বিজ্ঞাপন

‘সিনেমাটি আজ অব্দি দেখতে পারলাম না’

October 16, 2018 | 2:57 pm

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

যখন সন্ধ্যা নামতেই নিয়ন আলোয় মুড়ে গেলো পুরো কলকাতা শহর।  সারাদিন জমে থাকা অভিমানের মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েছে। দেবী দূর্গার আগমনে সাজ সাজ রব। ঢাক ঢোলের আওয়াজ কানে ভেসে আসে। চতুর্দশী এক আবহে কাকভেজা হয়ে তখন পৌঁছে যাই রিজেন্ট এস্টেস্টে। দেখা হয় অভিনেতা ওম সাহানির সঙ্গে। হাত বাড়িয়ে করমর্দন আর পরিচয় পর্ব শেষ হলে শুরু হয় আলাপ। সেই আলাপে তিনি কথা বলেন যৌথ প্রযোজনার সিনেমা, বাংলাদেশে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, নিজের ক্যারিয়ারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।


  • টালিগঞ্জে ক্যারিয়ার দাঁড়ানোর আগেই যৌথ প্রযোজনার সিনেমাতে অভিনয় করলেন। বাংলাদেশের লোকাল প্রোডাকশনের সিনেমাও করেছেন। এই সিনেমাগুলো কি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে এনেছে?

যেখানে আমি থাকি সেখানে আমার কাজের মাধ্যমে পরিচিতি পেলে আমার জন্য ভালো হতো। কিন্তু যেটা হয়েছে আমি মনে করি ভালোর জন্যই হয়েছে। টালিগঞ্জে আমি তখন সবেমাত্র দুটি সিনেমা করেছি। সেই সিনেমা দুটি আমাকে ভালোভাবে পরিচিতি এনে দেয়ার আগেই যৌথ প্রযোজনার বড় বাজেটের সিনেমার প্রস্তাব পেলাম। এতে করে আমি আমার দেশের চেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছি বাংলাদেশে। এটাকে আমার জন্য সৌভাগ্য বলব। নিজের দেশের বাইরে অন্য একটি দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। যার কারণে টানা কয়েকটি যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করতে পেরেছি। যা আমার ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক বলব।

  • ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার, জুনিয়র আর্টিস্ট তারপর নায়ক। ওম কি কখনো ভেবেছিল আজ এখানে এসে পৌঁছাবে?

একটি স্বপ্ন নিয়ে এগিয়েছিলাম। যখন কাজ শুরু করেছিলমা তখন আমার মনে স্বপ্ন ছিল যে, বাংলা সিনেমার নায়ক হব। আলাদা করে হিন্দি বা অন্য কোন ভাষার সিনেমার নায়ক হওয়ার চিন্তা ভাবনা আসেনি। কারণ আমি এখানে থাকি, এখানের মানুষকে চিনি- তাই আমার জন্য স্ট্রাগল করতে সুবিধা হবে। তবে এটা ভাবতাম, এখানে যদি কিছু করতে পারি তাহলে বাইরে গিয়ে পরে কিছু করতে পারব। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছিলাম। টানা কয়েকটি কাজ করলাম। আমার কাজ মানুষের ভালো লাগতে শুরু করলো। ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার, ডেইলি সোপে অভিনয়, সিনেমা- ধাপে ধাপে কাজ করে এখানে এসে একটি অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। সামনে আরও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। এখানেই থেমে থাকতে চাইনা।

বিজ্ঞাপন
  • একটি প্রযোজনা সংস্থার আপনি চুক্তিবদ্ধ। জিম থেকে শুরু করে সবকিছুতেই তারা আপনার কলকাঠি নাড়াচ্ছে। একজন শিল্পীর ক্ষেত্রে এরকম ধরে-বেঁধে থাকা চাপের কিনা!

কখনো কখনো মনে হয় একটি বাঁধনে জড়িয়ে আছি। কিন্তু আমার মতো যাদের ফিল্ম ব্যাকগ্রাউন্ড নেই তাদের জন্য এটা খুবই ভালো। যাদের ফিল্ম ব্যাকগ্রাউন্ড আছে কিংবা পরিবারের কেউ সিনেমার সঙ্গে জড়িত তাদের জন্য একটি জায়গায় আটকে থাকা অসুবিধার মনে হয়। তারা প্রথমেই জানে তাদের কাছে বড় সুযোগ আছে। আমার যেহেতু ফিল্মের চেনা পরিচিত কেউ নেই, সেহেতু আমি জানিনা আমার সামনে কি আছে! আমার পা নড়বড়ে। আজ মানুষ আমার থেকে ভালো কাউকে পেয়ে তাকে গ্রহণ করলো। এটা শুধুমাত্র সিনেমার সেক্টরে না। সব সেক্টরে আছে।

আমাকে যখন একটি প্রযোজনা সংস্থা সুযোগ দিচ্ছে। বসিয়ে না রেখে সিনেমায় অভিনয় করাচ্ছে। এমনকি আমার দেখভাল করছে- এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। আমি কখনো এমনটা পাইনি। আমার তো কোন গডফাদার ছিল না। তবে আমার কাছে এখন আমার গডফাদার অশোক ধানুকা। তিনি আমাকে তার ছেলের মতো দেখেন।

একটি প্রোডাকশন হাউজে হয়ে কাজ করা মনে আটকে থাকা- এটা ভুল। বরুণ ধারওয়ান কিন্তু ইয়াশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। সে তো পর পর দুর্দান্ত সব সিনেমায় অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। একটি হাউজে থেকেই একজন নায়ক নিজের ভিত তৈরী করতে পারেন। একটা হাউজে থেকেই কুড়ি রকম কাজ করা যায়। সেই সুযোগটা পেতে হবে। সেই সুযোগ তো এসকে মুভিজ আমাকে দিচ্ছে। প্রতিবছর কয়েকটি সিনেমা করছি।

বিজ্ঞাপন

  • একবার এক সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম আপনি অঙ্কুশকে নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, ব্যানার পরিবর্তন করেও অঙ্কুশের তেমন লাভ হয়নি। সিনেমা চলে না। এ ধরনের কথা বলার কারণ কি?

তখন হয়ত মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা কম ছিল। কোথায় কি বলতে হয় সে সম্পর্কে না ভেবে দুম করে কথা বলে দিতাম। সেটার জন্য আমি দুঃখিত। যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করছে। কোথায় কাজ করলে তার ক্যারিয়ার দাঁড়াবে সেটা পুরোটাই তার ব্যাপার। আজ আমি যদি আরও ভালো কাজের সুযোগ পাই তখন তাদের সঙ্গে কাজ করতেই পারি।

আমি নিজে কাজ করে বুঝেছি, একটি জায়গা তৈরী করার জন্য কতোটা খাটনি করতে হয়! কাউকে নিয়ে মন্তব্য করার কোন অধিকার আমার নেই।

  • এসকে মুভিজের বাইরে যদি বড় কোন প্রযোজনার প্রতিষ্ঠান থেকে ডাক পান, তখন কি করবেন?

যখন আমার কিছু ছিল না তখন আমাকে সব এসকে মুভিজ দিলো। আমার মধ্যে কিছু আছে বলেই তারা আমাকে দিয়েছে। সে জন্য এসকের কাছে আমি চিরজীবন কৃতজ্ঞ। আমি এসভিএস বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে কাজ পাই তাহলে করতেই পারি। সেজন্য এসকে মুভিজ আমাকে অনুমতি দেবে। এটা আমি জানি।

বিজ্ঞাপন
  •  বাংলাদেশ থেকে এসকে মুভিজ ব্যবসা গুটিয়ে আনছে। আর কোন যৌথ প্রযোজনার সিনেমাও তারা প্রযোজনা করবেনা। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি ?

বিষয়টি আমি জানতাম না। এখনো আমার কানে এসে পৌছায়নি। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমার এতে কিছু করার নেই। আমি নিজেকে এসকে মুভিজের কাছে সঁপে দিয়ে বসে আছি। তারা যদি সামনে কোন যৌথ প্রযোজনার ছবি করে তাহলে করব, না করলে করব না।

  • বাংলাদেশে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুরকম অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাই।

নেতিবাচক অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করা যাক। বাংলাদেশের শুটিংয়ের কলটাইম কলকাতার মতো একরকম নয়। আমি কলকাতায় কাজ করতে অভ্যস্ত। নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছিল। ওখানে কলটাইম ঠিকমতো মেনে চলা হয় না। কলটাইম দেয়া হলো সকাল ছয়টায়, অথচ ফ্লোর রেডি হয়ে ক্যামেরা ওপেন হতে হতে বারোটা বেজে যেত। প্রথম প্রথম এটা মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিল।

শুটিং শেষ হতে হতে রাত একটা বেজে যায়। তারপর হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুইটা-তিনটা। ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে সাড়ে তিনটা চারটা। আবার ছয়টায় কলটাইম থাকলে উঠে ফ্লোরে যেতে হয়। এখন ফ্লোরে গিয়ে দেখি সময়টা নষ্ট হচ্ছে। যে সময়টা নষ্ট হচ্ছে সে সময়টা যদি জিম করতে পারতাম। তাহলে সেটা সিনেমার জন্য ভালো। যাকে নায়ক রেখে পুরো সিনেমা করা হচ্ছে তাকে যদি স্ক্রিনে দেখতে খারাপ লাগে তাহলে মানুষ তো সে ছবি দেখবে না। ক্ষতিটাতো পুরো টিমের। তাই নয় কি? এছাড়া ট্রাফিক সিগন্যাল, জ্যাম খুব ভুগিয়েছে। আধা ঘন্টার পথে বসে থাকতে হচ্ছে দুই ঘন্টা। বসে থাকাটা খুব বিরক্তিকর।

ইতিবাচক দিক হলো, বাংলাদেশের মানুষের ইউনিটি। প্রোডাকশন বয় থেকে প্রোডাকশন হেড- সবাই বন্ধুর মতো মেশে। সারাক্ষণ তারা টেক কেয়ার করেছে। যখন যা চেয়েছি তা এনে দিয়েছে। আর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার তো আছে। বাংলাদেশের শুটিংয়ের লাঞ্চে ভরপুর খাবার আসত। মাছ, মাংস, ফলসহ অনেক খাবার। আমি খেতে ভালোবাসি। খুব খেয়েছি।

  • আপনি একটি বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়েছিলেন। সেটা নিয়ে জানতে চাই।

তখন আমরা সিনেমার প্রমোশন নিয়ে ব্যস্ত। গাড়িতে করে যাচ্ছি। চ্যানেলের লাইভ ছিল। জ্যামে অনেক সময় বসে হাঁটা ধরলাম। আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন তিনি আমার থেকে একটু বেশি এগিয়ে গিয়েছিলেন। আমি একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম। জোরে জোরে হাঁটছি, এমন সময় একজন লোকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন লোকটি আমাকে গালি দেয় বাজে ভাষায়। আমি তাতে রেগে গিয়ে তার সঙ্গে কথাকাটাকটি শুরু করে দেই। এমন সময় অন্য এক লোক এসে আমার মানিব্যাগ নিয়ে যায়। যা আমি বুঝতে পারিনি। পরে জানতে পেরেছি ওরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। পরে আমার মনোবল ভেঙে যায়। আর ইচ্ছাই করেনি লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে।

  • বাংলাদেশের লোকাল প্রোডাকশনের সিনেমা ‘পাষাণ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মুক্তি পাওয়ার আগে ও পরে আপনাকে বাংলাদেশে অন্যসব সিনেমার মতো প্রচারণা করতে দেখা যায়নি।

‘পাষাণ’ প্রথমে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ছিল। এসকে মুভিজের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্য একটি প্রযোজনা সংস্থা ছিল। কিন্তু নিজেদের ভেতর গণ্ডোগোলের কারণে পরে আব্দুল আজিজ নিয়ে নেন সিনেমাটি। তখনও এক সঙ্গে সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে জাজ ও এসকে একমত ছিল। পরে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হওয়ার কারণে এসকে সিনেমাটি ছেড়ে দেয়। সিনেমাটি রিলিজ দেয়ার সময় আমাকে ডাকা হয়নি। তাদের মধ্যে সমস্যার কারণে ভুগলাম আমি। আমি সিনেমাটি জানপ্রাণ দিয়ে করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি সিনেমাটি আজ অব্দি দেখতে পারলাম না। বিষয়টি আমার খুব খারাপ লেগেছে।

  • সবশেষে ‘তুই শুধু আমার’ মুক্তি পেলো। যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটি যদিও পশ্চিম বাংলায় মুক্তি পেয়েছে। বাংলাদেশে পায়নি। এতে ভিন্ন একটি চরিত্রে দেখা গেছে আপনাকে। পশ্চিম বাংলায় কেমন সাড়া পেলেন?

খুব ভালো চলেছে। কোন কোন প্রেক্ষাগৃহে চার সপ্তাহ চলেছে। আমি নিজে চতুর্থ সপ্তাহে একটি সিনেমা হলে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় অর্ধেক ভরা ছিল। এই প্রথম আমি একটি ব্যতিক্রম চরিত্রে অভিনয় করেছি। এর আগে যারা আমার সমালোচনা করেছেন তারা এতে আমার অভিনয়কে ভালো বলেছেন। তারা বলছেন, আমি নিজেকে ভেঙে নিজেকে নতুভাবে হাজির করতে পেরেছি।

  • যৌথ প্রযোজনা ও বাংলাদেশে যে কটি লোকাল সিনেমা করেছেন তার মধ্য থেকে নিজের ভালোলাগার ছবি কোনটি?

এখন পর্যন্ত ‘তুই ‍শুধু আমার’ পছন্দের সিনেমা। এই সিনেমায় আমি নিজেকে চিনতে পারিনি। এর আগে যে কটি সিনেমা করেছি সেগুলোতে আমি নিজেকে নিজে কোন না কোনভাবে চিনতে পেরেছি। সিনেমার পরিচালক জয়দ্বীপ মুখার্জী সিনেমাটি করার আগে বলেছিলেন, তুই এতোদিন যা করেছিস ভুলে যা। আমি যা যা বলব সেটা কর।

আমি তার কথামত অভিনয় করে গেছি। তারপর সিনেমাটি যা দাঁড়ালো তাতে আমি আমার চরিত্রে দেখে অবাক হয়েছি। আমি যেরকম না সেরকম চরিত্রে অভিনয় করেছি। এতে অভিনয় দেখে যারা আমার সত্তর শতাংশ সমালোচনা করতো তারা বাহবা দিয়েছে।

  • ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা কি?

আমি চেয়েছিলাম সিনেমার নায়ক হব। সেটা হয়েছি। নয়টি সিনেমা করে ফেলেছি। আমি বুঝতে শেখার পর এতোদূর অব্দি ভেবে রেখেছিলাম। এরপর কি? আমি পরিকল্পনা করে রাখিনি। তবে আমি একজন ভালো মানুষ এবং ভালো অভিনেতা হতে চাই। ভালো ভালো কাজ করতে চাই। আমার বাবা-মাকে সুখে শান্তিতে রাখতে চাই। তাছাড়া আমি যে অভাব দেখে এসেছি সেই অভাব যেন আমার পরের প্রজন্ম দেখতে না পায় সেই ব্যবস্থা করব।

সারাবাংলা/আরএসও/টিএস

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন