Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিদিন গড়ে ১৫১ টি বই, হাতে নেওয়ার মতো বই কই?


১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:০৬

এসএম মুন্না :

প্রতিদিন এত বই বেরুচ্ছে কিন্তু ভালো বই কয়টি? এই প্রশ্ন এবারও জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। গ্রন্থমেলায় যে সব নতুন বই বেরুচ্ছে তার বেশিরভাগেরই মান প্রশ্নসাপেক্ষ। মূলধারার একাধিক প্রকাশকদের সঙ্গে আলাপ ও সারাবাংলা ডট নেট এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও অখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো রকম বাছ-বিচার ছাড়াই শুধু টাকার বিনিময়ে বই প্রকাশের হিড়িক পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেওয়া তথ্যমতে এবারের মেলায় ২-১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনে মোট নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৩৬২টি। গতবারের চেয়ে যা ২৪৩টি বই বেশি। গতবার এই সময়সীমার মধ্যে নতুন বই এসেছিল ১ হাজার ১১৯টি।

প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে এগিয়ে আছে কবিতার বই। সংখ্যা ৩৭৩। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উপন্যাস ২৪৮টি। তৃতীয় অবস্থানে আছে গল্প ১৮৭টি। মেলায় সবচেয়ে বেশি নতুন বই এসেছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। এদিন মেলায় আসে সর্বোচ্চ সংখ্যক নতুন বই ৩৪৪টি। এর মধ্যে কবিতার বই ৯৫, উপন্যাস ৬৭ ও গল্প ৪১টি। আর গড়ে প্রতিদিন বেরুচ্ছে ১৫১টি নতুন বই।

কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক বই থেকেও প্রতিদিন ১০টি ভালো বই নির্বাচন করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তরুণ লেখক ও গবেষক বলেন, ‘আসলে ভালো বই বলতে আমরা যা বুঝি তা সংখ্যায় খুবই কম। তবে কিছু বই আছে সেগুলো বেশ ভালো এবং হাতে নেওয়ার মতো।’

মানহীন বইয়ের সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নবীন লেখকের বই প্রকাশের প্রবণতা। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন লেখকরা সাধারনত দুটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। কেউ ছুটে যান প্রকাশকের কাছে, আবার কেউ নিজের টাকায় বইটি বের করে ফেলেন। যারা প্রকাশকদের কাছে ছুটে যান তাদের বই আবার দুটি প্রক্রিয়ায় বের হয়। ভালো লেখক হলে এবং ভালো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে তার বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বেই বেরিয়ে যায়। অন্য উপায়টি হচ্ছে প্রকাশকরা লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই বের করে দেন। বহু প্রকাশনা সংস্থা টাকার বিনিময়ে বই বের করে দেওয়ার জন্য দোকান খুলে বসেছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে টাকার বিনিময়ের বইগুলো সে প্রতিষ্ঠানের নামেই বের হচ্ছে। একাধিক কেস স্টাডিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

ফলে এত এত বই বেরুচ্ছে, কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন, ‘মেলায় প্রতি বছর কয়েক হাজার বই বের হয় । সবগুলো খারাপ তা বলবো না। তবে ভালো বইয়ের সংখ্যা খুবই নগন্য। অনেক প্রকাশক আছেন যারা বই নির্বাচনে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন না। যা আসে তা-ই বের করে দেন। এটা খুবই দুঃখজনক। এ কারণে প্রকাশিত বইয়ের মান নিয়ে প্রতিবারেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবারও দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই প্রবণতা কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রকাশকরা সচেতন না হলে এ থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রকাশিত  বইয়ে অসংখ্য বানান ভুল প্রসঙ্গে ভাষা সংগ্রামী, লেখক ও গবেষক আহমদ রফিক সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন, ‘বাংলা ভাষার জন্য আমরা লড়াই করেছি। কিন্তু শুদ্ধ বানান ও ভাষায় সাহিত্য চর্চা খুব একটা হচ্ছে না। যে যেভাবে পারছেন লিখছেন। বই বের করছেন। অথচ বানান ও ভাষা প্রয়োগের জ্ঞান না থাকায় সে সব রচনায় ত্রুটি থেকেই যাচ্ছে। এ কারণে লেখক যেমন তার বইয়ের জন্য পাঠকপ্রিয়তা পাচ্ছেন না, তেমনি বছর বছর মানহীন এসব বইয়ের সংখ্যা বাড়ছেই। একুশে বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ করতেই হবে, এটা তো ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই। কিন্তু একুশে বইমেলায় নতুন বই প্রকাশের হিড়িক পড়ে যায়। স্বল্প সময়ে বই প্রকাশের কারণে ভুল থাকে বেশি।

