে আফগানিস্তান, সিয়েরা লিওন ও লাইবেরিয়ায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার কাজে সহায়তা করে এসেছি। আমাদের এইর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সংসদ নির্বাচনও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক কমিশনারেরই ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। ফলে কোনো কোনো বিষয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিমত থাকতেই পারে। এটি একটি ভালো দিক।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলে আসছে। সরকার এর ব্যবহারকে স্বাগত জানালেও বিরোধী দলগুলো এখনই এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভোটগ্রহণে রাজি নয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও বারবার বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। বছরখানেক আগে তো বটেই, গত জুলাইয়েও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সম্ভব না। তবে একমাসের মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদলায় ইসি।

আগস্টের শেষের দিকে ইসি সচিব জানান, জাতীয় নির্বাচনে একশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গত ৩০ আগস্ট ইসির সভায় সংশোধন করা হয় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ। দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। পর্যায়ক্রমে মন্ত্রিসভা হয়ে সেই প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অনুমোদন পেয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে। নির্বাচন ব্যবস্থাতে স্বচ্ছতা আনতে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে— এমনটিই বলা হয়েছে প্রকল্পের বিবরণে।

আরও পড়ুন-

ইভিএম ব্যবহারে হঠাৎ তৎপর ইসি!

একনেকের চৌকাঠে ইভিএম প্রকল্প!

ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না: সাবেক সিইসি

সংশোধিত আরপিও ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে

 আরপিও পাল্টে ৩৮২৯ কোটি টাকায় তড়িঘড়ির ইভিএম!

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন