April 17, 2018 | 8:25 pm
জাহিদ-ই-হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকাঃ দেশের ফুটবলে নজর কেড়েছেন সনি নর্দে, ইব্রাহিম, এমেকা-ওয়েডসন-সামাদ ইউসুফদের মতো ভালো কিছু বিদেশি ফুটবলার। সঙ্গে ভুরি ভুরি বিদেশি ফুটবলার এসে হারিয়ে গেছে ইতিহাসের অতল গহ্বরে। তাদের মান নিয়ে সব সময় প্রশ্ন ছিল। প্রশ্ন আছে বিদেশি ফুটবলারদের যাচাই-বাছাই নিয়েও। সঠিক যাচাই-বাছাই করেই কি বিদেশি কোটায় খেলানো হচ্ছে স্বস্তা ফুটবলারদের?
‘‘দেশের ফুটবলের হাল-বেহাল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন শুরু করেছে সারাবাংলাডটনেট। পেশাদার লিগসহ ফুটবলের হালচাল স্থান পাবে প্রতিবেদনে। ঘরোয়া ফুটবলে দেশি-বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে থাকছে নানান আয়োজন। ফুটবলারদের অপকর্ম-কর ফাঁকি-অপরাধ-অবৈধ আবাস নিয়ে থাকছে এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনে।’’
এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। অন্তত দেশের পেশাদার লিগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগগুলোতে বিদেশি ফুটবলারদের করুণ অবস্থা তাই বলছে। হাতে গোনা দুয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগ ফুটবলাররাই পারফর্মেন্সের দিক থেকে পিছিয়ে। সেখানে দেশিদের অর্জনই বেশি বলতে হবে। তারপরেও দেশিদের বসিয়ে রেখে কেন বারবার মানহীন বিদেশিদের উপর ভরসা রাখছেন ক্লাব কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ক্লাবগুলো সস্তায় আফ্রিকান মানহীন ফুটবলারদের নিয়ে ঘর সাজাচ্ছেন। বিদেশি খেলোয়াড় নেয়ার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের মানদণ্ড নেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। তাই মানহীন ফুটবলারে ভরে গেছে দেশ।
সবশেষ বিপিএলের দৃশ্যই দেখুন। নাইজেরিয়ার রাফায়েল, গাম্বিয়ার সলোমন কিং, নাইজেরিয়ান কিংসলে-সানডে-বুকোলা-চিকোজি ছাড়া বেশিরভাগ বিদেশি ফুটবলাররা তাদের নামের বিচার করতে পারেননি। পুরো মৌসুম জুড়ে গোলে সহায়তা দিতেও প্রথম দশজনে একজন বিদেশি! সে-ও সর্বোচ্চ গোলদাতা সলোমন কিংয়ের নাম। ফরাশগঞ্জের সিনেন্ডু আর মোহামেডানের ইলিয়াসুরা শুধু মন্দের ভালো। পুরো মৌসমে ২২ ম্যাচে গোল সহায়তা করেছেন মাত্র তিনটি!
এমন করুণ পারফর্মেন্সের পরেও ম্যাচের পর ম্যাচ তাদের উপরই ভরসা ক্লাবের। ঠিক কী কারণে তার কোনো ব্যাখ্যা মিলেনি। তবে এদের মধ্যে ‘ফুটবলীয় পেশাদারিত্বের অভাব আছে’ বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ মারুফুল হক। খেলোয়াড় নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্লাব বা ডোনার যারা তারা কেমন দামের খেলোয়াড় নিবেন। ৩০ হাজার ডলারেরও খেলোয়ার পাওয়া যায় আবার পাঁচ শ’ ডলারেরও ফুটবলার পাওয়া যায়।’
‘এখানে একটা কাজ করতে পারে ক্লাবগুলো- বিদেশি খেলোয়াড় নেওয়ার সময় ওরা যাতে ওদের দেশের টপ লিগে খেলে আসার অভিজ্ঞতা থাকে। তাহলে আমাদের ফুটবলের জন্য উপকার হয়।’ যোগ করেন তিনি।
এই মানহীন বিদেশি খেলোয়াড়রাই ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামেগঞ্জে। খ্যাপ খেলে বেড়াচ্ছেন। সঙ্গে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্মও দিচ্ছেন। সঠিক পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই আর পেশাদার হলে এমনটা ঘটতো না বলে জানান মারুফুল, ‘যারা এদেশে আসছে তারা কিন্তু সবাই প্রফেশনাল খেলোয়াড় না। তারা হয়তো কোথাও খেলেছে, বা নিজে নিজে খেলে এসেছে, তাই তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। খেলার সুযোগ নেই।’
সঙ্গে বাফুফেকে একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণের কথা বলেন তিনি। পেশাদার খেলোয়াড় নিতে সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ গেটকিপিং পদ্ধতির পরামর্শ দিলেন কোচ মারুফ, ‘পেশাদার খেলোয়াড় নেওয়ার ক্ষেত্রে ফিফার লাইসেন্সভুক্ত এজেন্ট দ্বারা নিতে হবে। কারণ ফিফা কখনো অপেশাদার কাকে লাইসেন্স দিবে না। ক্লাবগুলো খেলোয়াড় নেওয়ার ক্ষেত্রে ফিফার এজেন্ট দিয়ে খেলোয়াড় নিতে পারে। তাতে এসবের সম্ভাবনা থাকে না।’
অবশ্য, বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু মনে করেন সঠিক পদ্ধতিতেই খেলোয়াড় নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, উইন্ডোতে খেলোয়াড় থাকে। তাদেরকে উইন্ডো থেকে ঠিক পদ্ধতিতে নেওয়া হয়।’
দেশের ফুটবলকে মানসম্মত করতে প্রয়োজন সঠিক গেটকিপিং এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্তত দেশের ফুটবলের জন্য তা করতে পারে ক্লাব কর্তৃপক্ষরা ও বাফুফে। দুই কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে বদলাবে ফুটবলের চেহারাও।
সারাবাংলা/জেএইচ