আহমদ রফিক আরও বলেন, ‘ভালো বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আগে নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে। শুদ্ধ বানান ও ভাষা প্রয়োগের জ্ঞান থাকতে হবে। তা না হলে সাহিত্য রচনা নামে যা প্রকাশিত হচ্ছে তা অখাদ্য হিসেবে থেকে যাবে।’

সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন ‘ভালো বই প্রকাশের দুইটি সমস্যা রয়েছে। এর একটি হলো ভালো পাণ্ডুলিপি। ভালো পাণ্ডুলিপির বড় সংকট চলছে। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ওই পাণ্ডুলিপিটা সম্পাদনা করে প্রকাশ করা। এ জন্য যে দক্ষতাসম্পন্ন সম্পাদক প্রয়োজন, তা পাওয়া যায় না। হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা ছাড়া বেশিরভাগ প্রকাশনা সংস্থারই নিজস্ব সম্পাদনা বিভাগ নেই। ভালো পাণ্ডুলিপি প্রাপ্তি ও উন্নত সম্পাদনা করে বই প্রকাশ করাই হচ্ছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’

অনুসন্ধানে একাধিক নামকরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে যারা টাকার বিনিময়ে বই প্রকাশ করছেন। এসব বইয়ের অধিকাংশেই বানান ও বাক্যে অংসখ্য ভুল থাকে। বইয়ের ছাপা আর বাঁধাইও খুব একটা মানসম্পন্ন হয় না। আরও জানা গেছে, এক ধরনের প্রকাশক আছেন যারা নতুন লেখকদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই বের করেন এই শর্তে যে লেখককে দুই থেকে তিন’শ বই দিয়ে দেবেন বাকি বই তিনি বিপণন করবেন। কিন্তু তিনি তা বিপণন করেন না। ৪৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের জন্য ৩০ থেকে ৪০হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। নামকরা প্রতিষ্ঠান হলে টাকার অংক অনেক বেড়ে যায়। এ রকম একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান দেশের একজন আমলার কাছ থেকে একটি বই প্রকাশ করে দিয়ে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জানা যায়।

বইয়ের মান নিয়ে কথা হয় প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য এর প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম-এর সাথে। তিনি বলেন ‘শুধু ভালো বই বের করলে হবে না, সেসব বই কি করে পাঠকের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায় তারও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। তাতে করে বই প্রকাশনা জগতে সে সমস্যা চলছে তা নিরসন হবে। সে লক্ষ্য সামনে রেখে আমরাই প্রথম শুরু করি জেলায় জেলায় বই উৎসব, বিশ্ববিদ্যালয় বই উৎসব-যা ঐতিহ্য বই উৎসব নামে পরিচিত। তিনি আরও বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখতাম এলাকায় এলাকায় বইয়ের দোকান ও পাঠাগার। সব বয়সী পাঠকদের জন্য নানা রকম বই বিক্রি হতো। পাঠাগারগুলোতে বিকেল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত পাঠকের ভিড় লেগে থাকত। এখন সেসব বইয়ের দোকানও নেই, পাঠাগারও নেই’।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

সম্পর্কিত খবর