বিজ্ঞাপন

সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

October 17, 2018 | 5:11 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে সৌদি আরবের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সৌদি চেম্বার ও রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমি পারস্পরিক স্বার্থেই আপনাদেরকে বাংলাদেশে ব্যবসা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা যেন আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় একে অন্যের হাতে হাত রেখে চলতে পারি।’ এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানান তিনি।

বুধবার (১৭ অক্টোবর) সকালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাদশাহ সৌদ রাজপ্রাসাদে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সৌদি বাদশাহ এবং পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রিয়াদ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

সৌদি আরবের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সৌদি উদ্যোক্তাদের দেশের বিভিন্ন উদীয়মান খাত, যেমন— পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন ও তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমি আপনাদেরকে হালকা প্রকৌশল শিল্প; ব্লু ইকোনমি; গবেষণা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন; পানি ও সমুদ্রসম্পদ; অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং সেবামূলত খাত, যেমন— ব্যাংকিং ও অর্থনীতি, লজিষ্টিক ও মানবসম্পদ খাতেও বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সব চেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং দেশে বিনিয়োগে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনার কথাও উল্লেখ করেন। এসব প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে— আইন দ্বারা সুরক্ষিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক প্রদান, বিনা শুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ, রেমিট্যান্স অন রয়্যালিটি, শতভাগ ফরেন ইক্যুয়িটির নিশ্চয়তা এবং লাভ ও পুঁজিসহ বিনা বাধায় চলে যাওয়ার সুবিধা। এসব প্রণোদনার কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা নিয়ে দেশে ফিরতে সক্ষম হবেন বলেও উল্লেক করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

অন্যান্য সুবিধার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিত প্রাণ জনশক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধা। যার মধ্যে রয়েছে— ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ), অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে প্রবেশের সুবিধা।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও পানিপ্রাপ্তির সুবিধাও রয়েছে। রয়েছে ভালো ক্রেডিট রেটিং, স্বল্প ঝুঁকি এবং দ্রুত প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতার সুবিধা। এই সবগুলো একত্রে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মুনাফাপ্রাপ্তির সুবিধাই নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই দেশের ভৌগলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

বিজ্ঞাপন

সরকার দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলো (ইপিজেড) শতভাগ রফতানি-নির্ভর। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে।

এই শিল্পাঞ্চলগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য দেশে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি হাইটেক পার্কও গড়ে তোলা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশে ১০টি প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃজনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং দুই অঙ্কের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ, হাইটেক, পর্যটন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে এ ধরনের আরও প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দু’হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছি, যেগুলো বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক তারা ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান, যা উভয় দেশের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষার একই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ব্যবসায়িক সম্পর্কের শুরু সেই সপ্তম শতকে, যখন আরবের ব্যবসায়ীরা প্রথমবারের মতো আমাদের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আসেন।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা একশ কোটি মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমরা এখনও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগগুলোর পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে পারছি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন সৌদি বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫টি প্রকল্পে প্রায় ৫শ কোটি ডলার। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে— কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্য ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, বস্ত্র এবং তৈরি পোষাক, চামড়া, পেট্রোকেমিক্যাল, প্রকৌশল ও সেবা খাত।

ক্রয় সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্রসীমা ৪১ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ২১ দশমিক ৮ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের অর্থনীতিও বিশ্বের ১০টি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি।’

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং এ বছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি।’

সৌদি আরবের পথে

বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার উচ্চপ্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশপাশি বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং ২০০৮-২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৯ গুণ বেড়ে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই দ্রুত রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাক খাতে দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। আমাদের রফতানির পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ৬৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপানকারী, চতুর্থ বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী এবং তৃতীয় বৃহৎ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। ওষুধ শিল্প দেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য খাত। দেশের ওষুধের ৯৮ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ১২৫টি দেশের বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পেরও ক্রমবিকাশ ঘটছে। আমরা মধ্যম আকারের সমুদ্রগামী বেশকিছু জাহাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করছি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের সক্ষমতার বিকাশ সাধন। দেশব্যাপী ইন্টারনেট-ভিত্তিক ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াট থেকে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে সরকার। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার কয়লাভিত্তিক সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করছে।

দেশের ৯০ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সরকার পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এককদম অগ্রসর হয়েছে। বাসস।

আরও পড়ুন-

সৌদি আরবের পথে প্রধানমন্ত্রী

সৌদি আরব পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন