বিজ্ঞাপন

সহস্র আওয়াজ আসুক, নারীর মধ্য থেকে

April 25, 2018 | 10:23 pm

তেজগাঁও কলেজের পাশের সুপারশপ থেকে সংসারের কিছু কেনা-কাটা শেষে খুব সাবধানে ডানে বায়ে দেখে রাস্তা পার হচ্ছিলাম অপরদিকে রাখা প্রাইভেট কারে উঠবো বলে। ঠিক তখনি প্রায় রাস্তার ওপরে পার্ক করে রাখা টেম্পো জোরে টান দিয়ে চোখের নিমেষে আমার সামনে চলে আসলো…

বিজ্ঞাপন

আমি প্রাণভয়ে দৌড় দিয়ে ফুটপাতে উঠে গেলাম। এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের ব্যবধানে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেলাম। রাগে তখন আমার সারা শরীর কাঁপছে। নিজেকে সামলে নিয়ে জানলা দিয়ে টেম্পোর ভেতরে বসা হেলপারের কলার চেপে ধরলাম। প্রশ্ন করলাম কেন এমন করলো? জবাবে সে বলল, ভুল হয়েছে, এরপর মাফ চাইতে থাকলো।

আমি ঠিক করলাম তাদের পুলিশে দেবো। সেই সময় আমার গাড়ির ড্রাইভার দৌড় দিয়ে আসছে দেখে হেল্পার আমার হাত টান দিয়ে সরিয়ে দিলো। এই সুযোগে টেম্পোর ড্রাইভার টেম্পো নিয়ে পালিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় গলা বের করে দিয়ে বলল, ম্যাডাম মজা নিলাম…….কিছু মনে কইরেন না।

টেম্পো ড্রাইভারের মজা আজ আমার জীবন নিয়ে নিতে পারতো। আমি হতে পারতাম রাজীব বা রোজিনার মতো একজন।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্র যন্ত্রের উন্নতি-অগ্রগতিতে পুরুষের সমতুল্য অবদান রেখে চলেছে বর্তমান সময়ের সাহসী নারীরা। প্রাচীন যুগে নারীদের উপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করে তাদেরকে চার দেয়ালে বন্দি করে রাখা হলেও আজ নারীরা সে অবস্থায় নেই। নারী শিক্ষার অগ্রসরতার কারণে সৃষ্ট সচেতনতা তাদেরকে আলোর পথে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের নারীরা তাদের পরিবার, সমাজ ও কর্মস্থলসহ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে কতটুকু নিরাপদ? নারীরা রাষ্ট্রের উন্নয়ন চাকার জালানোর জোগান দিচ্ছে, বিনিময়ে রাষ্ট্র তাদের কতটা নিরাপত্তা দিয়েছে?

এমন কোনো দিন বাদ নেই যেদিন পত্রিকার পাতা খুললেই নারী হয়রানি খবর চোখে পড়ে না। ঘরের ভিতর কিংবা বাইরে, পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, বাসে, ট্রাকে, মাইক্রোবাসে, নৌযানে… সবখানে-সবস্থানে ঘাপটি মেরে বসে আছে হয়রানিকারীরা। সুযোগ পেলেই সেইসব পুরুষের ভিতর থেকে হায়েনা বেরিয়ে আসে।

মেয়েদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার যে ‘ভাইরাস’ এই পুরুষ শাসিত সমাজের অস্থিমজ্জায় মিশে আছে তা দূর করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা আজ বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাস্তা-ঘাটে এভাবে আমার মতো হয়রানি শিকার নারীরা নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। মনে রাখতে হবে, আমরা যদি প্রতিবাদ না করি তাহলে এইসব যৌন হয়রানিকারীরা সাহস পেয়ে যাবে।

আপনার প্রতিবাদটি অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না। শুরুটা করুন। জনারণ্যে প্রথম দিকে আপনার সেই আওয়াজ বড় ক্ষীণ আর বেমানান ঠেকলেও ধীরে ধীরে দেখবেন আরও সহস্র আওয়াজ আসছে। সম্মিলিত সেই আওয়াজের সামনে দাঁড়ায় এমন অপশক্তি কোথায়?

লেখক: মোহসেনা শাওন, সংবাদ পাঠিকা

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন