Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছোট কাগজের বাণিজ্য-চিন্তাহীন পথচলা


১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:০৯

এসএম মুন্না : 

ইংরেজিতে ‘লিটল’। বাংলায় যার এর অর্থ ক্ষুদ্র বা ছোট। নামে ছোট হলেও আকার ও দেহগত সৌষ্ঠবে ‘লিটলম্যাগ’ দেশের সাহিত্য ও নতুন চিন্তার উন্মেষের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সতত সৃজনশীল সাহিত্যের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে রাখে লিটলম্যাগ বা ছোট কাগজই। বাণিজ্যমুখী বাজারি সাহিত্যের চেয়ে সৃজনশীলতার পথে বড় পদক্ষেপটা সব সময়ই নেয় প্রথাবিরোধী এসব ছোট কাগজ। বড় কাগজের স্বজনপ্রীতি আর আগ্রাসী চরিত্রের কারণে অনেক প্রতিভাবান লেখক লিটলম্যাগের মাধ্যমেই তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশের পথ বেছে নেন। লেখকদের এই চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণেই লিটলম্যাগ তার জৌলুশহীন আঙ্গিক হলেও পাঠকের কাছে সমাদৃত। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে লিটলম্যাগ বরাবরই এক চমক হিসেবে কাজ করে। লোক, অর্বাক, দাঁড়কাক, নিসর্গ, মাদুলি, একবিংশ, পাতাদের সংসার, বনপাংশুল, সাম্প্রতিক, হুচ্, চৈতন্য, গল্পকথা, বাংলার কবিতাপত্র, অনুঘটক, নক্ষত্রপুঞ্জের মতো নান্দনিক নামের এসব ছোট কাগজ নিয়ে প্রকাশনার জগতে সরব রয়েছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বহু উদীয়মান লেখক ও সম্পাদক। লিটলম্যাগ চর্চা করতে করতে অনেকেই যশ-খ্যাতি অর্জন করেছেন। অমর একুশে গ্রন্থমেলার একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ লিটলম্যাগ কর্নার। এবারও মেলা কমিটি লিটলম্যাগ লেখক ও সম্পাদকদের জন্য একটি কর্নার করে দিয়েছে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে। আর এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ৭৯টি লিটলম্যাগ।

বিজ্ঞাপন

 

ছোট কাগজের নিয়মিত পাঠক আশিকুর রহমান সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন, ‘যুগে যুগে লিটল ম্যাগাজিনের লিখিয়েরা বিকল্পধারার চর্চা করে চলেছেন। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, লেখালেখিতে তারা প্রথাগত ধারাকে পাশ কাটিয়ে চলা এগিয়ে থাকা অংশ। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, কেউ-ই তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে না। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লিটলম্যাগ চর্চা আরও বৃদ্ধি পেত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জারা সিদ্দিকী বলেন, ‘লিটলম্যাগ আমাকে খুব টানে। সাহিত্যের নানা স্বাদ পাওয়া যায় লিটলম্যাগ থেকে। তবে আগের মতো সেই স্বাদ পাওয়া যাচ্ছেন। এখন অনেক মানহীন লিটলম্যাগে ভরে গেছে। হাতে নিতেও ইচ্ছে করে না। অথচ এক সময় গোগ্রাসে গিলতাম লিটলম্যাগের লেখাগুলো। সাহিত্যের একজন ছাত্রী হিসেবে আমি বলবো, ‘লিটলম্যাগ নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। এর গুণগত চর্চা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এটাই একজন লেখকের আঁতুড়ঘর।’

বিজ্ঞাপন

লিখিয়েদের কবিতা, গল্প, উন্যাসসহ বিভিন্ন বইও প্রকাশিত হয় ছোট কাগজের ব্যানারেই। এরই মধ্যে দাঁড়কাক থেকে বের হয়েছে মাহবুবুর রহমানের ‘নীল পাড়ের শাড়ি’ ও ‘তওফিক মুজতাবার ছয়টি গল্প’। লিখিয়ে রুদ্র রাজীব আহমেদ সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন, ‘নতুনধারার সাহিত্যচর্চা যারা করেন তারাই এখানে আসেন।’ লিটলম্যাগের আরেক লিখিয়ে শরিফুল রেজা বলেন, ‘লিটলম্যাগ করি নতুনধারার সাহিত্যচর্চার নেশা থেকে। শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে। এখানে কোনো বাণিজ্যিক চিন্তা থাকে না। তবে হালে লিটলম্যাগ নিয়েও নানা রকম ধান্ধাবাজি শুরু হয়েছে। এটা বন্ধ করা জরুরি। তা না হলে লিটলম্যাগের যে বনেদি সুনাম রয়েছে, তা কলুষিত হয়ে যাবে।’

লিটলম্যাগ কর্নার ঘুরতে ঘুরতে পাতাদের সংসার স্টলটি চোখে পড়লো। গিয়ে দেখা গেলো বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সংখ্যা বের করেছে পাতাদের সংসার। সংখ্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক যখন লন্ডনে ছিলেন তখন তাকে নিয়ে লেখা ‘হামরা কেমন করি থাকি তোমাগ্ ছাড়ি’, কামাল চৌধুরী, শাহাদুজ্জামান সংখ্যা, রামেন্দু মজুমদারের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী সংখ্যা। জানতে চাইলে পাতাদের সংসার এর সম্পাদক হারুন পাশা সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন ‘তাদের লিটলম্যাগের একটা বৈশিষ্য রয়েছে। জীবিত খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে পুরো একটি সংখ্যা বের করি। এরই মধ্যে অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নিয়ে সংখ্যা বের হয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারিতে তাদের স্টলে পাওয়া যাবে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে নিয়ে ‘অদ্বিতীয় আসাদুজ্জামান’ সংখ্যার পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ। প্রকাশের অপেক্ষায় আহমদ রফিক, হরিশংকর জলদাস ও শাহীন আখতারকে তিনটি আলাদা সংখ্যা।
মেলায় হাতে গোনা কয়েকটি লিটলম্যাগের নতুন সংখ্যা এসেছে এবারের মেলা। মেলা কেন্দ্র করে সংখ্যা এসেছে খুবই কম। মূলত ২০১৭ সালের ১ মার্চ থেকে যে সব সংখ্যা বের হয়েছে সেগুলো নতুন হিসেবে গণ্য করা হয়। সেগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন লিটলম্যাগের স্টলে। পাশাপাশি পুরনো সংখ্যা প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে লিটলম্যাগে এক বড় ধরনের সমাহার ঘটে। তাই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিটলম্যাগও চলে আসে মেলায়। এবারও এসেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকে একাধিক লিটলম্যাগ নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছেন বেশ কয়েকজন লেখক ও সম্পাদক। তাদের উদ্দেশ্য বিক্রয় নয়, মূলত সবার সঙ্গে পরিচিতি-ভাব বিনিময়।

চট্টগ্রামের লিটলম্যাগ ‘খড়িমাটি’। এই লিটলম্যাগের ২২তম নং সংখ্যা নিয়ে স্টলে বসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে শিক্ষার্থী সৈয়দা মমতাজ টুকু। তিনি এই স্টলের দেখভাল করছেন। তিনি বলেন ‘তাদের নতুন সংখ্যা এখনও বাজারে আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যে আসবে। লিটলম্যাগ পড়েন কিংবা চর্চা করেন জানতে চাইলে ‘আগে তেমন একটা পড়া হয়নি। তবে অগ্রজদের পরামর্শে পড়া শুরু করেছি। পড়তে ভালোই লাগে। ’

বহেড়াতলার অন্য কাগজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘চারবাক’, ‘শিরদাঁড়া’, ‘গদ্য’, ‘শালুক, অনুঘটক, মারমেইড, শব্দমালা, রূপান্তর, প্রমীলা, নৈঃশব্দ, ঋজু, কাঠপেন্সিল, নতুন মাত্রা, ল্যাম্পপোস্ট, শব্দগুচ্ছ, বাংলার কবিতাপত্র, কবিতা চর্চা, কোরাস, দৃষ্টি, সপ্তবর্ণ, চিরকুট, পড়শি, অগ্রবীজ, চালচিত্র, শুদ্ধস্বর, গ্রাম থিয়েটার, পর্ব, জঙশন, মেঘ, কবিতা সংক্রান্তি, হালখাতা, লোকায়ত, ঋদ্ধি, ভনে।

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর