Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাবার কান্না


২৭ মে ২০২০ ১৭:০০

আবরার সাহেবের কোথাও কোনো দাম নেই। দাম না পাওয়াটার ব্যাপারটাতে এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন যে কাজের মেয়ে শেফালি যখন বলে, ‘খালু আপনারে তো একটা বিস্কুট দিলাম। আর এখন দেয়া যাবে না’ তখনও মাথা দুলিয়ে মেনে নেন।

বুড়ো বয়সে এরকম প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে তিনিই হয়তো একমাত্র নন। ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রায় বুড়ো মানুষদের এসব শুনতে হয়। তবে এক জায়গায় তিনি অনন্য। অন্যরা গোপনে হলেও মন খারাপ করেন বা অন্তত হতাশায় চুপ করে থাকেন। আবরার সাহেব বরং শেফালির কথাকে মেনে নিয়ে বলেন, ‘ঠিকই বলেছিস। আসলেই তো একটা বিস্কুট তো মাত্র খেলাম। কাল খেলাম দুটো। তারপরই খাই খাই স্বভাব। ঠিক না। একদম ঠিক না।’

‘কথাটা মনে থাকে যেন…’

‘মনেও থাকে না বুঝলি। আমার লজ্জার ব্যাপারগুলো কখনো মনে থাকে না। এটা ঠিক কথা। লজ্জার ব্যাপারগুলো তার মনে থাকে না। অপমান গায়ে লাগে না। সবকিছু মেনে নিতে পারেন বলেই হাসি-খুশি জীবন। আজ বাসায় একটা পার্টি। ছেলে আকাশের চাকরিতে প্রমোশন হয়েছে, এখন সে বহুজাতিক কোম্পানিটির হেড অব এইচ আর, বিরাট ঘটনা।
তাই বিরাট পার্টি।

ছেলের বউ প্রিয়া সন্ধ্যার দিকে তাঁর রুমে এসে বলল, ‘বাবা আপনার তো শরীর খারাপ। ওসব পার্টি- টার্টি আপনার ভালো লাগে না। নানা রকম হুল্লোড়। তাই আপনি এক কাজ করেন। আগেই খেয়ে নেন।’

‘ঠিক আছে খেয়ে নেব। ওসব পার্টি-টার্টি আমার ভালো লাগে না। এখন শরীরেও আর কুলোয় না।’

‘চলুন তাহলে।’

‘কোথায়?’

‘খাবেন। টেবিলে খাবার রেডি।’

তিনি দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা বাজে। এখন রাতের খাবার খেয়ে নেবেন! বুঝতে পারেন যে প্রিয়া এই সাধারণ শ্বশুরকে মান্য গন্য অতিথিদের সামনে প্রদর্শন করতে চায় না। খুব আপত্তির কিছু নেই অবশ্য। তাঁর ভাঙ্গাচোরা চেহারা।
ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছিলেন কোনোরকমে, ছিলেন তহশিল অফিসের সামান্য কেরাণি। এমন বাবা বা শ্বশুর ওদের বর্তমান অবস্থানের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।

একটাই সমস্যা শুধু। এখন রাতের খাবার খেয়ে ফেললে ক্ষুধা লেগে যাবে ১২টার দিকে। শেফালির কাছে কিছু চাইতে হবে। রাগারাগি করবে। তবু শেষপর্যন্ত দিয়েও দেবে এক-আধটু।

ডাইনিং টেবিলের দিকে আগাচ্ছিলেন। প্রিয়া একটু বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, ‘বাবা এদিকে না… ওদিকে।’

ওদিকে বলতে ফ্যামিলি লিভিংয়ের পেছনের সংকীর্ণ একটা টেবিল। ড্রাইভার বা সেরকম লোকদের ওখানে খেতে দেয়া হয়। তাও ঠিক আছে। ডাইনিং টেবিলে এখন সাজসজ্জা চলছে। মেহমানরা আসবে। ওদের কাছেতো সব ঝকঝকে দেখাতে হবে। তিনি নিজে ঝকঝকে হলে তাকেও দেখানো হত। হয়তো সুন্দর পাঞ্জাবী-পাজামা পরিয়ে বসিয়ে রাখা হতো। ছেলে বা বউয়ের অবহেলার চেয়ে নিজের অক্ষমতাকেই তার বড় মনে হয়।

তিনি খেতে বসেন। খেয়াল করেন, ঠিক পার্টির খাবার নয়। দুপুরের বেঁচে যাওয়া আইটেম সামনে রাখা। ক্ষিধা ছিল না। তবু না খেলে কথা উঠবে বলে তিনি খেয়ে চললেন।

একবার বললেন, ‘বউমা, স্রোত কোথায়?’ স্রোত তাঁর নাতি। সত্যি বললে, এই বাসায় এই ৬ বছরের ছেলেটির কাছে ওর কিছু গুরুত্ব আছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করার বয়স হয়নি বলে সে তার পুরনো এবং অযোগ্য দাদুকেও যথেষ্ট মর্যাদা দেয়।

প্রিয়া বলল, ‘বাবা আজ থাক। স্রোতকে সাজানো হচ্ছে। আপনার কাছে এলে লাফালাফি করবে। কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়ে যাবে।’

‘ও। তাহলে থাক।’

‘যদি আপনার ঘরে যায়ও, ডাকাডাকি করে তাহলেও কিন্তু আপনি প্রশ্রয় দেবেন না।’

‘দেব না। ধরে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব।’

প্রিয়া চলে গেলে শেফালি এসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এই সময়ও পুরো ভরপেট খেয়ে ফেললেন! আপনি পারেনও।’

তিনি লজ্জা পেয়ে বলেন, ‘আসলে লাউয়ের তরকারির রান্নাটা হয়েছিল চমৎকার। তোর রান্নার হাত খুব ভালো রে।’

‘তার চেয়েও ভালো আপনার খাওয়ার পেট।’

তিনি হাসেন, ‘ঠিকই বলেছিস। খেতে পারতাম বটে। পুরো ইলিশ মাছ একাই তুলে ফেলেছি। গরুর মাংস তো এক কেজি না হলে হতো না। বয়স হয়ে গেছে। এখন আর পারি না।’

তিনি ঘরে ঢুকে গেলেন। স্রোত এল না। সম্ভবত কড়া নিষেধ জারি করে ওকে আটকে রাখা হয়েছে। একটু মন খারাপ হলো। সেটা ভুলেও গেলেন। এসব পার্টি-টার্টিতে নাচ-গানও হয় মাঝে মধ্যে। ওখানে যেতে না পারলেও নিজের ঘর থেকে শুনতে পান। মন্দ লাগে না।

আজ গানের আসরে দারুণ ব্যাপার ঘটল। দুজন আমন্ত্রিত শিল্পী ছিল। ওরা দারুণ সব গান গাইল। পুরনো দিনের একটা প্রেমের গান শুনে তার কিছু স্মৃতিও মনে পড়ল। ‘আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে কইব কথা’ গানটা তিনিও একবার গেয়েছিলেন। আকাশের মাকে মুগ্ধ করতে। ২৩ বছরের সংসার শেষে ১৭ বছর আগে স্ত্রী বিদায় নিয়েছেন।

তার আফসোস হয়, ইশ! ফাতেমা এত আগে চলে গেল। ছেলের এই সাফল্য দেখে গেল না! তিনি তাই ছেলের সব কৃতিত্ব মুখস্ত করে রাখার মতো করে মনে রাখেন। ওপারে গিয়ে ফাতেমাকে সব বলতে হবে। এর মধ্যেই হঠাৎ শুনলেন সবাই অনুরোধ করছে,
আকাশকে একটা গান গাইতে। আকাশ ‘না’ ‘না’ করছে। তিনি খুব শিহরিত। এক বাচ্চা হলে যা হয়, বাবা-মা ওর মধ্য দিয়ে সব শখ পূরণের চেষ্টা করেন। তারাও করেছেন। সীমিত সামর্থ্য ভুলে ওকে গান শেখানোর জন্য একজন মাস্টারও রেখেছিলেন। মন্দ গাইত না। কিন্তু ছেলেটার আগ্রহ ছিল শুধু পড়াশোনায়। ফার্স্ট হবে। বিদেশে পড়তে যাবে। অনেক বড় চাকরি করবে। ফাতেমার তাই নিয়ে আফসোসের শেষ ছিল না। আহ, ছেলেটার গানের গলা কত ভালো ছিল।

আকাশ একটা গান গা না বাবা। ইচ্ছা হয় চিৎকার করে বলেন। গলার কাছে এসে শব্দটা আটকে যায়। প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করেন। ওরা এখনও অনুরোধ করছে। আকাশ রাজি হয়ে যা বাবা। একটা গান গা।

শেষপর্যন্ত আকাশ রাজি হয়। লাজুক গলায় বলে, ‘চার লাইন। ঠিক আছে!’

জনতার হাততালি।

আকাশ মাইক হাতে নিয়ে একটু ভূমিকা দেয়। বলে, ‘একসময় গান গাইতাম। পড়ে পড়াশোনার চাপে আর হয়ে উঠেনি।’

আবরার সাহেব একটু আশা করেছিলেন, হয়তো ছোটবেলার গানের মাস্টারের কথাটা বলবে। হয়তো মায়ের কথাও আসবে। বলল না।
মন খারাপ হয় না অবশ্য। অত বছর আগের কথা। ওর কী আর মনে আছে। মনে থাকলে নিশ্চয়ই বলত।

আকাশ গান শুরু করে। আর কী আশ্চর্য সেই গান, ‘আকাশের ঐ মিটিমিটি তারার সাথে…’ তিনি মোহিত হয়ে যান। উফ! মুখে না বললেও ঠিক বাবার প্রিয় গানটার কথা ওর মনে আছে। সেই গানটাই তো গাইছে।

আর তখনই ছোট্ট একটা ভুল হয়ে যায়। অতি উত্তেজনায় গানটা শুনতে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। আগ্রহ আরও বাড়ে। ওর আবেগটা দেখতে ইচ্ছে করে। এগিয়ে যান আরেকটু। সামনে চোখ ধাঁধাঁনো সব মহিলারা। কেদাদুরস্ত সব পুরুষ। কারো কারো হাতে পানীয়ের গ্লাস। ওরা কেউ কেউ নাচছে।

পরিবেশটা এমন আনন্দময় যে তিনি আরেকটু এগিয়ে গেলেন। আর গিয়ে সব ভুলে একটুখানি নাচও শুরু করলেন যেন।
মগ্ন ছিলেন বলে খেয়াল করলেন না যে বাকিদের নাচটা থেমে গেছে। সবাই খানিকটা কৌতূহলী।

বেমানান এই বুড়ো মানুষটা কে? লুঙ্গী পরে ছিলেন। পরনের গেঞ্জিটাও একটু ময়লা। নিজের ঘরে দেখার কেউ আসে না বলে আকাশের আপত্তি সত্বেও এই পোষাকটা পরে থাকেন। আজ বেরোনোর সময়ও ঠিক খেয়াল ছিল না।

হঠাৎ শুনলেন কে যেন পাশ থেকে কঠিন গলায় বলছে, ‘আপনি এখানে কেন? কেন এলেন?’

‘ও বউমা।’

‘কেন এলেন?’

‘গানটা খুব ভালো গাইছিল আকাশ।’

‘ভেতরে যান। সোজা ভেতরে। আজ আপনাকে…’

এসব জায়গায় যারা আসে যদিও তারা বন্ধুস্থানীয় তবু এর মধ্যেও কোনো একটা খুঁত বের করার চেষ্টায় থাকে সবাই। একটা দোষ ধরা গেলে পরে এই নিয়ে খুব গল্প করা যাবে।

জবরজং অলঙ্কার পরা এক মহিলা এগিয়ে এসে প্রিয়ার কাছে জানতে চান, ‘ভাবী ইনি কে?’

‘এই তো… আমাদের আত্মীয়।’

‘ও গ্রাম থেকে আসা মানুষ বোধহয়।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ।’

ঠিক এই সময়ই অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে। শেফালি এগিয়ে এসে বলে, ‘খালুজান আপনি চলেন। বোঝেন না এখানে আপনার কোনো দাম নেই।’

‘এই শেফালি চুপ’ আবরার সাহেব ধমক দেয়ার চেষ্টা করেন।

‘চুপ তো আছিই। তবে ছোটলোক তো, সবসময় ভদ্রতা করতে জানি না। বোঝেন না আপনাকে এখানে কেউ দেখতে চায় না।’

সবাই যেন বুঝতে পারে এর মধ্যে একটা গভীর রহস্যের ব্যাপার আছে। মজা দেখার সুযোগ পেয়ে প্রত্যেকেই এদিকে মনযোগী।

এক স্যুট পরা তরুণ আকাশের কাছে জানতে চায়, ‘হু ইজ দিস ম্যান আকাশ।’

আকাশ কিছু বলার আগেই শেফালি বলে, ‘উনি আমার খালু।’

‘ওকে ওকে।’ মানুষটি বোঝার ভঙ্গিতে বলে। শেফালি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। আবরার সাহেব সেই সুযোগ না দিয়ে বলেন, ‘চল। ভেতরে চল।’

ভেতরের ঘরে এসেই শেফালি বলে, ‘আপনার লজ্জা-শরম কিছু নেই। দিয়েছিলেন তো ছেলের মাথা কেটে।’ তিনি লজ্জায় মিইয়ে গিয়ে বলেন, ‘বড় ভুল হয়ে গেল।’

‘আপনার লজ্জা-শরম কিছু নাই।’

‘তা একটু কম। কিন্তু এই কথা বলছিস কেন?’

‘কিচ্ছু বুঝেন না। বুঝেন না এই বাড়িতে আপনি না থাকলেই ভালো।’

‘তাহলে আমি যাব কোথায়? আমার একটাই ছেলে। ছেলের বউ-নাতিকে রেখে আমার অন্য কোথাও যেতে হবে কেন?’

‘তাহলে থাকেন আর মরেন।’

শেফালি চলে যেতে উদ্যত। তিনি ফিসফিস করে বলেন, ‘শেফালি একটু কিছু…’

‘ক্ষুধা পেয়েছে?’

‘পাবে।’

শেফালি চলে যায়। একটু পর ফিরে আসে একটা প্লেট নিয়ে। ভর্তি খাবার।

ভেজা গলায় বলে, ‘আপনার জন্য একটা প্লেট আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম। এমনিই দিতাম রাতে।’

তিনি খেতে পারলেন না। এর আগেই শুরু হলো হুলুস্থুল। ঐ ঘটনার পরই তাল কেটে গিয়েছিল পার্টির। ঠিক জমছিল না। মানুষটির পরিচয় সম্পর্কে আরও কিছু তদন্ত শুরু করেছিল অত্যুৎসাহী কেউ কেউ। তাই পার্টির অকালসমাপ্তি ঘোষণা করে প্রিয়া সোজা এসে ধরল শেফালিকে।

‘তোর এত বড় সাহস!’

শেফালি পাল্টা আওয়াজ করে, ‘আমি কী করলাম? আমি তো আপনাদের সম্মান বাঁচিয়ে দিলাম।’

‘তুই সম্মান বাঁচালি?’

‘জি।’

আকাশ বলল, ‘কিন্তু তুমি কেন কথা বলতে গেলে… কেউ তো তোমাকে যেতে বলেনি।’

‘ভাইজান আমি ওনাকে খালু না বললে মানুষ ধরে নিত আপনাদের…’

শেফালি থামে। আকাশ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, সেই সময় আবরার সাহেব হাজির। আকাশ তার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলে, ‘তুমি কেন বাইরে বের হলে? তোমাকে প্রিয়া বলেছিল না…’

‘তোর গানটা এত সুন্দর হচ্ছিল।’ মোলায়েম গলায় বললেন।

আকাশ বলল, ‘গান সুন্দর হচ্ছে এটা তো পরেও বলতে পারতে। আর কি না লুঙ্গী পরে… না বাবা তুমি আমার দিকটা একেবারে দেখছ না!’

লজ্জিত গলায় আবরার সাহেব বলেন, ‘ঠিক বলেছিস বাবা। আমি আসলে তোর দিকটা বুঝতে পারি না। কখনোই আমার কা-জ্ঞান খুব বেশি ছিল না, এখন বয়সে অবস্থা হয়েছে আরও খারাপ।’

‘এভাবে চলবে না বাবা। তোমাকে বদলাতে হবে।’ ‘বউ মা আমাকে খুব বুঝিয়ে বলেছিল। আগে খাবারও দিয়ে দিল। কিন্তু আমি…’

প্রিয়া কড়া গলায় বলে, ‘যান ঘুমান গিয়ে। এখন আর এসব বলে কী লাভ? যা করার তো করে ফেলেছেন। মানুষজন তো দেখে গেল।’

তিনি হেসে বলেন, ‘ওরা তো আর আমার পরিচয় জানতে পারেনি। শেফালি মেয়েটার বুদ্ধি আছে।’

আকাশ বলে, ‘মানুষজন তো আর তোমার মতো বোকা নয়। এখন দেখো গিয়ে এ-ওকে ফোন করে বলছে, হোয়াট অ্যাবাউট দ্যাট অল্ড ম্যান। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো একটা রহস্য আছে। উফ বাবা…’

আকাশ মাথা নাড়ে। আবরার সাহেব আবার হেসে বলেন, ‘যে যাই বলুক তুই বলবি, উনি আমার কাজের মেয়ের খালু। সেরকম মানুষকে বাড়িতে থাকতে দিস-এতে তো বরং তোর প্রেস্টিজ আরও বাড়বে।’

‘আমার প্রেস্টিজ নিয়ে তুমি এত ভাবো?’

‘যদি বলিস তো আমি নিজেই বরং তাদের কাউকে ফোন করে বলি যে…’

তিনি প্রিয়ার দিকে তাকান। ওর মনে হচ্ছে আইডিয়াটা পছন্দ হচ্ছে। প্রিয়া রাজি থাকলে তিনি কাজটা করবেন। সত্যিই ফোন করে ওর বন্ধুদের এক-দুইজনকে বলবেন, ‘আমি আসলে দুঃখিত। গ্রামের মানুষ তো, অত শত বুঝি না। আমাকে ওরা এত খাতির করেছে যে ভুলে গিয়েছিলাম আমি কাজের মেয়ের খালু।’

না। বলতে তার একটুও খারাপ লাগবে না। ছেলের মান রক্ষার জন্য একজন বাবা এই সামান্য মিথ্যা কথা বলতে পারবে না। তাও কী যোগ্য ছেলে! এমন ছেলের বাবা হওয়া তো তার ভাগ্য।

তিনি হাসিমুখেই দাঁড়িয়ে থাকেন।

ঠিক এই সময়ই স্রোত এসে বলে, ‘দাদু তুমি খাওয়ার সময় কোথায় ছিলে? তোমাকে আমি কত খুঁজেছি। সবাই বলল, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ।’

‘দাদু আমার শরীরটা একটু খারাপ ছিল।’

‘চলো শরীর ভালো করে দেই। আমি একটা গল্প শোনাব তোমাকে। ডাইনোসরের গল্প।’

খুব লোভ হচ্ছে স্রোতকে নিয়ে ঘরে যেতে। আকাশের দিকে তাকান। আকাশ স্রোতের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ গলায় বলে, ‘বাবা স্রোত এখন আর গল্প না। তোমাকে ঘুমাতে হবে। চলো আমার সঙ্গে।’

স্রোতের হাত ধরে আকাশ রওনা দেয়। সেই সময়ই অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটে। নিজের জায়গায় আকাশকে এবং আকাশের জায়গায় স্রোতকে চিন্তা করে শিউরে উঠেন তিনি।

এমন কি হতে পারে ২৫-৩০ বছর পর স্রোত এরকমভাবে আকাশকে ধমকাচ্ছে। ‘বাবা আমার প্রেস্টিজের দিকে তোমার কোনো খেয়াল নেই। তোমাকে নিয়ে আর পারি না…।’ আকাশ তাঁর মতো অসহায় হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে। স্্রোত এবং তার স্ত্রী রুদ্রমূর্তিতে।

আর তখনই আবরার সাহেবের কান্না পেয়ে যায়। উফ! আকাশ কীভাবে এই অপমান সামলাবে? তিনিও তো ততদিন থাকবেন না। তাঁর ছেলেটাকে তখন কে দেখবে!

প্রিয়া কান্না দেখে ‘উফ নাটক’ বলে চলে যায়। আকাশ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘বাবা সিনক্রিয়েট করো না প্লিজ। তোমাকে তো কেউ এমন কিছু বলেনি।’ তিনি কেঁদেই চলেন।


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর