Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হুমায়ূন সাহিত্য পুরস্কার: গানে-স্মৃতিতে স্মরণ কথার জাদুকরকে


১৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৫

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না?

কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে তোমারে দেখিতে দেয় না…

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সুললিত কণ্ঠে শুরু হয় অনুষ্ঠান। কার্তিকের ঝুপ করে নেমে যাওয়া বিকেলে বাংলা একাডেমীর আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনের প্রতিটি কোণে যখন ছড়িয়ে পড়ছিল এই গানের অনুরণন, যেন একটা চাপা হাহাকার তখন ছড়িয়ে পড়ছিল উপস্থিত সবার মধ্যে। মনে হচ্ছিল, কবে যেন কে ছিল, আজ সে নেই; তবুও তাকে হারানোর বেদনাটাই কাঁটা হয়ে বসে আছে প্রাণজুড়ে!

পেছনেই ডিজিটাল স্ক্রিনজুড়ে ছোটখাটো মানুষটির ছবি— বাংলা সাহিত্যের জাদুকর, হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের স্মরণেই বাংলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে জড়ো হয়েছেন শতাধিক মানুষ। তার সময়সাময়িক এবং তার মৃত্যুর পরও যারা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, করে যাচ্ছেন, তাদের মধ্য থেকে একজন নবীন ও একজন প্রবীণ সাহিত্যিককে সম্মাননা দিতেই সোমবার (১২ নভেম্বর) ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিনে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ শীর্ষক এই আয়োজন।

প্রথম গান শেষ করে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ছোট করে একটু স্মৃতিচারণ করলেন হুমায়ূন আহমেদের। এরপর শুরু করলেন হুমায়ূন আহমেদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আরেকটি রবীন্দ্রসংগীত— ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে।’

ততক্ষণে মিলনায়তন লোকে লোকারণ্য। শুধু যারা পুরস্কার পাবেন বা দেবেন, তারাই নয়, উপস্থিত হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু-সুহৃদ, ভক্তরাও। এমনকি মিলনায়তনের একপাশে দল ধরে বসে আছেন হলুদ পাঞ্জাবি পরা কয়েকজন, যারা নিজেদের মনে-মননে লালন করেন, তারা প্রত্যেকেই একেকজন হিমু।

হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কারের চতুর্থ আসরে এ বছর নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন ফাতিমা রুমি। অন্যদিকে, সামগ্রিক অবদানের জন্য বায়োজ্যেষ্ঠ সাহিত্যিক রিজিয়া রহমানকে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা।

পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে ফাতিমা রুমি বলেন, আমি হুমায়ূন আহমেদের বিশাল ভক্ত। আজ তিনি নেই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, যেন হুমায়ূন আহমেদ নিজের হাতে আমাকে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে না থেকেও যেন আমাদের মাঝেই রয়েছেন।

এরই মধ্যে কালি ও কলম সাহিত্য পদক পাওয়া এই লেখক মনে করেন, হুমায়ূন সাহিত্য পুরস্কার তার জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া মতো বিশাল ঘটনা।

অন্যদিকে, প্রবীণ সাহিত্যিক রিজিয়া রহমান এই পুরস্কার পেয়ে যতটা আনন্দিত, ততখানিই ব্যাথিত। তিনি বলেন, হুমায়ূন আমার অনুজপ্রতীম। আমি বেঁচে আছি, অথচ হুমায়ূন নেই— এটি আমাকে ব্যাথিত করে। তারপরও হুমায়ূনের নামে একটি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, সেটা পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তিনি বলেন, একজন লেখকের জন্য এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছুই হতে পারে না যে তার নামে একটি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।  তরুণ লেখকদের এই পুরস্কার অনুপ্রেরণা জোগাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু ও বহুদিনের সহযোগী, অভিনেতা ও বর্তমান সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, হুমায়ূন একজন অদ্ভূত মানুষ ছিলেন। ব্যাখ্যাতীত অনেক বিষয়ের সঙ্গেও তিনি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতেন। তিনি সবসময় বলতেন, একটা কচ্ছপ নিরর্থক তিনশ বছর বেঁচে থাকে, অথচ একজন মানুষ যার করার মতো কত কাজ, সে ৬০ বছর বয়সে মারা যান! এটাও আমার কাছে একটি অলৌকিক সংযোগ মনে হয়।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ আমার বেশ কাছের মানুষ ছিলেন। তিনি যখন চলে যান, আমার মনে হলো— উনি বেশ আগে চলে গেলেন। তবে এই যে আমরা উনাকে আমরা মনে করছি, এটাও কম নয়।

তিনি আরও বলেন, আজকে এখানে একজন তরুণী ও একজন বয়োজ্যেষ্ঠকে সম্মান দিতে পারছি, এটাও সাফল্যের বিষয়ে। সাহিত্য একটি চরিত্রের বিষয়, যেটা আমাদের দেশে এরই মধে সৃষ্টি হয়ে গেছে। এটা যেন আমরা এগিয়ে নিতে পারি, এটাই প্রত্যাশা।

এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, হুমায়ূন নেই, আবার হুমায়ূন আছেন। আমরা যারা সান্নিধ্যে ছিলাম, তাদের স্মৃতিতে আছেন। যারা সান্নিধ্যে আসেননি, তাদের কাছে তিনি তার সহিত্যকর্মের মাধ্যমে আছেন।

এ ধরনের সাহিত্য পুরস্কারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইদানীং অনেক সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এটি খুবই আশাব্যাঞ্জক। এভাবে সাহিত্যিকরা তাদের কাজের স্বীকৃতি পান এবং ভালো কাজের উৎসাহ পান।

সারাবাংলা/এমএ/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর