বিজ্ঞাপন

স্বস্তির জয়ে ওয়ানডেতে রঙিন বাংলাদেশ

July 23, 2018 | 9:16 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

একটুকরো কালো মেঘ যেন ভেসে বেড়াচ্ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কোনো জয় দূরে থাক, প্রতিরোধের দেখাও নেই। দলের ভেতরে-বাইরে নানান সমালোচনা। ওয়ানডের রঙিন পোশাকে অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল বাংলাদেশকে, আর সামনে থেকে সেখানে পথ দেখালেন চার সিনিয়র। আর তাতেই মেঘ কেটে দিয়ে আপাতত রোদ ঝলমল করে উঠল বাংলাদেশের ক্রিকেট-আকাশে। গায়ানায় ৪৮ রানের জয়ে ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা স্বপ্নের মতোই হয়েছ বাংলাদেশের।

সবার আগে সেই কৃতিত্ব অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তিন সিনিয়র সতীর্থকে দেবেন। এনামুল হক বিজয় যখন কোনো রান না করেই ফিরে গেলেন, টসে জিতে মাশরাফির ব্যাট করার সিদ্ধান্তও জাগাচ্ছিল প্রশ্ন। তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান তাই একদম নিরাপদ পথে হাঁটলেন। প্রথম ১০ ওভারে এলো ৩১ রান, দুজনেই একদম খোলসে ঢুকে বসে রইলেন। ৫০ পার হওয়ার জন্য খেলতে হলো ১৪.৫ ওভার। বল ব্যাটে বলতে গেলে আসছিলই না, মনে হচ্ছিল এই উইকেটে ২৫০ রান করাটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ।

একটু একটু করে সাকিব-তামিম শট খেলতে শুরু করলেন। সাকিব সিঙ্গেল নিচ্ছিলেন সুযোগ পেলেই, ৬৭ বলে করলেন ফিফটি। কিন্তু তামিমকে ফিফটি করতে খেলতে হলো ৮৭ বল পর্যন্ত। ভাগ্যটাও দুজনের পক্ষেই ছিল বলতে হবে, অন্তত তিন বার তার আগে ক্যাচের সুযোগ দিয়েও বেঁচে গেছেন দুজনেই। এদিকে দুজন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু রান রেটের গতিটা স্লথ হয়ে গেল তিন অঙ্কের কাছাকাছি আসতে। ৩৫ ওভারের পর থেকে দেখা নেই বাউন্ডারির, সাকিব-তামিম একটু স্বার্থপরের মতোই খেলছেন কি না এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করল।

বিজ্ঞাপন

শেষ পর্যন্ত সাকিব সেই চাপ থেকে বেরিয়ে খেলতে গিয়েই ৯৭ রানে বিশুর বলে ক্যাচ দিলেন। তামিম অবশ্য ঝুঁকি নিলেন না, পেলেন ওয়ানডেতে নিজের দশম সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যা প্রথম। সাব্বির রহমান আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে স্টাম্পড হয়ে গেলেন। তবে সেটা নিয়ে খুব একটা আফসোস করবেন না মাশরাফি, এরপর মুশফিকুর রহিম নেমেই যে রঙ বদলে দিয়েছেন খেলার।

৪৭তম ওভার পর্যন্তও বাংলাদেশ ২৫০র আশেপাশে থাকবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ ২ ওভারে মুশফিক হোল্ডার আর রাসেলকে কচুকাটা করা শুরু করলেন। অন্য পাশ থেকে তামিমও যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গে। শেষ ২ ওভারে এলো ৪৩ রান। মুশফিক ১১ বলে ৩০ রান করে আউট হয়ে গেলেও তামিম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৩০ রানে। বাংলাদেশ করল ২৭৯, কিন্তু সেটা যথেষ্ট কি না সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

মাশরাফি প্রমাণ করলেন, তা যথেষ্টই। এই সিরিজ খেলতে যাওয়া নিয়েই সংশয় ছিল, অসুস্থ স্ত্রীকে রেখে উড়াল দিয়েছেন ক্যারিবিয়ানে। কিন্তু আরও একবার দেখালেন, কেন বাংলাদেশ দলের তাঁকে দরকার। নতুন বলে আঁটোসাঁটো বোলিং করে গেছেন, শেষ পর্যন্ত বিপজ্জনক এভিন লুইসকে আউট করে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন প্রথম ব্রেক থ্রু।

বিজ্ঞাপন

তবে গেইল ছিলেন। রান নিতে একদমই পারছিলেন না, শটও খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না সেভাবে। কিন্তু গেইল যতক্ষণ থাকেন, ততক্ষণই তো প্রতিপক্ষের ভয়। শেষ পর্যন্ত রান করতে না পারার চাপ থেকেই হয়তো রান আউট হয়ে গেলেন ভুল বোঝাবুঝিতে। ৬০ বলে গেইলের ৪০ রানের ইনিংসটা যে বড় হয়নি, সেজন্য বাংলাদেশ স্বস্তি পেতেই পারে।

এদিকে মাশরাফি দারুণ সব বোলিং চেঞ্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর চাপটা ধরে রেখেছিলেন। ৩৫ ওভার পর্যন্তও ম্যাচে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তখন ওভারপ্রতি নয় রান করতে হলেও হাতে ছিল ছয় উইকেট। ছিলেন রাসেল, পাওয়েলরা। কিন্তু এবার এক ওভারে ৫২ রান করা হেটমেয়ার ও পাওয়েলকে ফিরিয়ে দিয়ে জোড়া আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। মাশরাফির আসল জাদু শুরু এর পরেই।

অধিনায়ক হোল্ডার ছয় মেরে স্বাগতিকদের আশা দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু আরেকটা মারতে গিয়ে মাশরাফির কাটার বুঝতে না পেরে আউট। রাসেলও সেই কাটার বুঝতে না পেরেই কাচ দিলেন লং অনে। নার্সের উইকেটও সেই পথেই। মন্থর পিচের সুবিধা নিলেন মাশরাফি, ৩৭ রানে নিলেন ৪ উইকেট। শেষ উইকেট জুটিতে বিশু ও পাওয়েল অবশ্য চেষ্টা করে গিয়েছিলেন। ফিফটি যোগ করেও দুজনের জুটি শুধু হারের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে। ৪৮ রানের জয়ে বাংলাদেশ জানান দিয়েছে, ওয়ানডেতে কেন তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে।

সারাবাংলা/এএম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন