বিজ্ঞাপন

সম্পত্তি, পরিচিতজন আর পেশাদার খুনি নিয়ে তদন্ত শুরু

July 15, 2018 | 9:02 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পেশাদার খুনিরাই মা ও মেয়ে দুজনকে হত্যা করেছে, এমন তথ্য সামনে রেখেই চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের তিনটি ইউনিট। এ ক্ষেত্রে পরিচিতজনদের দিকেও সন্দেহের তীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

তদন্ত এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে কাজ করছে নগরীর খুলশী থানা পুলিশ, নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরিকল্পিত হত্যার পরই পানির ট্যাঙ্কে মা-মেয়ের লাশ

রোববার (১৫ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নগরীর খুলশী থানার আমবাগান আটার মিল এলাকায় ফ্লোরাপাস রোডে নিজ বাড়ির পানির ট্যাংক থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

রূপালি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা শাহ মেহেরুন নেছা বেগম (৬৭) ও তার মা মনোয়ারা বেগম (৯৭) ছাড়া এই বাড়িতে আর কেউ থাকতেন না। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছে, মাকে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন দেখা গেছে। মেয়ের মাথার পেছনে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) হাসান মো. শওকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, মা-মেয়ের মরদেহ ট্যাংক থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মায়ের গলায় কাপড় পেঁচানো ছিল। মেয়ের মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন আছে। এতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, মাকে শ্বাসরোধ এবং মেয়েকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েকে জখমের কারণে রক্তের চিহ্ন বাসার মেঝেতে পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ আছে কি না, কারা খুন করতে পারে এই ধরনের নানা বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে নিশ্চিতভাবে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি।

পেশাদার খুনিদের সন্দেহ করার বিষয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া পিবিআই পরিদর্শক (চট্টগ্রাম মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুনিরা মেহেরুন নেছার দুটি মোবাইল সেট নিয়ে গেছে। তবে সিম খুলে রেখে গেছে। সিম নিয়ে গেলে তারা সহজে ধরা পড়বে, এটা জেনেই তারা সেগুলো নিয়ে যায়নি। এটা পেশাদার অপরাধী ছাড়া আর কারও মাথায় আসবে না।

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তার সন্দেহ, খুনিরা মা-মেয়ের পরিচিত হতে পারে। তারা নিছক অপরাধী কিংবা চোর-ডাকাত নন।

সন্তোষ সারাবাংলাকে বলেন, বাসায় দুটি গেইট আছে। একটি মেইন গেইট, আরেকটি ছাদের গেইট, যেটি দিয়ে ঢুকে ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে বাসার ভেতরে আসা যায়। আমরা মেইন গেইটটি বন্ধ পেয়েছি, ছাদেরটি খোলা পেয়েছি। যদি চুরি-ডাকাতির জন্য অপরাধীরা বাসায় ঢুকত, তাহলে মেইন গেইটই ব্যবহার করত। সেক্ষেত্রে তারা চলে যাবার পর মেইন গেইটটি খোলা থাকত।

বিজ্ঞাপন

‘ধারণা করছি, পরিচিত লোকজন মেইন গেইট দিয়ে ঢুকেছিল। এরপর মেইন গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তারা ছাদে উঠে ছোট গেইট দিয়ে চলে গেছে ।’ বলেন সন্তোষ কুমার চাকমা

প্রতিবেশি আনোয়ারা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসার গেইট সবসময় বন্ধ থাকত। মেয়েটা কখনও কাউকে বাসার ভেতরে যেতে দিত না। মাঝে মাঝে আমরা দেখতাম গেইট খোলা, সামনে বসে তরকারি কাটছেন। মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় জানালা দিয়ে দেখতাম, মা শুয়ে আছে, মেয়ে টিভি দেখছেন। আমাদের সঙ্গে তেমন কথা হত না।’

বড় পাহাড়ের পাদদেশে টিলার উপর চারতলা বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ২০০৬ সালে। ২০০০ সালে মেহেরুন নেছার নামে জায়গাটি কেনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। বাড়ি তৈরির সময়ই স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন মেহেরুন নেছার বোনের ছেলে বেলাল উদ্দিন।

বেলাল আরও বলেন, ‘জায়গাটা আমার খালার (মেহেরুন) নামে। এই বাড়ি তৈরি করেছি আমি নিজে। চারতলার মধ্যে নিচতলায় আমার নানী আর খালা থাকতেন। বাকি তিন তলার কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাড়িতে কোন ভাড়াটিয়া ছিল না। আমি যখন বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিই, তখনই হুমকি দিয়েছিল। সম্পত্তিগুলো খাওয়ার জন্য এলাকার সন্ত্রাসীরা দুজনকে হত্যা করেছে।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু চুরি-ডাকাতির জন্য এলে খুন করে লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে দিত না। এর সঙ্গে অবশ্যই সম্পত্তির বিরোধের যোগ থাকতে পারে। তবে এটা যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, এটা নিয়ে তেমন সন্দেহ নেই।’

ঘটনাস্থলে যাওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিচিত জন কিংবা অপরাধী যারাই করুক, খুব ঠান্ডা মাথায় মা ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য সম্পত্তি গ্রাসের চেষ্টার বিষয়টি আমাদের কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।’

খুন হওয়া মনোয়ারা বেগমের পাঁচ মেয়ে ও চার ছেলে ছিল। পাঁচ মেয়ের মধ্যে একজন আমেরিকায় ও একজন আয়ারল্যান্ডে আছেন। বাকি তিনজনের একজন ময়মনসিংহে, একজন সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে থাকেন। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত মেহেরুন নেসা মাকে নিয়ে থাকতেন।

চার ছেলের মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। এক ছেলে ঢাকায় থাকেন। আরেক ছেলে বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

আরও পড়ুন:

চট্টগ্রামে পানির ট্যাঙ্কে মা-মেয়ের লাশ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন