December 19, 2017 | 9:23 am
হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার করেসপন্ডেন্ট
সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নাগা মরিচ এখন রফতানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে। ২০১১ সাল থেকে সিলেটের এই মরিচ রফতানি হচ্ছে যুক্তরাজ্যে সিলেটের রফতানিকারক ও নাগা মরিচ চাষিরা জানান, প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার নাগা মরিচ স্থানীয় বাজারে বিক্রি ও রফতানি করা হচ্ছে।মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, মৌলভীবাজারে আরো বেশি পরিমাণে ও বাণিজ্যিকভাবে নাগা মরিচ বা বোম্বাই মরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।
পাহাড়ি টিলা ঘেরা এ জেলা নাগা মরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী। বর্তমানে জেলায় যে পরিমাণ নাগা মরিচ চাষ হচ্ছে তাতে আয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিস এক্সপোটার্স গ্রুপ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বৃহত্তর সিলেটে উৎপাদিত নাগা মরিচ বা বোম্বাই মরিচের চাহিদা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে প্রচুর পরিমাণ নাগা মরিচ রফতানি করা হয়ে থাকে। ঝাল প্রিয় মানুষের প্রিয় খাদ্য এই বোম্বাই মরিচ দেশে বিদেশে আচারে তৈরিতেও জনপ্রিয়।
কুলাউড়া উপজেলার নাচনী গ্রামের নাগা মরিচ চাষি আব্দুল হাকিম জানান, সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত নাগা মরিচের দাম দেশের চেয়ে বিদেশে অনেক বেশি। পাইকারী হিসেবে ফড়িয়ারা প্রতি শ’ নাগা মরিচ চাষিদের কাছ থেকে ১শ’ থেকে ১শ’ ২০ টাকা দরে কিনে নিলেও স্থানীয় বাজারেই প্রতি শ’ নাগা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। বিদেশে এর দাম চার-পাঁচ গুন বেশি। পাইকারী ক্রেতারা তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার নাগা মরিচ কিনে নিয়ে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে।
যুক্তরাজ্যের এক প্রবাসী জানান, বৃহত্তর সিলেটের নাগা মরিচ এখন লন্ডনের বিখ্যাত চেইন শপ টেসকোতে পাওয়া যায়। সেখানে নাগা মরিচের জন্য প্রতিদিনই লম্বা লাইন লেগেই আছে। টেকসো কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের মানুষ বর্তমানে প্রচুর ঝাল খাবারের দিকে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। এ কারণেই তারা সিলেট অঞ্চলের প্রসিদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝাল ও সুগন্ধি নাগা মরিচ প্রচুর পরিমাণে মজুদ করছেন।
বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার নাগা মরিচ চাষি আব্দুল আওয়াল জানান, নাগা মরিচ বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল এবং ভারতের সীমান্তবর্তী আসাম রাজ্যের হাইব্রিড প্রজাতি। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল এবং ভারতের মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম অঞ্চলে অধিক পরিমাণে চাষাবাদ হয়।
শ্রীলংকার গ্রামাঞ্চলেও কিছু পরিমাণ নাগা মরিচ চাষাবাদ হয়। শ্রীলংকায় নাগা মরিচের নাম ‘নাই মিরিচ’। আওয়াল জানান, সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত নাগা মরিচ যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে কদর বাড়ায় এ অঞ্চলে বর্তমানে ব্যাপকভাবে নাগা মরিচের চাষ হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নুরজাহান এলাকার লেবু, আনারস বাগানের মালিক আবুল খায়ের জানান, বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির মরিচ উৎপাদন হয় এর মধ্যে নাগা মরিচ খুবই বিখ্যাত। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে এ অঞ্চলে উৎপাদিত নাগা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রবাসীরা দেশে আসলে সিলেটের ঐতিহ্য সাতকরা ও নাগা মরিচ নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রাকৃতিক অবস্থা অনুকুলে থাকলে প্রতি একর জমিতে অন্যান্য ফসলের সাথে উৎপাদিত নাগা মরিচ বিক্রি করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। প্রতি একরে সর্ব সাকুল্যে খরচ হয় ২০ হাজার টাকার মতো। লাভ বেশি হওয়ার কারণে অনেক লেবু-আনারস বাগান মালিক ওই ফসলের সাথে নাগা মরিচ চাষে দিনে দিনে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।
সারাবাংলা/এইচডি/জেডএফ